Tuesday , December 24 2024
Breaking News
Home / Countrywide / “সারা জীবন এই যন্ত্রণার আ”গুন জ্বলবে, কোনোদিন নিভবে না”

“সারা জীবন এই যন্ত্রণার আ”গুন জ্বলবে, কোনোদিন নিভবে না”

“আমাদের সাড়ে তিন বছর বয়সী এক রাজকন্যা ছিল। সারাদিন ঘরটাকে আলো দিয়ে যেত। সবাইকে হাসি-মজায় মাতাল করে রাখতেন। পরিবারে সুখের শেষ ছিল না। সেই আলো হঠাৎ নিভে গেল ভয়ঙ্কর বেইলি রোডে আগুন।

শাজাহান সাজু (৪৩) বলছিলেন প্রয়াত ভাতিজি ফাইরুজ কাশেম জামিরাকে নিয়ে। তার ভাই শাহজালাল উদ্দিন (৩৭), শুল্ক গোয়েন্দা তদন্ত বিভাগের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা, স্ত্রী মেহরুন নেসা (২৩) ও তিন বছরের মেয়ে ফাইরুজ কাশেম জামিরা গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডে মারা যান।

রোববার (১০ মার্চ) সকালে শাহজালালের বড় ভাই শাজাহান সাজু, বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম, মা ও অন্যান্য ভাই-বোনেরা দেখতে আসেন ভয়াবহ আগুনের ক্ষতচিহ্ন নিয়ে দাঁড়ানো গ্রিন কোজি কটেজ।

সেখানে তারা কথা বলেন এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। শাজাহান সাজু, যিনি বর্তমানে কক্সবাজারে একটি ঠিকাদারি ব্যবসা পরিচালনা করেন, তিনি তার ছোট ভাইয়ের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ফুল নিয়ে আসেন। পাশে থাকা বাবা-মা-ভাই-বোন কাঁদছিলেন কাঁদছিল।

সাজু জানান, তাদের বাড়ি কক্সবাজারের উখিয়ায়। ছোট ভাই শাহজালাল রাজধানীর কেরানীগঞ্জে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

বড় ভাই শাজাহান বলেন, বেইলি রোডে ফায়ারম্যানরা আগুন নেভাতে পারলেও আমাদের হৃদয়ের আগুন নেভাতে পারেনি। আমরা এখন কষ্টের দিন পার করছি। সারা জীবন এই যন্ত্রণার আগুন জ্বলবে। কোনোদিন নিভবে না।

ভাইয়ের মৃত্যুতে কান্নায় তার কণ্ঠ ভারি। পোড়া দালানের দিকে শূন্য নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন। চোখ ভরে গিয়েছে পানিতে। একটি পরিবার অসহনীয় দুঃখের দিন পার করছে।

শাহজালার সঙ্গে শেষ কথোপকথন কী জানতে চাইলে তার বড় ভাই কান্না থামিয়ে বলেন, মৃত্যুর আগে তার সঙ্গে শেষ কথোপকথন হোয়াটসঅ্যাপে পারিবারিক গ্রুপে হয়েছিল। আমাদের সকল বাবা-মা ভাই-বোন সেই গ্রুপে আছেন। আমরা সেখানে একসঙ্গে কথা বলেছি।’

তিনি একবারে সবার সাথে কথা বলে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। এরপর আর কোনো কথা হয়নি।

পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে শাহজালাল ছিলেন দ্বিতীয়। পিঠাপিঠি ভাই হওয়ায় দুই ভাই ছোটবেলায় একসঙ্গে লেখাপড়া করেছেন। তারা মাঠে গিয়ে একসঙ্গে খেলাধুলা করত।

নিজের শৈশবের কথা মনে করিয়ে দিয়ে এই শোকার্ত ভাই বলেন, “ছোটবেলায় না খেয়ে রাতে ঘুমিয়ে যেতেন। মা যখন তাকে ভাত খাওয়াতেন, ঘুমের মধ্যেই মুখ নাড়াচাড়া করত। ঘুমের ভিতরেই ভাত খেতেন।

শাহজালাল ছিলেন অত্যন্ত ভদ্র ও শান্ত স্বভাবের। কেউ তাকে বকাঝকা করলে কখনো রাগ করতেন না। লেখাপড়া থেকে শুরু করে সব কিছুতেই তাকে দেখাশোনা করতাম। আমার ভাই হয়েও তিনি ছিলেন সন্তানের মতো।

শাহজালালের বাবা বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম বলেন, কোথাও শান্তি পাচ্ছি না। আমি আমার ছেলেকে বলেছিলাম আমাকে বেইলি রোডে নিয়ে যেতে। আমি এখানে এসে প্রবেশ করতে চেয়েছিলাম। সে আমাকে ঢুকতে দেয়নি।’

এখন অনেক নিরাপত্তা আছে, কিন্তু নিরাপত্তা যদি আগে নিশ্চিত করা যেত, তাহলে এত দুর্ঘটনা ঘটত না—এত মানুষ মারা যেত না।

শাজাহান সাজু বলেন, ‘আমাদের সুন্দর সংসার ছিল। সেই পৃথিবীতে প্রতিদিনই শুরু হয় কান্না দিয়ে, রাতেও কাঁদতে কাঁদতে সবাই ঘুমিয়ে যায়। শোকাহত পরিবারের সকলের অবস্থা খুবই খারাপ।

আজ আমার বাবা-মা, ভাই-বোন এসেছেন। এখনো মনে হয় আমাদের ভাই বেঁচে আছে। কিন্তু আমি নিজ হাতে তাকে কবর দিয়েছি। মনে হচ্ছে আমার ভাই ফিরে আসবে। আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না—আমার ভাই চলে গেছে।

তিনজন বললেন, আমার ভাই কী করে মারা গেল, কী ভয়ানক আ/গুন! আমরা জায়গাটা একটু দেখে আসলাম। আর বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেন। কিন্তু শেষ বয়সে এসে এত বড় দুঃখ পাবে; সেটা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি।

লাশ নিতে আসতে দেরি কেন?

শাজাহান বলেন, বেইলি রোডের আগুনে তার ভাইও মারা গেছে এটা তাদের ধারণার বাইরে। কারণ, এদিন তাদের খাগড়াছড়ি যাওয়ার কথা ছিল।

ভাইয়ের লাশ নিতে দেরি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডের দিন আমার ভাইয়ের এখানে আসার কথা ছিল না। ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে আগুন লাগে। একদিন পর আমরা খবর পাই। তখন আমরা সবাই ছুটে যাই।’

কক্সবাজার থেকে গাড়িতে করে এখানে পৌঁছাতে ১২ ঘণ্টা সময় লেগেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সকালে এখানে পৌঁছাই। ২৯ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার শাহজালালের স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে খাগড়াছড়ি যাওয়ার কথা ছিল। গ্রিনলাইন পরিবহনের টিকিটও পাওয়া গেছে। রাত সাড়ে ১০টায় তাদের বাসে ওঠার কথা।

ওরা ভাবল, বাসে ওঠার আগে কোথাও খেয়ে নিই। বলেই তারা বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে ঢুকে পড়ে। তাদের খাওয়া-দাওয়া করে বাসে ওঠার কথা ছিল। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে আসে তাদের প্রাণহীন লাশ।

তিনি বলেন, ‘আমরা ধরে নিলাম তারা খাগড়াছড়িতে আছে। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতে পারিনি। খাগড়াছড়ি প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ায় নেটওয়ার্কের সমস্যা আছে বলে মনে করলাম।

About Babu

Check Also

ভারতের গণমাধ্যমে প্রতিবেদন ফাঁস, বন্দিদের ভারতে পাঠাতেন শেখ হাসিনা

ভারতের গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *