বাংলাদেশের সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যায় ব্যাপক খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে ওই খানের মানুষ এক ভয়াবহ সময় পার করছে। জলাবদ্ধতায় কেউ চলাচল করতে পারছে না। এমন পরিস্থিতি মানুষ নিজ বসতবাড়িতেও অবস্থান করতে পারছে না। ওই খানের মানুষের মধ্যে চরম এক সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দুই জেলার প্রায় ৪ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় খাদ্য ও পানীয় জলের জন্য তীব্র হাহাকার ও হাহাকার চলছে। স্রোত ভেঙ্গে মানুষ আশ্রয় খুঁজছে। তবে দুর্গম এলাকায় উদ্ধার অভিযান চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে নারী, শিশু ও বয়স্করা।
এরই মধ্যে শনিবার (১৮ জুন) দিনভর টানা ভারি বৃষ্টি এবং আগামী তিন দিনে অতিভারি বৃষ্টির পূর্বাভাসে জেলা দুটির বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি এবং ভয়ংকর হয়ে ওঠার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
এমতাবস্থায় আটকে পড়া অবস্থা থেকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য নৌকাই সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। কিন্তু প্রয়োজনীয় সংখ্যক নৌযান না থাকায় এবং আকাশছোঁয়া ভাড়ার কারণে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। অভিযোগ, নৌকার মালিক ও নাবিকরা নৌকার ভাড়া শতগুণ বাড়িয়েছে!
মারুফ আহমেদ নামে এক ব্যক্তি তার গর্ভবতী স্ত্রীকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে গ্রাম থেকে শহরে যেতে চান। কিন্তু ৪০ হাজার টাকা দিয়েও নৌকা ভাড়া দিতে পারেননি।
জানা গেছে, গোয়াইনঘাট উপজেলার সালুটিকর থেকে কোম্পানীগঞ্জের তেলিখাল পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। সাধারনত এই দূরত্বে নৌকা ভাড়া ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। কিন্তু এখন নৌকার মাঝিরা এই দূরত্বের জন্য ৫০,০০ টাকা ভাড়া দাবি করছেন এবং তারা ভাড়া নিয়ে আলোচনার কোনো সুযোগ দিচ্ছেন না। সালুটিকর ঘাট থেকে দূরত্ব, যা আগে জনপ্রতি ২০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে ছিল, এখন ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে৷
অন্যদিকে, সিলেটের যারা ত্রাণ নিয়ে দুর্গতদের কাছে যেতে চেয়েছিলেন, তারা শুধু নৌকা ভাড়ার কারণে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছেন। শুক্রবার সিলেট নগরীর কয়েকজন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ত্রাণ নিয়ে সালুটিকর ঘাটে যান। কিন্তু তাদের কাছে ৪০ হাজার টাকায় নৌকা ভাড়া চাওয়া হয়!
সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মজিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও নৌকা পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু ভাড়ার কথা জানতাম না। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, উদ্ধার কাজে নৌকার সংকট নিরসনে কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাটের ইউএনওদের নৌকা কিনতে বলা হয়েছে। এ জন্য তাদের বাজেটও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জের অবস্থা ভয়াবহ। ওই খানের মানুষ এখন খুবই খারাপ অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এর থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে সেখানে উদ্ধার কার্য পরিচালনা করা যাচ্ছে নৌকার অভাবে।