সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে এবার বেশ একটি চাঞ্চল্যেকর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। আর এই ঘটনায় এবার উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। জানা গেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ও তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায় হাওয়ালার মাধ্যমে টাকা পাচার করত বাংলাদেশে।
আর এমন দাবি ভারতের আর্থিক দুর্নীতিসংক্রান্ত তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি)। তদন্ত সংস্থাটির বরাত দিয়ে এই ধরনের সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে সেদেশের সংবাদ মাধ্যমেও। পার্শ্ববর্তী দেশের সীমানা ঘেঁষা পশ্চিমবঙ্গে এই ধরনের খবর পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও।
ভারতের তদন্ত সংস্থা ইডি’র সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থাও। বাংলাদেশে কার কাছে, কিভাবে, কখন টাকা পাচার করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার দাবি।
তদন্ত সংস্থা ইডি’র সূত্রে জানা গেছে, পার্থের টাকার একটা অংশ হাওয়ালার মাধ্যমে কয়েক দফায় বাংলাদেশে এসেছে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। সেই টাকার একাংশ দিয়ে বাংলাদেশে বেনামে জমি-বাড়ি কেনা হয়েছে বলেও তারা অনুমান করছেন। বাকি অংশ তৃতীয় কোন দেশে চালান হতে পারে। এ কাজে কলকাতার দু’টি ব্যবসায়িক সংস্থার যোগ প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। ইডি’র দাবি, এই দুই সংস্থা পার্থের অর্থ পাচারে যুক্ত।
একটি তৈরি পোশাকের কারবারি, অন্যটি শিক্ষার ব্যবসায় যুক্ত। তৈরি পোশাকের কারবারি সংস্থাটি দু’দেশেই ব্যবসা করে। শিক্ষার ব্যবসায়ে যুক্ত সংস্থাটিও বাংলাদেশে ইঞ্জিনিয়ারিং ও কারিগরি কলেজ এবং ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল খুলতে আগ্রহী।
তদন্ত সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, পার্থের বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাটে প্রথম দফায় উদ্ধার হওয়া টাকার যে ছবি প্রকাশিত হয়েছিল, তাতেই ‘বাংলাদেশ যোগ’-এর বিষয়টি তাদের নজরে আসে। টাকা যেভাবে শক্তপোক্ত খামে ভরে ‘স্কচটেপ’ দিয়ে প্যাক করা ছিল, তা যে সচরাচর হাওয়ালায় পাচারের জন্য করা হয়, সেটাও গোয়েন্দারা বুঝেছেন। বস্তুত, প্রথম দিন থেকেই পার্থর বাংলাদেশ যোগের তদন্ত শুরু করে দেন সে দেশের গোয়েন্দারা।
হাওয়ালার মাধ্যমে টাকা পাচার হতো বাংলাদেশে,এপার-ওপার বাংলার গোয়েন্দা নজরে পার্থ ঘনিষ্ঠরা। পার্থ চট্টোপাধ্যায়-অর্পিতা মুখোপাধ্যায় দুর্নীতি রহস্যে নয়া মোড় নিচ্ছে। প্রাক্তন মন্ত্রীঘনিষ্ঠ অর্পিতার দু’টি ফ্ল্যাটে বিপুল অঙ্কের টাকা পাওয়ার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও। বাংলাদেশে পার্থের প্রভাব বলয়কে খতিয়ে দেখে পশ্চিমবঙ্গের এই প্রাক্তন মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ কয়েক জনকে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা চিহ্নিত করেছে, যারা তার স্বার্থে কাজ করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
হাওয়ালার মাধ্যমে টাকা পাচারের ঘটনার সংবাদ প্রকাশের পর শব্দটি এখন সেখানকার মানুষজনের মুখে মুখে। নেয়া যাক, হাওয়া কী, কীভাবে এটা কাজ করে এবং বেআইনী হওয়া সত্ত্বেও কেন এই পদ্ধতিতে টাকা পাঠাতে লোকে পছন্দ করে! হাওলা কি? ‘হাওয়ালা’ একটি আরবী শব্দ। এর অর্থ লেনদেন। মূলত পশ্চিম এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশে একদল দালাল রয়েছে। ভারতে এই পদ্ধতিতে টাকা পাচার করে রাজনীতিবিদ, মাফিয়া, জঙ্গী, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষও।
প্রথমে দেখে এরা পারস্পরিক বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে কাজ করে। চিরাচরিত ব্যাংক বা অর্থব্যবস্থায় যে টাকা লেনদেন হয়, হাওয়ালা হলো তার সমান্তরাল একটি পদ্ধতি। হাওয়ালা গোয়েন্দাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, জঙ্গীরা নাশকতা চালাতে যে অর্থ জোগাড় করে কিংবা রাজনীতিবিদরা ভোটের সময় যে খরচখরচা করে, তার সিংহভাগ টাকা আসে এই পদ্ধতিতে।
ঢাকার বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেছেন, চিরকালই শুনে এসেছি বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার হয় বিদেশে। এখন শুনছি অন্য দেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা পাচার করা হয়েছে। এটা একদিকে যেমন বিস্ময়কর, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ইডি’র বরাত দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সংবাদ মাধ্যমে বাংলাদেশে টাকা পাচার বা হাওয়ালার কথাটি প্রকাশিত হয়েছে। সেই কারণে গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অনেক সময়ে ভুয়া, গুজব, অপপ্রচার হলেও তদন্ত করে খুঁজে বের করতে হয় সত্যটা।
প্রসঙ্গত, গেল বেশ কিছু দিন আগে অর্পিতার বাড়িতে অভিযান চালায় ভারতের গোয়েন্দা বিভাগ এবং পুলিশ। আর সেই অভিযান চালিয়ে বাড়ি ভর্তি টাকা পাওয়া যায়। এরপরই গ্রেফতার করা হয় তাকে।