গত ৩০ আগস্টের ঘটনা। সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) গোলাম মাওলা রনির বড় ছেলে রিয়াদ মিরপুর রোডে সায়েন্স ল্যাবরেটরি পার হচ্ছিলেন। হঠাৎ এক ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি থামিয়ে গাড়ির কাগজপত্র নিয়ে যায়। মামলা এড়াতে তিন হাজার টাকা ঘুষ চান কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য। তখন রিয়াদ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে মামলা করতে বলে। কিন্তু মামলা না করে বিকেলে ঘণ্টাখানেক গাড়ি নিয়ে তাকে সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। পরে রিয়াদকে এক হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে গাড়ি নিতে বাধ্য করা হয়।
গোলাম মাওলা রনি ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে দুই দিন আগে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি লিখেছেন, ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার খোন্দকার গোলাম ফারুক যদি বিষয়টি খতিয়ে দেখেন এবং আমার ছেলের কাছ থেকে আদায় করা ১০০০ টাকা ঘুষ ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতেন, তাহলে পুলিশের ওপর আমার আস্থা ও বিশ্বাস অটুট থাকত। অক্ষত!”
বিষয়টি ডিএমপি কমিশনারের নজরে আসে। তিনি ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারকে (ট্রাফিক) ঘটনার তদন্ত করতে বলেন। রনির অভিযোগ ও কমিশনারের নির্দেশে পরে ট্রাফিক বিভাগ তদন্ত করে। তদন্তে পুলিশ ওই ট্রাফিক পুলিশকে দেখতে পায়। তার নাম আশরাফ। তিনি নিউমার্কেট জোনে ট্রাফিক কন্ট্রোলার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ইতিমধ্যে তাকে প্রত্যাহার করে ডিসি অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ট্রাফিক রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) জয়নুল আবেদীন ঘটনার সাথে ট্রাফিক কনস্টেবল আশরাফের যোগসাজশের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দুই দিন আগে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে গোলাম মাওলা রনি অভিযোগ করেছিলেন, গত রাতে ঘুমাতে পারিনি! আমার ৩০ বছরের বড় ছেলে মিরপুর রোডে সায়েন্স ল্যাবরেটরির পাশ দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিল! হঠাৎ একটি ট্রাফিক পুলিশের গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র নিয়ে গেল!
ট্রাফিক সার্জেন্ট কাগজপত্র পরীক্ষা করে কোনো দোষ না পেয়ে বললেন, গাড়িতে নতুন রিম আছে তাই মামলা হবে! মামলা থেকে পালাতে হলে তিন হাজার টাকা ঘুষ দিতে হবে! আমার ছেলে মামলা করতে বললে মামলা না করে আমার ছেলেকে গাড়ি নিয়ে এক ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখে! এক হাজার টাকা ঘুষের পর পুলিশের হাত থেকে রক্ষা!
ঘটনাটি ৩০ আগস্ট দুপুর ১২:০০ থেকে ১:০০ টার মধ্যে ঘটে। রনি আরও লিখেছেন, “আমি নিজের টাকায় একটি গাড়ি কিনেছি এবং গত 30 বছর ধরে রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছি!” কখনো পুলিশের কবলে পড়তে হয়নি! জীবনের সকল প্রয়োজনের জন্য পুলিশ সহায়তা পেয়েছেন এবং এক পয়সা ঘুষও দিতে হয়নি। তাই পুলিশের প্রতি আমার যে বিশ্বাস ও আস্থা ছিল তা গতরাতে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে!
আমার গাড়ির সমস্ত কাগজপত্র 100% সঠিক! আমার ছেলের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে! ছেলেটি পেশায় কম্পিউটার প্রকৌশলী ছিল এবং বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে সেখানে থাকার জন্য জোর দিয়েছিল! আমি আমার ব্যবসার সাথে ধরার জন্য অনেক অনুরোধে ৬ মাস আগে দেশে নিয়ে এসেছি!
আমি এই প্রজন্মের একজন মেধাবী যুবককে ফিরিয়ে এনে আমার ৩০ বছরের পুরোনো ব্যবসার ব্যবস্থাপনা তার হাতে তুলে দেবার পরিকল্পনা করছিলাম, দেশ ও দেশের উন্নয়নে অনেক ইতিবাচক কথা বলেছি, একজন দুর্নীতিবাজ পুলিশের কারণে। !
উক্ত ঘটনায় অপমানিত হয়ে আমার ছেলে বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে গতকাল রাতে আমাকে পুরো ঘটনা খুলে বলে আবার বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন! শুধু ১০০০ টাকা ঘুষের জন্য যে অশান্তি ও অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি এবং দুর্নীতিবাজ পুলিশের অসম্মানজনক আচরণের প্রতিকার পাব কী করে! স্ট্যাটাস শেষে তিনি ডিএমপি কমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রতিকারের দাবি জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) জয়নুল আবেদীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি নজরে আসার পর ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে নিউমার্কেট এলাকার সব পরিদর্শক, সার্জেন্ট ও কনস্টেবলদের তলব করা হয়েছে। পরে শুনানি হয়। অভিযোগকারী গোলাম মাওলা রনিকে আসামি শনাক্ত করতে গতকাল (মঙ্গলবার) আসার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আজ (বুধবার) গোলাম মাওলা রনি নিহতের ছেলেকে নিয়ে এসে ঘটনার সঙ্গে জড়িত কনস্টেবল আশরাফকে শনাক্ত করেন। জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে আসামিকে সেখান থেকে প্রত্যাহার করে আমার অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।