হাইকোর্ট বলেছেন, আফতাব আহমেদ দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার একজন প্রবীণ ফটোসাংবাদিক ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ও পরে অসংখ্য দুর্লভ ছবি তোলার জন্য তিনি “একুশ পদক” পান। যা তাকে বিরাট মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। সামান্য টাকার লোভে ৭৯ বছর বয়সী আফতাব উদ্দিন আহমেদকে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করেছে আসামিরা।
ডেথ রেফারেন্স গ্রহণ ও আসামিদের আপিল খারিজ করে হাইকোর্ট তার পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ পর্যবেক্ষণ দেন।
জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি বশিরুল্লাহ হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। ভাষার মাসে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলায় রায় লিখেছেন বিচারপতি।
রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ডটি আসামি মো. হুমায়ূন কবির মোল্লা, মো. রাজু মুন্সি, মো. হাবিব হাওলাদার, মো. বিল্লাল হোসেন কিসলু ও মো. রাসেল কর্তৃক সংঘটিত হয়েছে। সন্দেহাতীতভাবে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। ফলে এসব অপরাধীরা কোনোভাবেই কোনো ধরনের করুণা ও অনুগ্রহ পেতে পারে না। এই অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড দেওয়া অপরিহার্য। বিচারে অমানবিক, বর্বর নৃশংস হত্যাকাণ্ড। মহিউদ্দিন ও অন্যান্য বনাম রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত অনুসরণ করাই সঙ্গত।
হাইকোর্ট রায়ে বলেন, সাক্ষীদের সাক্ষ্য, ঘটনার পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আসামিদের দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, জব্দ তালিকা, সারোগেট রিপোর্ট, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করা হয়েছে। হুমায়ুন কবির মোল্লা, মোঃ বিল্লাল হোসেন কিসলু, হাবিব হাওলাদার, মো. রাজু মুন্সি (পলাতক) এবং মো. রাসেলদের (পলাতক) বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩৯৬ ধারার অভিযোগের অপরাধ সুনির্দিস্ট এবং সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় দোষী সাব্যস্ত করে ট্রাইব্যুনাল তাদেরকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে।
সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের গলায় ফাঁসির রশি ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য ট্রাইব্যুনাল নির্দেশ প্রদান করেন। এছাড়াও ট্রাইব্যুনাল আসামি মোঃ সবুজ খানকে দণ্ডবিধির ৩৯৬ ধারায় ডাকাতির সময় সহযোগীর ভূমিকা পালনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে সাত বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও অনাদায়ে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। দশ হাজার টাকা।
আসামিদের ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ কর্তৃক সঠিকভাবেই দণ্ডবিধির ৩৯৬ ধারার অভিযোগে অপরাধ সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদেরকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে সঠিকভাবে রায় ও আদেশ প্রদান করেছেন। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের প্রদত্ত রায় ও আদেশ সম্পূর্ণ অভ্রান্ত, নির্ভুল এবং অহস্তক্ষেপযোগ্য।
ফলে ফৌজদারী কার্যিবধির ৩৭৪ ধারা মোতাবেক প্রেরিত ডেথ রেফারেন্সটি অনুমোদন করা হলো। একইসঙ্গে মো. হুমায়ূন কবির মোল্লা, মো. বিল্লাল হোসেন কিসলু, মো. হাবিব হাওলাদার, মো. রাজু মুন্সি এবং মো. রাসেলের মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্তকরণ করা হলো।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সকল ফৌজদারি আপিল ও জেল আপিল খারিজ করা হয়। মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত প্রত্যেককে এক হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মো. রাজু মুন্সী ও মোঃ রাসেলের সাজা পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতারের তারিখ বা স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিনউদ্দিন ও ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল সামিরা তারানুম রাবেয়া (মিতি) শুনানি করেন।