সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের একাংশের উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রস্তুতি চলছে। এ দলে সাবেক সেনা সদস্যদের পাশাপাশি আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, আমলা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বঞ্চিত নেতারা যোগ দিতে পারেন বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। দলের নেতৃত্বে রয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. শামীম কামাল। ইতোমধ্যে দলটির সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মেজর জেনারেল (অব.) ইবনে ফজল সায়েখুজ্জামান, সহসম্পাদক পদে রয়েছেন মেজর (অব.) দেলোয়ার হোসেন খান এবং জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা নুরুল কাদের সোহেল। দলটির নাম এখনও চূড়ান্ত হয়নি, তবে এ নিয়ে আলোচনা চলছে।
সম্প্রতি একটি সংবাদ মাধ্যমে দাবি করা হয়েছিল যে, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শামীম কামালসহ পাঁচজন সাবেক সেনাপ্রধান একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। তবে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) ইকবাল করিম ভূঁইয়া ফেসবুক পোস্টে জানান, তিনি এই দলে নেই। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যমটি ভুল স্বীকার করে প্রতিবেদন প্রত্যাহার করেছে।
এদিকে, এক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল এই খবরের জন্য সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করার ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শামীম কামাল এক টিভি টক শোতে বলেন, ‘আমাকেসহ পাঁচ সেনাপ্রধানকে নিয়ে দল গঠনের খবরটি মিথ্যা। তবে ভালো মানুষদের নিয়ে একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠনের প্রক্রিয়া চলছে, যা শিগগিরই আত্মপ্রকাশ করবে।’
যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাবেক সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মো. মুস্তাফিজুর রহমান অভিযোগ করেছেন যে, এটি আওয়ামী লীগের ‘বি’ টিম হতে পারে। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নতুন দলটির উদ্যোক্তারা।
গত ২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ইসিবি চত্বরে টাওয়ার্স-৭১-এর কনভেনশন হলে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের দেড় শতাধিক প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
দলটির সাংগঠনিক কমিটি চারটি পর্যায়ে কাজ করছে—থিংক ট্যাংক ও গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটি, উপদেষ্টা কমিটি, সংসদ সদস্য মনোনয়ন কমিটি এবং সাংগঠনিক পরিচালনা কমিটি।
সাধারণ সম্পাদক মেজর জেনারেল (অব.) ইবনে ফজল সায়েখুজ্জামান বলেন, ‘আমরা গণতান্ত্রিক, স্বৈরতান্ত্রিক, তত্ত্বাবধায়ক, অন্তর্বর্তী ও সেনাসমর্থিত সরকার দেখেছি। সব ক্ষেত্রেই জনগণ নিপীড়নের শিকার হয়েছে। আমরা পরিবর্তন চাই। এই কারণে আমরা সৎ, নিরপেক্ষ, দেশপ্রেমিক পেশাজীবী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীদের নিয়ে দল গঠন করছি।’
উদ্যোক্তাদের দাবি, ১৭০ জন সাবেক সামরিক কর্মকর্তা, চারজন সাবেক মন্ত্রী, ১৫ জন সাবেক সংসদ সদস্য, পাঁচজন সাবেক আমলা এবং ২০ জন বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও আইনজীবী নতুন এই রাজনৈতিক দলে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। শীর্ষ ১০টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন উদ্যোক্তাও দলে যোগ দিতে পারেন।
দলটির আহ্বায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. শামীম কামাল বলেন, ‘আমরা ন্যায্যতা, শিক্ষা ও দেশপ্রেমের ভিত্তিতে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি। প্রাথমিকভাবে এটি সাবেক সামরিক সদস্যদের সমর্থিত হলেও, এখানে সকল পেশার মানুষ যুক্ত হবেন। বিশেষ করে তরুণ ও শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে দলটি পরিচালিত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে ধারণ করে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করা। আমরা কোনো ঐতিহাসিক মীমাংসিত বিষয়ে বিতর্ক করবো না, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রতি পক্ষপাতিত্ব করবো না।’
এদিকে, নতুন দলে বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তাদের সংযুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বেশ কয়েকজনও ইতোমধ্যে দলটির সঙ্গে যুক্ত হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
দলের সংগঠকরা আশা করছেন, আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে পূর্ণাঙ্গ কমিটিসহ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে।