দেশের বেশিরভাগ রেজিস্ট্রি অফিসে চলে নানা ধরনের দুর্নীতি। অনেক সময় খোদ রেজিস্টারকেও দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকতে দেখা যায়। তবে দুর্নীতি না ঘটলেও এক সাব-রেজিস্ট্রারের উপর দূ”র্বৃত্তরা হা”মলা চালিয়েছে এমন অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার অফিসে। গত মঙ্গলবার অর্থাৎ ১০ জানুয়ারি মঙ্গলবার বিকেলের দিকে শিবগঞ্জ উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ঘটনাটি ঘটে। ঐ হাম”লার শিকার সাব-রেজিস্ট্রারের নাম ইউসুফ আলী।
ইউসুফ আলীর অভিযোগ- শিবগঞ্জ উপজেলার ইউএনও আবুল হায়াত হামলার আধা ঘণ্টা আগে শাসিয়ে এবং মারপিটের হুমকি দেন। এরপর তার ওপর অত”র্কিত হাম”/লা চালানো হয়। তার ওপর হা”মলার সঙ্গে ইউএনও আবুল হায়াত নিজেই জড়িত।
সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে তাকে হু”মকি ও গালিগালাজ করার একটি অডিও পাওয়া গেছে। ২২ মিনিটের ওই অডিওতে শোনা যায়, সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীকে ইউএনও নানাভাবে শাসাচ্ছেন ইউএনও। এ সময় ইউএনওকে একাধিকবার সাব-রেজিস্ট্রারকে হুমকি দেওয়ার কথা শোনা যায়।
বিষয়টি অস্বীকার করে ইউএনও আবুল হায়াত বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি স্পষ্ট করে বলেন যে, অডিওটি তার কণ্ঠ হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে, সেটা আসলে তার নয়।
তিনি জানান, শিবগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সাবেক এক কর্মচারী অবসরে যাওয়ার পর প্রয়াত হয়েছেন। এরপর তার স্ত্রী-প্রতিবন্ধী মেয়ে প্রায় ১৫ মাস পেনশনের টাকার সুপারিশের জন্য শিবগঞ্জের সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীর কাছে গেলেও কোনো সুরাহা হয়নি। এতে করে ঐ পরিবারের দুর্দশা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি আমাকে মানসিকভাবে আঘাত করলে ইউসুফ আলীর কাছে সুপারিশসহ পাঠাই। ইউসুফ সেই সময় রেগে যান। তারপর তাদের আবারও ঘুরাতে থাকে। অবশেষে যখন আমি ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে তাকে অনুরোধ করি, তখন তিনি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেন, এরপর আমি সেখান থেকে চলে যাই। এরপর কারা হাম”লা করেছে তা জানা যায়নি। তবে কারো ওপর এ ধরনের জঘন্য হাম”লা কাম্য নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার আপসানা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ইউএনও যে কর্মচারীর কথা উল্লেখ করেছেন তিনি ২০১৪ সালে অবসরে যান। তারপর ২০১৮ সালে তিনি প্রয়াত হন। এখন তার দ্বিতীয় স্ত্রীর বোন এসে পেনশন দাবি করছেন। কিন্তু ওই স্ত্রীর কোনো বিয়ের সনদ দেখাতে পারেননি তারা। এ নিয়ে মূলত ফাইলটি ছাড়তে পারছিলেন না সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী। আর সেই ফাইল খালাস করতে মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে ইউএনও ইউসুফ আলীর কার্যালয়ে গিয়ে তাকে নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে ইউএনও আবুল হায়াত জড়িত। তার প্ররোচনায় সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীর ওপর হাম”/লা হয়। অফিস চলাকালীন অফিসে কর্মরত অবস্থায় একজন সরকারি কর্মচারীর ওপর এ ধরনের হা”/মলা নিন্দনীয়। এ বিষয়ে আমরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। বিচারের দাবিতে আমরা ধর্মঘট করছি।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার বিকেল থেকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেছেন সাব-রেজিস্ট্রাররা। বাংলাদেশ নিবন্ধন সেবা সমিতির সভাপতি অহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ ঘটনায় সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মোহরার মামুন অর রশিদ বাদী হয়ে অজ্ঞাত ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে মা”মলা করেন।
চৌধুরী জুবায়ের আহমেদ (ওসি) যিনি শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তিনি এ ঘটনার বিষয়ে বলেন, সাব-রেজিস্টারকে মা”রধরের ঘটনার জেরে থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। ঘটনাটির তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। তদন্ত শেষ হওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদেরকে আটক করার বিষয়ে তিনি আগে কিছু বলতে চাননি।