সম্প্রতি সাকিব-তামিমের মধ্যে দ্বন্দ্বে ক্রিকেট অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।যদিও বিষয়টি নিয়ে পক্ষ বিপক্ষে নানা যুক্তি দেখানো হয়েছে।কিন্তু বিশ্বকাপে তামিমের বাদ পড়া নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয় দেশ জুড়ে।শুধু তাই তার বাদ পড়ার পেছনে যাদের হাত ছিল তাদের নাম প্রকাশ্যে আশায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আসিফ নজরুল হুবহু পাঠকদের জন্য নিচে দেওয়া হলো।
ক্রিকেট নিয়ে ইদানীং বেশ তীক্ষ্ম ও বেশ তীর্যক কিছু লেখালেখি করেছি। স্বাভাবিকভাবে তামিমের পক্ষ নিয়ে। তাই কিছু কৈফিয়তও দিচ্ছি –
তামিম ইকবালের ভক্ত হই ছোটোবেলায় তার ডাউন দ্যা গ্রাউন্ড হিটিং দেখে। তবে তামিম আমার এক নম্বর ফেভারিট ব্যাটসম্যান না। খুব সম্ভবতঃ দুইয়েও তামিম নেই। আমি একে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম/এবিডি’র পর দুইয়ে রোহিতকে রাখবো। তিনে তামিম ইকবালের অবস্থান। তামিমের পক্ষ নিয়ে আমার সাম্প্রতিক যতো মাতামাতি তার প্রধানতম কারণ সাকিব আল হাসান ও তার ভক্তবৃন্দ। বলতে পারেন কিছুটা ইডিওলজিক্যাল, পলিটিকো-মোরাল জায়গা থেকে তামিমকে সাপোর্ট করা এবং সাকিবকে ঘৃণা করা।
বিশ্বকাপ ইস্যু দিয়েই তার শুরু। একজন খেলোয়াড মিডিয়ায় অবসর নিয়ে চোখের পানি ফেললো, যা খুবই স্বাভাবিক জেশ্চার। কিন্তু সেটিকে “নাককাঁদুনে বাচ্চামি” সহ আরো নানা ট্রল চোখে পড়লো। আরো আশ্চর্য হলাম যখন একজন জাতীয় দলের কাপ্তান বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে একটা টিভি চ্যানেলে সাবেক কাপ্তানকে নিয়ে তার ফ্যানকিডদের মতো তীর্যক মন্তব্য করে যায় এবং একটা সিরিজ হারের দায় চাপায় একজন নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের উপর। আইরোনিক্যালি, এই সাক্ষাৎকারকে তার ভক্তবৃন্দ প্রফেশনালিজমের প্রকৃষ্ট উদাহরণ বলে প্রচার করলো। তবে এই টকশো’র জন্য সাকিব ধন্যবাদপ্রাপ্য। এই এক টকশো’র কারণে আজ পুরা বাংলায় শেষ সময়ে ভুয়া ভুয়া স্লোগান শুনছে। পক্ষান্তরে, তামিমের জনপ্রিয়তা বেড়েছে চক্রবৃদ্ধিহারে।
তার ভক্তবৃন্দ বলে থাকেন- “সাকিব কাউরে গুণে না। ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলে।” হা হা হা! বাস্তব সত্য হলো- সাকিব শুধু গুণেই না, মাঝে মাঝে পায়েও ধরে। লোটাস কামালের পায়ে ধরা ছবিও আমরা দেখেছি। আরাভ খানের দোকান উদ্বোধনও আমরা দেখেছি।
এখানেও ঘটনা শেষ হয়নি। যিনি তামিমকে আনফিট অবস্থায় খেলার কারণে আনপ্রফেশনাল বলেছিলেন ভরা মিডিয়ায়, তিনি নিজেই ইঞ্জুর্ড অবস্থায় বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে ম্যাচ খেলেছেন। এটাকেও আইরোনিক্যালি, তার ভক্তবৃন্দ প্রফেশনালিজম বানিয়েছেন। কি দিন আসলে সাকিব ফ্যানদের কাছ থেকে প্রফেশনালিজমের সংজ্ঞা শুনতে হয়! তামিমের পরিবর্তে যাদেরকে অপেনিংয়ে নেওয়া হলো, তারা লিটারেলি দাঁড়াতেই পারলো না। তামিম ডটবাবা, কিন্তু আমাদের অপেনাররা দশ ওভার পর্যন্ত ডট খেয়েও টিকতে পারে না।
তামিম সাকিবের চেয়ে বেশি রেকর্ডধারী ক্রিকেটার না; সত্য। এবং, তামিম-সাকিব দ্বন্দ্ব মাঠের ক্রিকেটীয় প্রেক্ষাপটেও না। এই দ্বন্দ্ব মূলতঃ স্বেচ্ছাচারিতা ও জেন্টেলম্যান’স গেইমের। আমিই হনু বনাম চলো একসাথে করি’র। একারণেই কাপ্তান হিসাবে সাকিবের পারফর্ম্যান্স সবচেয়ে বাজে। কিন্তু এই আলাপ করতে গেলেই আপনার সামনে কেবল সাকিবের ব্যক্তিগত রেকর্ডঝুঁড়ি তুলে ধরা হবে। সাকিব বুকার্সদের তথ্য আইসিসিকে না জানিয়ে নিষিদ্ধ হয়েছিল দু’বছর, নানা সময়ে অপ্রীতিকর ও হীন চরিত্রের ঘটনার জন্ম দিয়ে নানা টার্মে নিষিদ্ধ হয়েছে। সে সবের পর্চা খুলবো না; কিন্তু তার এসব ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখিয়ে অনেকে তাকে রোনালদোর সাথে ম্যাচ করাতে চান। আমি রোনালদোকেও ডিসলাইক করি বটে। তবে একথায় নির্দ্বিধায় বলতে পারি- সাকিব কোনো এঙ্গেলেই রোনালদোর এজিলিটি ধারণ করেনা। রোনালদো মোটেও এই মাপের আনপ্রফেশনাল ও স্বেচ্ছাচারি না। কোথায় লিভারপুল, কোথায় চাংখারপুল টাইপ যুক্তি এটি।
সাকিব ভক্ত ও সাকিবকে বেশি ঘাঁড়ানোর অন্যতম কারণ পলিটিকো-মোরাল। তামিম বিএনপি ঘরের সন্তান হিসাবে পরিচিত। আবার, খান পরিবারেরও। তাই ওর সাথে “বিহারী” কথাটা বেশ ব্যবহার করা হয়। উগ্র বাঙালী জাতীয়তাবাদী আস্ফালন হলো এরকম বিহারী চিহ্নিতকরণ। এমনও দেখেছি তামিমকে “জেনেভা ক্যাম্প থেকে উঠে আসা” ছেলে বলা হচ্ছে। এগুলোকে কাউন্টার দেওয়ার জন্য আমি সর্বোচ্চ টক্সিক হবো, নো মারসি অন দ্যাট। সাকিব ফ্যাসিস্ট সরকারের অংশীদার জালেম, লোন ডিফল্টার, টাকার জন্য খুনীর সাথেও অনুষ্ঠান করে ইত্যাদি ইত্যাদি। তার রাজনৈতিক অবস্থান মূলতঃ তার ব্যক্তিজীবনেরই প্রতিফলন। কিন্তু তাকে ঘৃণা করার জন্য এসবের বিশেষ প্রয়োজন নেই! খেলায় স্বেচ্ছারিতা, জুয়াড়িদের সাথে হাত রাখা, ফেলো একজন ক্রিকেটারের প্রতি তার আচরণ ইত্যাদি ওকে হেইট করার জন্য এরচেয়ে বেশি কারণ আমার প্রয়োজন নাই। তার ফ্যানবয়রা এসবকে “স্যাভেজ স্যাভেজ” বলে বাহ্বা দেয়। যা দেখতে অত্যন্ত হাস্যকর! আমি শতভাগ নিশ্চিত এরা হিটলারের আমলে জন্মাইলে একেকটা না–ৎ–সি হইতো।
আন্দালিব রহমান পার্থের মতোই বলতে চাই – সাকিবকে আল্লাহ সবকিছু দিয়েছে কেবল নৈতিকতা ছাড়া। আর অনৈতিক লোকটার অনৈতিকতাকেই যখনই একদল বোকাচন্দ্র ‘ডোন্ট কেয়ার’ ভাব বা ‘স্যাভেজ’ বলে সেলেব্রেট করবে, তখন এদের ও এদের বসের বিরুদ্ধে বলাটাকে আমি দায়িত্ব মনে করবো। একারণে বিশ্বকাপে এঞ্জেলো ম্যাথুসের পক্ষে ছিলাম। এমনকি যদি সাকিবের বিপক্ষে কলাগাছও দাঁড়ায়, আমি কলাগাছকেই সমর্থন করবো। এতে যদি ওরা টক্সিক মনে করে, আই এম টোটালি ফাইন উইথ দ্যাট!