কয়েকদিন আগে চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিএনপির প্রথম বড় ধরনের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই সমাবেশে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের সর্বোচ্চ দন্ডপ্রাপ্ত সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ছেলে পিতার মত করেই স্লোগান দেন, যেটা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। সেইসাথে বিএনপির অনেক নেতা কর্মী তার এই ধরনের শ্লোগানে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন। জানা যায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী ‘নারায়ে তাকবীর’ এমন ধরনের স্লোগান দেন এবং তার পরপরই একই স্লোগান দেন সমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মীদের একাংশ।
সাকা চৌধুরীর ছেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরীর বক্তব্যকে ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ আখ্যা দিয়ে তার বক্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বিকাল ৪টায় শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘গৌরব ৭১’ এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। সমাবেশ থেকে হুম্মাম কাদেরের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।
প্রতিবাদ সমাবেশে আওয়ামী স্বচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক একেএম আফজালুর রহমান বাবু বলেন, যুদ্ধাপরাধী রাজাকার সাকা চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীর ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যে আমি বিস্মিত নই।
কারণ, রাজাকারের ছেলে রাজাকারের ছেলের মতো কথা বলবে। তবে এ ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবিলম্বে এসব স্বাধীনতা বিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
আওয়ামী কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম বলেন, একাত্তরে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী সাকা চৌধুরীর বিচার হলে হুম্মাম চৌধুরীর জন্ম হতো না। আজ তার ইঙ্গিত রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। তাই তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা উচিত।
আওয়ামী যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট কুহেলী কুদ্দুস মুক্তি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে ভালোবাসি। আমি এদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ভালোবাসি। কিন্তু স্বাধীনতার এত বছর পরও আমাদের শুনতে হচ্ছে যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর সন্তানদের হুংকার। এটা কী ভাবা যায়? আমি সরকারকে বলব, তাকে সংবিধান ও আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে।
মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার বলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধারা বেঁচে আছি। আমাদের সন্তানরাও বেঁচে আছে। তাই কোনো যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানেরা বাংলাদেশে থাকতে পারবে না। আমার দাবি, আগামী ১০০ বছর কোনো রাজাকারের সন্তান কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারবে না এবং একই সঙ্গে তাদের সন্তানদের কোনো সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া যাবে না।
মুক্তিযোদ্ধা বিচ্চু জালাল বলেন, যুদ্ধাপরাধী রাজাকার সাকা চৌধুরীর ছেলে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে ক্ষ”তবি’/ক্ষত করে দিয়েছিল। সাহসী মা, সাহসী সন্তানদের সংগঠন গৌরব ৭১। তাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই সংগঠনের দাবি মেনে নিয়ে হুম্মামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
গৌরব ৭১ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহীন বলেন, মহাসমাবেশে বিএনপির নামে স্বাধীনতাবিরোধী ফ্রন্ট এদেশের স্বাধীনতাকে কলঙ্কিত করেছে। তাদের সমাবেশে যুদ্ধাপরাধী রাজাকার সাকা চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী তাকবীরের স্লোগান দেন এবং দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের শহীদ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করে তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। একই সঙ্গে হুম্মামের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
জানা গিয়েছে, গত বুধবার অর্থাৎ ১২ই অক্টোবর চট্টগ্রামের অবস্থিত পলো গ্রাউন্ডে বিএনপি’র একটি বিভাগীয় সমাবেশ আয়োজন করে। এই বিভাগীয় সমাবেশে ভিন্ন ধরনের বক্তব্য দেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পুত্র হুম্মাম কাদের চৌধুরী। বক্তৃতা দেওয়ার শেষ প্রান্তে এসে তিনি ‘নারায়ে তাকবির’ এমন ধরনের স্লোগান দেন যেটা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। এ ধরনের বক্তব্য দেয়ার প্রতিবাদে ‘গৌরব ৭১’ নামক একটি সংগঠন প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে।