রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন সময় দেখা যায় চুরি ছনতাই এর ঘটনা ঘটে যায়। সড়কেও এই ধরনের ঘটনা ঘটে বিশেষ করে সিএনজিতে যাত্রীদের নানা সমস্যার সম্মুক্ষিন হতে হয়। মুলত এই সকল সিএনজিতে সিটকিনি থাকে চালকের নিয়ন্ত্রনে যার কারনে খুব সহজে নানা নেতিবাচক কাজ করতে পারে দুস্কৃতিকারীরা।
রাজধানীতে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশার গেট থাকে চারটি। সামনে চালকের ডান-বামে দুটি, আর পেছনে যাত্রীদের আসনের দুই পাশে বাকি দুটি। তবে এসব সিএনজির প্রায় সবগুলোরই গেটের সিটকিনি থাকে চালকের নিয়ন্ত্রণে। যাত্রীরা ইচ্ছা করলেও নিজের হাতে এসব সিটকিনি বন্ধ বা খুলতে পারেন না। যাত্রী ওঠা-নামার ক্ষেত্রে চালক নিজেই যাত্রীদের গেট বন্ধ ও খুলে দেন একটি মাত্র সিটকিনি দিয়ে। এ কারণে অনেক সময় বিপদে পড়তে হয় যাত্রীদের। তবে এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে ব্যবস্থা নিচ্ছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ।
জানা গেছে, সিনজি চালকের নিয়ন্ত্রণে সিটকিনি থাকার কারণে অনেক সময় যাত্রীকে জিম্মি করে চুরি, ছিনতাই, অপহরণ, হয়রানি, শ্লীলতাহানীসহ বেশি ভাড়া না দিলে গেট না খোলার মতো ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। অনেক ক্ষেত্রে যাত্রীরা নিজেদের নির্ধারিত জায়গায় নামতে চাইলেও চালকরা তাদের ইচ্ছেমতো জায়গায় নামিয়ে দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ রাজধানীতে চলাচলরত সিএনজিতে থাকা সিটকিনি যাত্রীদের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সতর্কতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
ট্রাফিক বিভাগ বলছে, বেশকিছু দিন ধরেই একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতিটি সিএনজিচালক ও মালিকদের আলাদা আলাদা দরজার সিটকানি লাগানোর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। চলতি সপ্তাহ থেকে ডিএমপির ৮টি ট্রাফিক বিভাগে সতর্কতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আগামী সপ্তাহ থেকে আইনগত ব্যবস্থা অর্থাৎ জরিমানা করা হবে।
ট্রাফিক রমনা বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) রেফাতুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বেশিরভাগ সিএনজিতে চালক ও যাত্রীর পার্শ্ববর্তী দরজার একটিমাত্র ছিটকিনি থাকে। যার নিয়ন্ত্রণ থাকে চালকের হাতে। এতে প্রায়ই যাত্রীহয়রানির সংবাদ পাওয়া যায়। বিশেষ করে গভীর রাতে কিছু চালক যাত্রীকে জিম্মি করে সবকিছু হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে যাত্রীরও দরজা খোলার ব্যবস্থা রাখা নিশ্চিতে চালকদের প্রাথমিকভাবে সতর্ক করার জন্য আমাদের জোনে বিশেষ অভিযান চালানো হয়। আমরা সিএনজিচালক ও মালিকদের অনুরোধ জানিয়ে বলছি, তারা যেন এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) এস এম শামীম জাগো নিউজকে বলেন, চালকের নিয়ন্ত্রণে সিটকিনি থাকার ফলে যাত্রীদের জিম্মি করে চুরি, ছিনতাই, অপহরণ, হয়রানি, শ্লীলতাহানীসহ বেশি ভাড়া না দিলে গেট না খোলার মতো অভিযোগ রয়েছে। যাত্রীদের কথা চিন্তা করে এ থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রত্যেক প্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই), সার্জেন্টসহ আমরাও মাঠে থেকে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, ট্রাফিক বিভাগ শুরুতেই মামলায় না গিয়ে সিএনজিচালক ও গ্যারেজে সিএনজি মালিকদের নম্বর নিয়ে তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলছি। সামাজিক যোগাযোগসহ রাস্তায় রাস্তায় সিএনজি থামিয়েও সচেতন করা হচ্ছে। তাদের বলা হচ্ছে, যাত্রী যেখানে বসবে দরজা খোলার কন্ট্রোল সংশ্লিষ্ট যাত্রীর কাছে থাকবে। বিষয়টি যাত্রীসহ চালকেরাও পজিটিভলি নিচ্ছেন। এক সপ্তাহ পর যদি আমরা দেখি যাত্রীদের কন্ট্রোলে দরজা খোলার সিটকিনি নেই তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মিটারের বিষয়েও নিকটবর্তী সার্জেন্টের কাছে গাড়ি আটকিয়ে মৌখিক অভিযোগ করতে যাত্রীদের অনুরোধ করা হচ্ছে বলে জানান এডিসি এস এম শামীম।
ট্রাফিক গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) রবিউল ইসলাম বলেন, ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) পুলিশের ৮টি ট্রাফিক বিভাগে একযোগে সিএনজিচালক ও মালিকদের সচেতন করা হচ্ছে। তারা যেন তাদের প্রতিটি সিএনজিতে যাত্রীদের আসনে সিটকিনি রাখার ব্যবস্থা করেন। প্রাথমিকভাবে সিটকিনি লাগানোর জন্য কিছুটা সময় দেওয়া হচ্ছে। পরে সিটকিনি না লাগালে তাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে যাবে ট্রাফিক বিভাগ।
প্রসঙ্গত, ঢাকায় সিএনজিতে বিভিন্ন সময় ছিনতাই এর ঘটনা ঘটে। রাত্রিকালে যাত্রীদের এই সকল সিএনজিতে জিম্মি করে তাদের থেকে মুল্যবান সামগ্রী কিংবা নগদ অর্থ লুটে নেওয়াই এদের কাজ। প্রতিনিয়ত নগরীর মানুষ এধরনের ঘটনার শিকার হচ্ছে এবং এই অপরাধের প্রবনতা বাড়ছে