সম্প্রতি সাদিয়া আক্তার ( Sadia Akhter ) সাথীর ঘটনাটি আত্মহনন নয়, এমনটি দাবী করেছে তার পরিবার। সাথীর দ্বিতীয় স্বামী মইনুলের অধিক নির্যাতনের ফলাফল এটি। সাথীর স্বপ্ন ছিল, বিসিএস ( BCS ) ক্যাডার হওয়ার, তিনি এখন হয়ে গেছেন পরপারের বাসিন্দা। এদিকে প্রয়াত সাদিয়ার ৮ বছরের শি”শুকন্যার কাছ থেকে বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য।
বরিশালে ( Barisal ) মেয়েকে স্কুলে রেখে, নিজ কক্ষে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহনন করেননি গৃহবধূ সাদিয়া আক্তার ( Sadia Akhter )। স্বামী জেলা ডিবি পুলিশের ( police ) কনস্টেবল মাইনুল ইসলাম ( Mainul Islam ) তার সঙ্গীকে অধিক মারধর করেন, এমতাবস্থায় তার স্ত্রী প্রয়াত করেন। এছাড়া সাথীর লাশ উদ্ধারের পর থেকে কনস্টেবল মইনুল পলাতক রয়েছেন। মঙ্গলবার সাথীর বাবা সিরাজুল হক মৃধা ( Sirajul Haque Mridha ) বাদী হয়ে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় হ’/ত্যার অভিযোগে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্ত মাইনুল ইসলাম ( Mainul Islam ) পিরোজপুর ( Pirojpur ) জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার উত্তর বাদুরী ( North Baduri ) গ্রামের সোহরাব ফরাজীর ( Sohrab Faraji ) ছেলে।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, সাথী আগে বিবাহিত এবং ঘরে একটি মেয়ে রয়েছে। এক বছর আগে দুজনের সম্মতিতে সাথী ও মইনুলের সঙ্গে বিয়ে হয়। এরপর তারা বরিশালে ( Barisal ) বাসা ভাড়া থাকতেন। পরে সাদিয়া সাবলেটে থাকা শুরু করেন। সাদিয়াকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে, সাদিয়ার বাবার থেকে বিভিন্ন অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় মইনুল। ওই টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বললে তাকে নি/র্যা’তন করা হত এবং আরও ৫০ লাখ টাকা যৌতুক দা’বি করা হয়।
এর আগেও মইনুলের সঙ্গী নি/র্যা’তনে বেশ কয়েকবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। সোমবার ( Monday ) তাকে নি/র্যা’তন করে হত্যার পর তার লা”শ ঝুলিয়ে রাখা হয়। সাদিয়ার বাবা সিরাজুল হক মৃধা ( Sirajul Haque Mridha ) জানান, তার মেয়ে আত্মহ’নন করলে তার ফ্ল্যাটের দরজা ভেতর থেকে তালা দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু পুলিশ ও আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে দরজা খোলা দেখতে পাই। এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত হ’/ত্যাকাণ্ড। আমি আমার মেয়ে হ”ত্যার বিচার চাই। আমার মেয়ে আত্মহ’নন করে নি।
তিনি বলেন, সাদিয়া যদি আত্মহ’নন করে থাকে, তাহলে সন্তানকে স্কুলে আনবে কেন? আমার অনুমান যে সাইমন ( Simon ) স্কুলে ছিল এবং বাড়িতে আমার মেয়ে একা ছিল। এরপর মইনুল তাকে নি’র্যা’তন ও মা’রধর করে এবং সিলিং ফ্যানের সঙ্গে লাশ ঝুলিয়ে রাখে। সাবলেটে স্বর্ণালী নামে আরেকটি মেয়ে ছিল। ঘটনার পর থেকে তাকে ও আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ চেষ্টা করলে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে রহস্য উদঘাটন করতে পারে।
সাদিয়া সাথীর দুলাভাই বাবুগঞ্জ ( Babuganj ) উপজেলার কেদারপুর ( Kedarpur ) ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরে আলম বেপারী ( Noor Alam Bepari ) বলেন, সাদিয়া আক্তার ( Sadia Akhter ) সাথীর আত্মহ’নননের কোনো কারণ নেই। কয়েকদিন আগে একটি ব্যাংকে চাকরির জন্য ১৩ লাখ টাকা নেন মইনুল। কিন্তু পরীক্ষা দেওয়ার পর চাকরি না হলে টাকা ফেরত চায় সাদিয়া। প্রথম তিনি ৮ লাখ টাকা ফেরত দিলেও বাকি ৫ লাখ টাকা ফেরত দেননি। পরে ৫০ লাখ টাকা যৌতুকও দাবি করেন মইনুল। খুনের আগের দিন ৬ মার্চ বাড়িতে আসেন মইনুল। সাদিয়ার ( Moinul. Sadia ) মেয়ে সাইমন ( Simon ) আমাদের জানায়, মইনুল এসে সাদিয়াকে নি”র্যাতন ও মা’রধর করেন।
তা ছাড়া মইনুলই আমাদের সবাইকে জানায় যে সাদিয়া আত্মহনন করেছে। আমরা চাই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। লাশ উদ্ধারের সময় কোতোয়ালি থানার এসআই রেজা সাদিয়া একটি ডায়েরি ও একটি মোবাইল ফোন নেন। আমরা তার মধ্যে কি ছিল তা দেখতে চেয়েছিলাম, কিন্তু কিছুই দেখানো হয়নি। মরদেহ উদ্ধারকারী উপ-পরিদর্শক রেজাউল ইসলাম রেজা জানান, সোমবার তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারেন তার স্বামী কাজ করছেন, কিন্তু আমি কি বলব বুঝতে পারছিলাম না। তবে মঙ্গলবার সকালে জানতে পারি মইনুল ইসলাম জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাজে কর্মরত ছিলেন।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আজিমুল করিম বলেন, সাদিয়া আক্তার সাথীর পরিবার তাদের অভিযোগের বিষয়টি আমাদের জানিয়েছে। তবে আমরা অপমৃ’ত্যুর বিষয়টি মেনে নিয়েছি। আমি বিষয়টি তদন্ত করছি। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সোমবার দুপুরে বরিশাল নগরীর বৈদ্যপাড়ার ২০ নম্বর ওয়ার্ডে ডা. শাহজাহান হোসেনের ভবনের পঞ্চম তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে বিসিএস পরীক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার সাথী নামে এক গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সাদিয়া সাথীর একটি ৮ বছরের মেয়েও রয়েছে। মেয়েটি তার প্রথম পরিবারের।
উল্লেখ্য, সাদিয়া আক্তার সাথী ছিলেন একজন বিসিএস পরীক্ষার্থী। তার অকাল প্রয়ান যেন মেনে নিতে পারছে না তার পরিবার। আত্মহনন নাকি জোরপূর্বক তাকে এই পথ বেছে নিতে বাধ্য করেছে সেটা এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি প্রশাসন। পরিবারের একান্ত চাওয়া ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে যেন বিচার হয়।