সম্প্রতি দলীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে গডফাদার বলে ‘আখ্যা’ দিয়ে রীতিমতো দেশজুড়ে বেশ আলোচনায় রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। এমনকি ‘গডফাদার’ শামীম ওসমানের ৩০ বছরের উপাধি বলেও মন্তব্য করতে দেখা যায় তাকে। আর এরই আলোকে এবার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার জানিয়েছেন, ডা. আইভী নিজেই বলেছিলেন ‘দুই নেত্রী দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গডফাদাররা খুন করে বেড়াচ্ছে, বর্তমান সরকার খু’নিদের পৃষ্ঠপোষক, আওয়ামী লীগ মনে করে ৬৪ জেলায় ৬৪ জন গডফাদার থাকলেই তাদের কাজ হয়ে যাবে’- যার পেপার কাটিং রয়েছে। তাহলে যে দল গডফাদার-খুনি লালন করে, সেই দল আপনি (আইভী) করেন কেন?
রবিবার (৯ জানুয়ারি) বিকেলে নিজ বাসভবনের ‘মজলুম মিলনায়তন’ এক সংবাদ সম্মেলনে তৈমূর আলম খন্দকার এসব কথা বলেন।
এসময় সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি ও কলেজছাত্রী তনু হ’ত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জনসম্মুখে তথ্য প্রকাশ করতে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে অনুরোধ করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, সাগর-রুনি ও তনু হ’ত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত আপনি জানেন বলে বক্তব্য দিয়েছিলেন, যার রেকর্ড আমাদের কাছে আছে। জানা থাকলে সেটা জনসম্মুখে প্রকাশ করলে জনগণ আপনাকে ধন্যবাদ জানাবে।
তৈমূর বলেন, পৌরসভা থেকে সিটি কর্পোরেশনের ১৮ বছরে সততার বুলি আওড়িয়ে কি করে একজন রাজপ্রাসাদ গড়ে তুলতে পারেন। আর যে সব সাংবাদিক নাসিক পরিচালনায় মেয়রের ব্যর্থতা পত্র-পত্রিকায় তুলে ধরেছেন তাদের অনেককেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার শিকার হয়েছেন এবং কারাগারে যেতে হয়েছে।
তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, সরকার দলীয় প্রার্থী একের পর এক আচরণবিধি ভঙ্গ করলেও নির্বাচন কমিশন শুধুমাত্র শোকজ করার নামে আইওয়াশ করেছে। নৌকার প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় এসে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বলে গেছেন, তৈমূরকে রাস্তায় নামতে দেওয়া হবে না। নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে আমার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হওয়ায় কর্মী-সমর্থকদের পরোক্ষভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। সর্বোপরি গতকাল শনিবার (৮ জানুয়ারি) সরকার দলীয় মেয়র প্রার্থী আমাকে নিয়ে তার নিজ দলের একজন এমপি ও জাতীয় পার্টির একজন এমপিকে জড়িয়ে যে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত মন্তব্য করেছেন সে ব্যাপারে কিছু না বললেই নয়।
সরকার দলীয় মেয়র প্রার্থী যে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত মন্তব্য করেছেন, সে ব্যাপারে আমার স্পষ্ট মন্তব্য হলো সরকার দলীয় নেতাদের এই বিভেদ-বিভাজনই নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। শামীম ওসমান সরকার দলীয় এমপি আর সেলিম ওসমান সরকারি দলের জোটবদ্ধ জাতীয় পার্টির এমপি। আমি তৈমুর আলম খন্দকার প্রথম দিন থেকেই বলছি শামীম ওসমানের পায়ে তৈমূর আলম খন্দকার হাঁটে না। গত ৫০ বছর ধরে মাটি ও মানুষের সঙ্গে রাজনীতি করতে করতে তৈমূর আলম খন্দকারের ভিত্তি এতটাই শক্ত অবস্থান হয়েছে যে, শামীম ওসমান বা সেলিম ওসমানের হয়ে আমাকে নির্বাচনে অভিনয়ে নামতে হবে না।
তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, সরকার দলীয় প্রার্থীর অবস্থান এতটাই নড়বড়ে হয়ে গেছে, হাতি মার্কা আজ জনতার মার্কা হয়ে গেছে। সরকার দলীয় প্রার্থীর পায়ের নিচে মাটি এতটাই সরে গেছে যে, পুলিশ প্রশাসনের লোক দিয়ে ভয়ভীতি আর জোর করে সরকার দলীয় নেতাদের মাঠে নামাতে হচ্ছে। ট্রাক ভর্তি করে পুলিশ পাঠিয়ে সরকারি মার্কার পক্ষে নির্বাচন করার জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে ও হয়রানি করা হচ্ছে।
জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, আমার কোটি কোটি কালো টাকা নেই, কোনো ঠিকাদার সিন্ডিকেটও নেই। আমি সর্বদা আপনাদের সামনে খোলা বইয়ের মতই। আমি সব সময়েই অত্যাচার, অবিচার, শোষণ, নির্যাতন, সন্ত্রাস, ভূমিদস্যুতার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে ছিলাম, এখনো আছি। সর্বোপরি আমি নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষের মতামতের ভিত্তিতে সুষম উন্নয়ন করতে চাই।
এদিকে চলতি মাসের আগামী ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন। আর সেই আলোকে এ নির্বাচনে যেন কোনো ধরণের দুর্নীতি-অনিয়মের ঘটনা না ঘটে, সেদিকে ইতিমধ্যে লক্ষ্য রাখছে প্রশাসন। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম নির্বাচন নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, নির্বাচনে কেউ কোনো অপকর্ম করলে, তাকে ছাড় দেয়া হবে না।