বাংলাদেশ নতুন গঠিত কয়েকটি জ”ঙ্গি সংগঠন মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, এমন ধরনের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা বিভাগ। সাম্প্রতিক সময়ে জ”ঙ্গিদের বিভিন্ন ধরনের নতুন সংগঠনগুলোর সদস্যদের ধরতে তৎপর হয়েছে গোয়েন্দারা। ইতিমধ্যে বেশ কয়েক জন সদস্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তবে আগামী নির্বাচনকে ঘিরে জ”ঙ্গিরা যাতে সক্রিয় হয়ে না উঠতে পারে সেজন্য অভিযান পরিচালনা করছে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা বিভাগ।
এদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সরাসরি সম্পৃক্ততা পেয়েছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। এই অভিযোগে তাকে গ্রেফ”তার করেছে সিটিটিসি।
সিটিটিসি জানিয়েছে, সিলেটে শফিকুর রহমানের বাড়িতে ডা. রাফাত ও তার সহযোগীরা বিভিন্ন সময়ে জ”ঙ্গি সংগঠনের দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। পুরো বিষয়টি নিয়ে জামায়াতের আমির অবগত ছিলেন। ক্ষেত্রবিশেষে তিনি সহযোগিতাও করেছেন।
জামায়াতের আমিরের ছেলেকে আটক করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে সিটিটিসি। ডা. রাফাত ১১ জন লোকের সাথে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টে (কেএনএফ), একটি পাহাড়ী সশ”স্ত্র গোষ্ঠীতে প্রশিক্ষণের জন্য হিজরত করেছিল। ওই অভিবাসনের পুরো খরচ বহন করেন শফিকুর রহমান।
মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিটিটিসির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, “গতকাল (মঙ্গলবার) সকালে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ৯ নভেম্বর তার ছেলে ডা. রাফাত চৌধুরীকে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে সিলেট থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারও আগে হিজরত করা অবস্থায় যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। রাফাতকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রাফাত ইসলামী ছাত্র শিবির করত। এছাড়া তার আগের তিন সহকারীও ছাত্রশিবিরের সদস্য ছিল। ডা. রাফাতের সঙ্গে গ্রেফতার আরিফও শিবিরের সদস্য ছিলেন।’
সিটিটিসি প্রধান বলেন, জামায়াতের আমির ছেলে ড. রাফাতকে গ্রেপ্তারের পর জানা যায়, জামাতুল ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার আগে আনসার আল ইসলাম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই নিষি”দ্ধ জ”ঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন। সিলেট অঞ্চলে কর্মরত থাকা অবস্থায় রাফাত আনসার আল-ইসলামে যোগদানের জন্য অনেককে নিয়োগ দিতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে নতুন জ”ঙ্গি সংগঠন জামাতুল হিন্দাল ফিল শারক্বীয়াতে ড. রাফাত ও তার সদস্যরা যোগ দেন।
তিনি বলেন, ‘ড. রাফাতের নেতৃত্বে সিলেট অঞ্চলের ১১ জন প্রথমে বান্দরবানের কুকি-চিন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে পাড়ি জমায়। কুকি-চিন এবং বান্দরবানে নতুন জ”ঙ্গি সংগঠনের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়ে তারা পাহাড় থেকে ফিরে আসে। পরে তাহিয়াতের নেতৃত্বে রাফাতের কয়েকজন সহকারী হিজরত করেন। তাহিয়াত কুকি-চিন ক্যাম্পের সর্বশেষ প্রশিক্ষণরত অবস্থায় ছিলেন।’
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, ‘২০২১ সালের জুনে ডা. রাফাত ও তার কয়েকজন সহকারীসহ তার বাবা জামায়াত আমিরের সম্মতিতে বান্দরবান থেকে ফিরে আসেন। পুলিশের নজর এড়াতে জামায়াতের আমীর তাদের বিশেষ ব্যবস্থাপনায় দুটি মাইক্রোবাস ভাড়া করেন। সেখান থেকে কেউ ঢাকায় এবং কেউ সিলেট অঞ্চলে চলে যান। বান্দরবানে হিজরতের ১১ জনের সম্পূর্ণ ব্যয়ভার ডা. শফিক বহন করেন। এ ঘটনায় জামায়াতের আমিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাত্রাবাড়ী থানার মামলায় সরাসরি জড়িত থাকার কারণে ডা. শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নব্য জ”ঙ্গি সংগঠনের আরেক চিকিৎসক শাকিরকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তিনি নতুন জ”ঙ্গি সংগঠনের দাওয়াতি বিভাগের প্রধান ছিলেন’ বলেও জানান সিটিটিসি প্রধান।
জামায়াত নেতারা জ”ঙ্গিবা/দে উস”/কানি দিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব। এর আগে গ্রে”প্তারকৃতরা শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। নতুন জ”ঙ্গি গোষ্ঠীর জামায়াতের সাথে পারস্পরিক বোঝাপড়া থাকতে পারে, বা তাদের সম্পূর্ণ সহযোগিতা করতে পারে। নতুন জ”ঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারাও জামায়াতের সমর্থন পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
নতুন জ”ঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জামায়াতের আমির ছাড়া আর কেউ জড়িত আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, নতুন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে রাফাতের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তিনিই সর্বপ্রথম হিজরত করেন এবং তাঁর নেতৃত্বে একযোগে বিপুল সংখ্যক সদস্য হিজরত করেন। আমরা এমন তথ্যও পেয়েছি যে, সংস্থার প্রধানের ছেলে প্রশিক্ষণের জন্য সেই সংগঠনের অন্যান্য আঞ্চলিকপর্যায়ের সমর্থন আছে।’
এদিকে, ডা. শফিকুর রহমানের সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার অর্থাৎ ১৩ ডিসেম্বর তাকে আদালতে প্রেরন করে পুলিশ। যাত্রাবাড়ী থানার তদন্তকারী দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা সন্ত্রা”/সবিরোধী আইনে মামলার বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করার জন্য ১০ দিনের রি”মান্ড চেয়ে আবেদন করেন। এদিকে তার আইনজীবীরা তার রিমা”ন্ড বাতিল করার মাধ্যমে জামিন আবেদন করেন। বলে জানা গেছে। শুনানি সম্পন্ন হওয়ার পর রাজেশ চৌধুরী যিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে রয়েছেন, তিনি তাঁর জামিন আবেদন বাতিল করে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।