সম্প্রতি বাংলাদেশে তৈরী হয়েছে নতুন এক আলোচনা। আর এই আলোচনার বিষয়বস্তু একটাই আর তা হলো সাংবাদিক আবেদ এবং সরকারের পরিত্যক্ত ৩০০ কোটি টাকা মূল্যের একটি বাড়ি। তথ্য গোপন করে এই বাড়িটি নিজের করে নিতে চেয়েছিলেন পরিচিত সাংবাদিক আবেদ খান। আর এ নিয়ে এখন সবখানে চলছে নানা ধরনের আলোচনা সমলোচনা। এ বার এ নিয়ে একটি বিশেষ লেখনী লিখেছেন ড. আসিফ নজরুল। পাঠকদের উদ্দেশ্যে তার সেই লেখনী তুলে ধরা হলো হুবহু:-
আবেদ খানকে বাড়িটি দিয়ে দেওয়া হোক!
পাকিস্তানিদের ফেলে যাওয়া সম্পত্তি, যেটাকে সরকারিভাবে পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে এরশাদ আমলে সেটা একশ্রেণীর লোক দখলের প্রতিযোগিতায় নামে। আদালত, দালাল, ভুয়া মালিকের উত্তরাধিকারী, ভুয়া ক্রেতা চক্রের যৌথ কারসাজিতে সরকারের অনেক সম্পত্তি বেহাত হয়ে যায়।
ওয়ান ইলেভেনের সরকারের আমলে এই চক্রের সবচেয়ে বড় হোতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তখন বৈশাখী টিভিতে আমি নিজেই রিপোর্ট করেছিলাম এই চক্র নিয়ে।
সাংবাদিক আবেদ খানও ধানমন্ডি ২ নাম্বার রোডের এমন একটি বাড়ির উত্তরাধিকার দাবি করেছিলেন এরশাদ আমলে। এক আদালতে হেরে উচ্চ আদালতে গিয়েছেন, তথ্য গোপন করেছেন হারার। ফলে দুদিন আগে দেওয়া উচ্চ আদালতের রায়ে তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হচ্ছে, আর ওই সম্পত্তি সরকারের থাকবে বলেও আদালত রায় দিয়েছে।
(তিনি ছাড়াও আরো এক ভুয়া মালিক ওই বাড়ির মালিকানা দাবি করেছিলেন। নিম্ন আদালত থেকে পেয়েও গিয়েছিলেন।)
আবেদ খান ভুয়া তথ্য দিয়ে কলাম লেখেন। সম্ভবত মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু নির্ভর একটি কলাম লিখেছিলেন তিনি সমকালে, যার অনেক তথ্যই ছিল ভুয়া। ঘটনাবলি চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক ছিল। তিনি তখন সমকালের সম্পাদক। আমার চাচা কলামিস্ট মুক্তিযোদ্ধা বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী সেগুলো সংশোধনী দিয়ে ওনাকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। (চাচা বেঁচে থাকলে বিস্তারিত বলতে পারতাম, যুদ্ধকালে ওই ঘটনাবলীর সঙ্গে তারা জড়িত ছিলেন)।
আমি সেটা সমকালের নির্বাহী সম্পাদক মুস্তাফিজ শফিকে দিয়ে এসেছিলাম, শফির পরামর্শে। খান সাহেব বেমালুম তা গায়েব করে দিয়েছেন। ছাপাননি এবং এই নিয়ে চাচার সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেননি। ভাবখানা যেন সম্পাদক হলে কেউ ভুল লিখতে পারে না এবং সম্পাদক তার লেখার সংশোধনী দিলে মান কমে যায়। তিনি বিরাট এক হনুরে।
সাংবাদিক হিসেবে তার লেখার মান, নীতি-নৈতিকতা যে ছিল না সেটা অনেক আগে থেকেই স্পষ্ট। বললে অনেকে বিশ্বাস করবে না বলে বলিনি। এখন উচ্চ আদালত রায় দিয়ে প্রমাণ করেছে সেটি। বলতে সমস্যা নেই।
একসময় তিনি সাংবাদিকদের বিএনপি ফোরামের নেতা ছিলেন। এখন চেতনার লোক। সরকার বাহাদুর ইচ্ছা করলে ওই পরিত্যক্ত সম্পত্তি তাকে পুরস্কার হিসেবে দিয়ে দিতে পারেন। কার ঘাড়ে মাথা আছে আপত্তি করবে! সরকারের আনুকূল্যে অনেকেই তো খাচ্ছে, না হয় তিনিও কিছু পেলেন।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই সরকারের পরিত্যক্ত বাড়িটি দখলের আশায় ছিলেন অনেকেই। তবে এর মধ্যে সব থেকে উপরের নামটি হলো এই আবেদ খান। এবার তার সব কিছু ফাঁস হয়ে যাওয়ার পরে তাকে নিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনা। বিশেষ করে সাংবাদিকরা বলছেন আবেদ খানের মত এমন একজন প্রখ্যাত সাংবাদিক কিভাবে এই কাজটি করতে পারে।