Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / National / সহকারী-স্বজনপ্রীতিতে ডুবেছেন পাঁচ মন্ত্রী

সহকারী-স্বজনপ্রীতিতে ডুবেছেন পাঁচ মন্ত্রী

2018 সালের জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে সিলেট বিভাগের পাঁচজন মন্ত্রিসভায় স্থান পান। এই নির্বাচনে একজন হেরে গেলেও বাকি চারজন নির্বাচিত হয়ে সংসদে রয়েছেন। কিন্তু তাদের একজনও মন্ত্রী হতে পারেননি। এ নিয়ে নিজ নিজ এলাকায় চলছে ব্যাপক আলোচনা।

দলীয় নেতাকর্মী ও ভোটারদের পর্যবেক্ষণ-অভিযোগ বলছে, ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি-অনিয়ম ও আশেপাশের মানুষের অপকর্মে মন্ত্রীরা নীরব ছিলেন। এর মধ্যে চার মন্ত্রীর সহকারী মিলে গড়ে তোলেন দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি সিন্ডিকেট। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর নির্দিষ্ট কিছু লোক ছাড়া দলের বেশির ভাগ নেতা-কর্মীর কাছ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নেন। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে দলটির সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বিরোধও রয়েছে। এসব কারণে প্রধানমন্ত্রী তাদের আর আস্থা রাখতে পারেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মান্নানের এপিএস সবকিছু নিয়ন্ত্রণে ছিল
২০০৮ সালে এম এ মান্নান প্রথমবারের মতো সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জ) আসন থেকে এমপি হন। এরপর 2014 সালে তিনি অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান এবং 2018 সালে তাকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। শুরু থেকেই শিবিরের সাবেক নেতা ড. হাসনাত হোসেনকে ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) পদে নিয়োগ দিয়েছেন। এরপর দুই উপজেলার সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ চলে যায় হাসনাতের হাতে। গড়ে তুলেছেন নিজের সিন্ডিকেট।

মন্ত্রী যখন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ব্যস্ত তখন এই হাসনাত স্থানীয় প্রশাসনসহ সবকিছুকে প্রভাবিত করে স্বজনপ্রীতি, সিন্ডিকেট-বাণিজ্য ও বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে দুই উপজেলার সাধারণ মানুষকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করে ভাইস চেয়ারম্যান করা হয় ছোট ভাই নূর হোসেনকে। নির্বাচনী এলাকায় মন্ত্রীর অধিকাংশ কর্মসূচিতে ডানে হাসনাত ও বামে নূর হোসেন অবস্থান নেন। স্থানীয়ভাবে তাদের বলা হয় ‘হাবিল-কাবিল’। মন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে হাসনাত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদও পান।

দলটির নেতা-কর্মীরা বলছেন, সুনামগঞ্জের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন সহজ সরল, হাসনাত সিন্ডিকেটের অপকর্মে সজ্জন মান্নানের সব কিছুই ম্লান হয়ে গেছে।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি বুরহান উদ্দিন দোলন আজকের পত্রিকাকে বলেন, একদিকে মন্ত্রীর লোকজনের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি, অন্যদিকে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগকে দূরে ঠেলে বিএনপি-জামায়াতের প্রতিষ্ঠা। নেতার কানে পৌঁছেছে।এছাড়া বয়সের কারণে তাকে বাদ দেওয়া হতে পারে।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এম এ মান্নান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই-তিন দিন ধরে এমন অনেক কথা শুনছি। আপনি যাদের নাম দিয়েছেন তাদের সম্পর্কে কেউ আমাকে লিখিত বা মৌখিকভাবে এমন কিছু বলেনি। থাকতে পারে, কিন্তু আমি এটা জানি না।

মোমেনের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ
এ কে আব্দুল মোমেন ২০১৮ সালে সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হন। উচ্চ শিক্ষিত, সদালাপী মোমেনকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিছু সময় পর মোমেনের এপিএস হিসেবে নিয়োগ পান শফিউল আলম জুয়েল।

জুয়েল জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি করছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরপর মন্ত্রীর স্ত্রী সেলিনা মোমেন, জুয়েল, জেলা মহিলা সমিতির চেয়ারম্যান হেলেন আহমেদসহ কয়েকজন মিলে সিন্ডিকেট গঠন করেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনে প্রভাব বিস্তার, মোমেন ফাউন্ডেশনের নামে জমি দখল, উন্নয়ন প্রকল্পে ভাগাভাগিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। সেলিনা মোমেন-জুয়েল সিন্ডিকেট মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে নিজেদের আখের গোছাতে থাকে।

সিলেট নগরীর ১৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চন্দন রায় বলেন, মন্ত্রীর স্ত্রী একাধিকবার ক্ষিপ্ত হয়েছেন। এপিএস জুয়েল দুর্ব্যবহার করেছেন। দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া আরও অনেক কিছু নেই। এসব নিশ্চয়ই নেতার কাছে গেছে।

তবে আবদুল মোমেন মনে করেন সব অভিযোগ মিথ্যা। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, “কোনো দুর্নীতি নেই, এগুলো ভুয়া। এগুলো ম্যাডাম (সেলিনা মোমেন) ও জুয়েলের বিরুদ্ধে জল্পনা-কল্পনার অভিযোগ।

ইমরান আহমেদ
সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ টানা সাতবার। 2019 সালে, তিনি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী হন। তার শিক্ষা, উন্নয়নবান্ধব ও সরলতার সুযোগে পাথরের রাজ্য খ্যাত সিলেট-৪ আসনে গড়ে ওঠে অসাধু সিন্ডিকেট। আর ইমরানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম নিয়মিত টিআর কাবিখা ও চোরাকারবারিদের কাছ থেকে শেয়ার নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি ভাগ-বাঁটোয়ারা, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ওকালতি-বাণিজ্যসহ তিন উপজেলায় শাসন করেছেন। ফলে ইমরানের সঙ্গে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়।
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে ইমরান আহমেদকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। এমনকি ছোট বার্তারও জবাব দেননি তিনি।

About Zahid Hasan

Check Also

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সেন্টমার্টিন লিজ দেওয়ার বিষয়ে যা জানালেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি গুজব ছড়িয়েছে যে অন্তর্বর্তী সরকার সেন্টমার্টিন দ্বীপকে লিজ দিচ্ছে। তবে প্রধান …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *