গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দমগ্র দেশ জুড়ে প্রধান শিরোনামে পরিনত হয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে শারীরিক ভাবে নানা জটিলতায় ভুগছেন। তবে সম্প্রতি তার শারীরিক অবস্থার ব্যপক অবনতি হয়েছে। এবং বর্তমান সময়ে তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি দল। তবে এই বিষয়ে সরকার কোন সিদ্ধান্ত জানায়নি। এদিকে বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে বেশ কিছু কথা জানালেন বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বাংলাদেশেই সম্ভব বলে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন (বিএমএ) যে বক্তব্য দিয়েছে তা খুবই দুঃখজনক মন্তব্য করে ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ বলেছেন, লিভার সিরোসিস, বাংলাদেশে লিভার ট্রান্সপ্লান্টও হয় না। দুইজনকে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়েছিল তার মধ্যে একজন ই/ন্তে/কা/ল করেছেন আরেকজনের অবস্থা খুবই খারাপ। আর এটা শুধু বাংলাদেশের চিকিৎসকরা করেনি। বিদেশ থেকে টিম এসে এ কাজ করা হয়েছিল। আর লিভার সিরোসিসের চিকিৎসা বাংলাদেশে হয় এটা ভুল তথ্য।
বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে ড্যাব আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। ডা. হারুন আল রশিদ বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনার যে বিষয়টি বিএমএ বলেছে, সেটি শুধুমাত্র কালক্ষেপণ ছাড়া আর কিছু নয়।
তিনি বলেন, আজকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এবং বিপক্ষে নামক একটি বিভাজন তৈরি করা হয়েছে। খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, স্বাধীনতার ঘোষকের স্ত্রী, সংসদীয় ব্যবস্থার প্রবর্তক এমন একজন মানুষ, সেই মানুষটি বর্তমানে অসুস্থ। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় দেশের স্বনামধন্য চিকিৎসকরা যুক্ত আছেন। তারা বলেছেন- খালেদা জিয়ার চিকিৎসা এ দেশে সম্ভব না এবং পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও সম্ভব না। এর বিপক্ষে সরকারি অবস্থান, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের অবস্থানও একই। যা খুবই দুঃখজনক। আমরা চিকিৎসক সমাজ হিসেবে একটা হিপোক্রেটিক শপথ নেই যে, সেবার ক্ষেত্রে কখনো আমরা মিথ্যা বলবো না, অন্যায় করবো না, রোগীর স্বার্থে সবসময় কাজ করবো। বিএমএ নেতারা সেই শপথ ভঙ্গ করেছেন। অসুস্থ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
ড্যাব সভাপতি বলেন, সঠিক সময়ে চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাব থেকে তথ্য না দিলে মানুষের মাঝে ভুল বুঝাবুঝি ও গুজবের সৃষ্টি হয়। আপনারা গুজবের সুযোগ করে দিচ্ছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সঠিক খবর কিন্তু খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা দিয়েছেন, যা বিশ্বাসযোগ্য। ড্যাব যদি সব তথ্য দিতে থাকে তাহলে বিভ্রান্তি তৈরি হবে। তাই আমি মনে করি তারা সঠিক সময়ে মানুষের কাছে তথ্য প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, দেশের বাইরে থেকে চিকিৎসক আনার কথা বলা হয়েছে এবং চিকিৎসা ভারতে করা যায়- এমনটা বলা হচ্ছে। এই বিষয়ে আপনারা কী ভাবছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার জন্য তো বাইরে থেকে চিকিৎসক আনা হয়েছিল। তাহলে তাকে কেন বাইরে নেয়া হলো? কারণ চিকিৎসার জন্য যা প্রয়োজন তার সব বাংলাদেশে নেই। বাংলাদেশে হার্টের অপারেশন হয়, এনজিও প্ল্যাস্টি হয়, এনজিওগ্রাম হয়। বাংলাদেশে হার্টের কাজ হয় না এমন কোনো কিছু নেই। তারপরও ওনাকে বিদেশে নেয়া হলো কেন? বিশেষজ্ঞরা বলেছেন খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা সেটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির সুনির্দিষ্ট কয়েকটি হাসপাতালে আছে। এটা সম্পূর্ণ একটা টিম ওয়ার্ক। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের মহাসচিব প্রফেসর ডা. মো. আব্দুস সালাম বলেন, চিকিৎসা ব্যবস্থায় বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমানভাবে এগিয়ে গেলেও এখনো বেশকিছু সীমাবদ্ধতা বিদ্যমান। যার ফলশ্রুতিতে এদেশের চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আশানুরূপ আরোগ্য লাভের পরিবর্তে ধীরে ধীরে অন্তিম পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, এমতাবস্থায় চিকিৎসক হিসেবে আমাদের আকুল আহ্বান, জরুরিভিত্তিতে তার মুক্তির ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক বিদেশে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হোক। আমরা আশা করি, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেবে।
এদিকে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার অনুমতি না পেয়ে সমগ্র দেশ জুড়ে সপ্তাহ ব্যপী নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি দলের নেতাকর্মীরা। এবং বেগম জিয়ার চিকিৎসার জন্য দেশের সুশীল সমাজের অনেকেই সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে। এছাড়াও কয়েক দিন আগে বেগম জিয়ার উদ্দেশ্যে এক দল আইনজীবি আইনমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপিও জমা দিয়েছে।