২০০৯ সালের দিককার কথা। একদিন বাড্ডা থানার ওসির কার্যালয়ের কক্ষটিতে প্রবেশ করেন একজন মধ্যবয়সী মহিলা। ঐ ভদ্র মহিলা পরেছিলেন পশ্চিমা পোশাক এবং সাথে ছিল একটি বিদেশি নাদুস নুদুস কুকুর। তিনি অফিস কক্ষে ঢুকে কুকুরটিকে একটি চেয়ারে বসালেন এবং তিনিও নিজে একটি চেয়ারে বসলেন। তিনি থানার উপ-পরিদর্শক মোল্লা খালিদকে বেশ গুছিয়ে তার সকল ধরনের সমস্যার কথা বলতে শুরু করেন। মোল্লা খালিদ বর্তমান সময়ের ইন্সপেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এসআই মোল্লা খালিদ যে কাজের জন্য অফিস কক্ষে ঢুকেছিল তা বলার আগেই কুকুরটাকে চেয়ারে বসে থাকতে দেখে বলে বসল, ‘স্যার কুকুরের লালা কিন্তু নাপাক’। অমন ঠোঁটকাটা কথা শুনে পাশে বসা কুকুরটির মালিক ভদ্র মহিলার চোখ ততক্ষণে লাল হয়ে গেল। অবস্থা বদলাতে খালিদকে বললাম, খালিদ একটু পরে আসেন। তারপর আমি পশুপ্রেমী মহিলার কথা শুনলাম এবং তার সমস্যা সমাধানে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।
মহিলা চলে গেলে আমি এসআই খালিদকে ফোন করলাম। আমি চরম ঘাউড়ার এসআই মোল্লা খালিদকে বুঝিয়ে বললাম, ‘সব সময় পুরো সত্য বলতে হয় না’। কিন্তু কে শোনে কার কথা! এসআই মোল্লা খালিদ, যিনি তার কাজে অত্যন্ত আন্তরিক, চৌকস এবং অত্যন্ত দক্ষ, তিনি আগে ও কথা বলার জন্য অনেকবার বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন। কিন্তু দিন শেষে তার ডেডিকেশন, সততা আর চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করার মানসিকতাসহ সামগ্রিক কাজের তারিফ না করে পারিনি।
২০০৬ সালে এসআই মোল্লা খালিদও আমার সঙ্গে ঝিনাইদহ জেলায় কাজ করেন। তৎকালীন চর”মপ/ন্থী অধ্যুষিত ঝিনাইদহ জেলায় নিষিদ্ধ আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টির তৎপরতা দমনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক কিছু করেছেন খালিদ। মোল্লা খালিদ চর”মপ/’ন্থীদের ধরতে নীরবে কাজ করেছেন, কখনো রিকশাচালক হিসেবে, কখনো পথচারী হিসেবে, কখনো খাবার ছাড়া দিনের পর দিন। আমি খালিদের সাথে বেশ কিছু স্মরণীয় এবং প্রাণ”ঘা’/তী অভিযানে অংশ নিয়েছি। সেসব অপারেশনে খালিদের দক্ষতা, দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ও সাহসিকতার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। খালিদের শত গুণের মধ্যেও তার অধ্যবসায় কম ছিল না। সব সময় বুঝিয়ে সুজিয়ে রাখতে হতো খালিদকে। নানা ঘা”ত-প্রতিঘাত সহ্য করে মোল্লা খালিদ অনেকটা পরিণত অফিসার হয়েছেন।
দুদিন আগে আমার জেদি সাব-ইন্সপেক্টর (বর্তমানে ইন্সপেক্টর) মোল্লা খালিদ মেহেরপুর জেলা থেকে মিষ্টি আম পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি আম পাঠিয়েছেন বলে নয়, আমি সত্যিই অত্যন্ত সাহসী এবং বিচক্ষণ এবং চৌকস ঘাউড়া মোল্লা খালিদকে ভালোবাসি। তিনি শুধু একজন বিচক্ষণ ব্যক্তিই ছিলেন না, তিনি পরোপকারী ও ছিলেন। অন্যরা যেটা করতেন না সেটা তিনি অনায়াসে করতেন, যেটায় মানুষের উপকারই হতো। এমন ধরনের একজন ব্যক্তি পুলিশ বিভাগে থাকা সত্যি একটি বড় ধরনের পাওয়া পুলিশ বিভাগের।
(ফেসবুক হতে নেওয়া)