সাম্প্রতিক সময়ে সানজানা মোসাদ্দিকা নামের একজন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর মৃ”ত্যু নিয়ে রহস্য দানা বাঁধতে শুরু করেছে। রাজধানীর ঢাকার দক্ষিনে একটি দশতলা বিল্ডিংয়ের উপর থেকে নিচে লাফ দিয়ে আত্মহনন করেছেন এমনটাই প্রাথমিকভাবে বলা হচ্ছে। সানজানা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে অধ্যয়ন করতেন। গত শনিবার অর্থাৎ ২৭ আগস্ট এই ধরনের ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়।
কিন্তু সানজানার বন্ধুদের দাবি, এটা আত্মহনন নয়, তাকে হ/”ত্যা করা হয়েছে! সানজানার অকাল প্রয়ানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সহপাঠীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফে”সবুকে আতকু মায়শা নামে সানজানার এক বান্ধবী আবেগঘন পোস্ট দেন। তিনি মনে করেন এটি হ/”ত্যাকাণ্ড। তিনি বেশ কিছু যুক্তি উপস্থাপন করেন। পোস্টটি তুলে ধরা হলো।
মাগরিবের সময় নিলয় ভাই এবং আমি যখন দক্ষিণখান থানায় পৌঁছলাম, পৌঁছালাম থানা চত্বরে তখন সানজুকে খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়নি। পুরো চত্বরে খালি একটা অ্যাম্বুলেন্স, যেখানে শুয়ে আছে সানজু। তিনজন ছাড়া পরিবারের সদস্যরা খালা-খালাতো ভাই। তার বাবা (একটি পশু) পলাতক, মা বাড়িতে। অ্যাম্বুলেন্সের কাছে যেতেই তার কাজিন ফোন দিয়ে খুঁজতেন কেউ আতকুকে চেনেন, তার নাম্বারটা দিতে পারবেন? আমি ঠিক সামনে ছিলাম। আমি বললাম, আমি আতকু, (সানজু আমাকে এই নামে ডাকতো)। আপু আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন। হাসপাতালে যাওয়ার পথে সানজু আমাকে আর মাস্তুরাকে খুঁজছিলেন। আমি কি করলাম, শেষ সময়ে তোর পাশে থাকতে পারলাম না। তখনও আমি জানি না কি কি শুনতে যাব, দেখতে পাব। এসবের জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
শনিবার সকালে তার নরপ”শু বাবা তাকে প্রায় পি’টিয়ে নিথর করে। প্রথমে উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানায় তারা। বেলা ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। সে তখনও জীবিত ছিলেন। পরে বাংলাদেশ মেডিকেলে নেওয়া হলে দুটি ইনজেকশন দেওয়ার পর সানজু প্রয়াত হয়। পরে সঞ্জুকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে তাকে ভোর ৩টার দিকে প্রয়াত ঘোষণা করা হয়। শরীরে ক্ষত, একটি ভাঙ্গা পা এবং একটি ভাঙ্গা নিতম্বের হাড় ছিল। মানুষ কিভাবে এত নি/”ষ্ঠুর হতে পারে। এটিও প্রথমবার নয়। প্রায় প”শু সদৃশ মানুষটি তার পরিবারের সদস্যদের মা”রধর করত। গত ঈদে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেও কোনো সাহায্য পায়নি। এ কারণে হয়তো ঐ দিন ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেনি সে!
তার মামাতো বোনের কাছ থেকে আরো জানতে পারলাম, তার মা বলছে ছাদ থেকে লাফ দিয়ে মা”রা গেছে। এমনকি ১০ তলা ছাদ! লাফ দেয়ার কারণ হিসেবে বলেছে বাপ মে”রেছে তাই। আমি ময়নাতদন্তের কথা বলার সাথে সাথেই জানতে পারি যে মা এবং পরিবারের কয়েকজন সদস্য ময়নাতদন্তের অনুমতি দিতে চাননি।
আমি সানজুকে দেখতে চাই। শেষবারের মতো ধরতে চাই। আমাকে ধরতে দেওয়া হয়নি। ছবি দেখাল। তবে ছবিটি দেখে আমি নিশ্চিত যে আমার সানজু আত্মহনন করেনি। তারা তাকে পি”টিয়ে মে’/রে ফেলল না। এখন ধামাচাপা দেওয়ার পালা।
পরে অনেক লোক এবং আমাদের ব্র্যাকের অনেক ছাত্র আসার পর পরিবার ময়নাতদন্ত করতে রাজি হয়। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়।
তার দেহ নেয়ার পর পরিবারের লোকজন মামলা ধামাচা’পা দিতে টাকা দেয়। পরিবারের অন্য সদস্যরা এই খবর জানিয়েছেন। কত কি হয়েছে বিস্তারিত জানি না।
মায়শা আরও লিখেছেন, ‘সবাই থানা ছেড়ে যাওয়ার পর আমি মধ্যরাতে দক্ষিণখান থানা থেকে ব্যাক আপ করি। কিন্তু কিছু প্রশ্ন, কিছু কমনসেন্স, কিছু যুক্তি!
১. ১০ তলা থেকে এক ব্যক্তি লাফ দেওয়ার পর দুটি হাসপাতাল ঘুরলো এবং সে জীবিত ছিল! একটু একটু কথাও বলতে পারছিল। এটা কিভাবে সম্ভব?
২. দশম বা দ্বাদশ তলা থেকে পড়ার পর নিথর দেহ এত অক্ষত থাকে কিভাবে? না কোনো রক্ত বের হয়েছে, না ম”গজ বের হয়েছে, না থেঁ’তলে গেছে বডি!
৩. শুধু শরীরে আঘাতের চিহ্ন এবং দড়ি দিয়ে বাঁধা হাতের চিহ্ন দৃশ্যমান ছিল। তারা ছাদ থেকে লাফ দিলে কোথা থেকে এলো?
৪. নোটটিকে সবাই সুইসাইড নোট বলছে! আচ্ছা বলুন তো কোথায় লিখেছেন, তার আত্মহননের জন্য তার বাবা দায়ী? সে লিখেছে, তার মৃ”ত্যুর জন্য তার বাবা দায়ী? সে জানতো আজ তাকে পিটিয়ে মা”রা হবে। কোনটি সুইসাইড নোট আর কোনটি মার্ডারের পরিচয় প্রকাশ করার জন্য লিখে যাওয়া নোট একটু পার্থক্যটা বুঝিনি আমরা।
৫. গত ঈদেও একই ঘটনা ঘটেছিল। ৯৯৯ কল করা হয়েছিল। কিন্তু তারা সাহায্য করেনি। ঈদের ছুটিতে থানায় জনবল ছিল না! ফানি, এটা কেমন প্রশাসন ভাই?
৬. আমাদের কিছু বন্ধু তার বাড়িতে যায়। লাফ দেওয়ার পর সে কোথায় পড়েছিল তা খুঁজে বের করতে তারা বাড়ির সামনে ও পিছনে যায়। কিন্তু রক্ত বা কিছুই পাওয়া যায়নি। আর আশেপাশের নির্মাণস্থলের লোকজনকে জিজ্ঞেস করে তারাও বলেন, আজকে সেরকম কিছু হয়নি।
৭. ড্রাইভার, দারোয়ান এবং ইলেক্ট্রিশিয়ান দ্বারা সানজুকে প্রথমে মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তার মা কেন গেল না? ছাদ থেকে তার দেহটি কোথায় পড়েছিল তা বলতে পারেননি কুলি। ফ্যামিলি মেম্বারদের এটা জিজ্ঞাস করলে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়। কখন, কোন সময়ে, কোথায় ছাদ থেকে লাফ দিল কেউ জানে না! অবাক করা ব্যাপার।
৮. তার বাবা তাহলে কেন পালিয়ে গেলেন?
৯. পরিবার যদি কিছু না করে, তাহলে কেন তারা ময়নাতদন্ত করতে চায়নি?’
তবে সানজানার বান্ধবীর এই নয়টি কারণের উত্তর অনেককে ভাবিয়ে তুলেছে। এটা প্রাথমিকভাবে যে কাউকে ধারণা দেবে যে, তিনি আত্মহনন করেননি। তাকে পরিকল্পিতভাবে কিছু করা হয়েছে এদিকে পুলিশ তার প্রয়ানকে ঘিরে তদন্তে নেমেছে। তার কাছ থেকে পাওয়া একটি চিরকুটে তার বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে, এমনটাই জানা গেছে।