অর্থনীতি, ধর্মসহ নানা বিষয়ে নিজের মতামত তুলে ধরেন বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন।যদিও তিনি ধর্মের বিষয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে দেশে ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন।তবে আগের মতো লেখালেখি না করলেও সামাজিক মাধ্যমে বেশ সরব থাকেন।সম্প্রতি নিজের ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ তুলে ধরে সামাজিক মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তসলিমা নাসরিন হুবহু পাঠকদের জন্য নিচে দেওয়া হলো।
আজকাল এমন হয়েছে কারও মৃত্যুই আমাকে আর অবাক করে না। বৃদ্ধ হওয়ার আগেই আমার বাবা মা, দুই দাদা, মামারা, খালারা, কাকারা ফুপুরা গত হয়েছেন। আজ সকালে সাদি মহম্মদের মৃত্যুর খবর শুনে আমি অবাক হইনি। তবে কেউ আত্মহত্যা করলে কষ্ট হয়। আত্মহত্যার আগে তার যে কষ্ট হয়েছিল, সেই কষ্টের কথা ভেবে আমার কষ্ট হয়। সাদির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোনও পরিচয় ছিল না। তবে তাঁকে দেখে মনে হতো তিনি বোধহয় সমপ্রেমী বা সমকামী। আমার মনে হতেই পারে, আমি ঠিক নাও হতে পারি।
অনেকে বলছে তিনি আত্মহত্যা করেছেন কারণ তাঁর মা’র মারা যাওয়াটা তিনি সহ্য করতে পারেননি। সাদি মহম্মদের মা’র বয়স নব্বইয়ের ওপরে ছিল। বার্ধক্যজনিত কারণে তাঁর মৃত্যু হওয়াটা খুব স্বাভাবিক । সুতরাং মাতৃবিয়োগের যন্ত্রণায় সাদি আত্মহত্যা করেছেন, এ আমি বিশ্বাস করি না। সাদি মহম্মদের হয়তো কোনও মানসিক অবসাদ ছিল, ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার ছিল। মায়ের মৃত্যু হয়তো তাঁর ডিপ্রেশানকে ট্রিগার করেছে। ব্রেনের অর্ডার মতো মানুষ চলছে। ডিসঅর্ডার হলেই মুশকিল, র্যাশনাল চিন্তাভাবনা সবসময় তখন কাজ করে না। অযৌক্তিক হতাশার কারণেই হয়তো সাদি অনুষ্ঠানাদিতে গান গাওয়া বন্ধ করেছিলেন। অন্য কারণও থাকতে পারে। শান্তিনিকেতন থেকে সঙ্গীতের ডিগ্রি নিয়ে এলেও অন্যান্য শিল্পীরা বিরাট বিরাট পুরস্কার পাচ্ছেন, তিনি পাচ্ছেন না, হতাশা এ কারণেও হতে পারে। সঙ্গীহীনতা সবাইকে ভোগায় না, কাউকে কাউকে ভোগায়। তিনি হয়তো ভুগতেন। কত রকম যে কারণ থাকতে পারে! আমরা শুধু অনুমানই করতে পারি। নিশ্চিত হতে পারি না।
আত্মহত্যা ব্যাপারটা আমাদের ভাল না লাগতে পারে, কিন্তু এটিও একটি মানবাধিকার। যার জীবন, সে-ই সিদ্ধান্ত নেবে এ জীবনটি কতদিন সে যাপন করবে, অথবা আদৌ যাপন করবে কি না। তবে এই আত্মহত্যা যদি মানসিক অসুস্থতার কারণে হয়, যে অসুস্থতা চিকিৎসার মাধ্যমে সারানো সম্ভব ছিল, কিন্তু সারানো হয়নি, তাহলে আফসোস তো হবেই।