সার্জেন্ট মহুয়ার বাবা অ্যাক্সিডেন্টের ঘটনার পর থেকে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। কারণ যে ছেলেটি গাড়ি চালাচ্ছিল সে একজন বিচারপতি ছেলে। শুধু এইটাই নয় বিচারপতির ছেলে হযওয়াই তার বিরুদ্ধে কোন থানা থেকে মামলা নিচ্ছিল না। সেই ঘটনা থেকেই আশ্বাসের খবর মিলল পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে। পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ ব্যাপারে কথা বলেন।
রাজধানীর গুলশানে গাড়ি চাপায় ট্রাফিক সার্জেন্ট মহুয়া হাজংয়ের বাবা বিজিবির অবসরপ্রাপ্ত সদস্য মনোরঞ্জন হাজং আহতের ঘটনা সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে জানানো হয়েছে। আজ রোববার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, ট্রাফিক সার্জেন্ট মহুয়া হাজংয়ের বাবা মনোরঞ্জন হাজং আহতের ঘটনা সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। ঘটনাটি আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত জানানো সম্ভব হবে।
গত ২ ডিসেম্বর চেয়ারম্যানবাড়ি ইউলুপে মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় গাড়ির ধাক্কায় মারাত্মক আহত হন মনোরঞ্জন। তার ডান পা প্রথমে গোড়ালি পর্যন্ত, পরে সংক্রমণ হওয়ায় হাঁটু পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়েছে।
এ ঘটনায় রাজধানীর বনানী থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে মেয়ে সার্জেন্ট মহুয়ার মামলা নিতে অনিহা দেখায় খোদ পুলিশ। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়, পরে দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনার মধ্যে ঘটনার দুই সপ্তাহ পর গত বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) মামলা নেয় পুলিশ।
ওই সময়ে গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. আসাদুজ্জামান জানান, রাজধানীর বনানী থানায় এ ঘটনায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নূরে আজম মিয়া। তিনি বলেন, ‘ঘটনায় মামলা রুজু হয়েছে। মামলা নম্বর-২৫।’
মামলা নিতে এত সময় লাগার কারণ জানতে চাইলে উপকমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ঘটনার পরই আমরা অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু যাচাই করার প্রয়োজন ছিল। আমরা যাচাই-বাছাই করে মামলা নিয়েছি।’
যাচাই করে কী পাওয়া গেছে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজগুলো বিশ্লেষণ করেছি। মধ্যরাতে মনোরঞ্জন হাজং মোটরসাইকেলে উল্টোপথে এসে চেয়ারম্যানবাড়ি ইউলুপের ওখানে দাঁড়ান। তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় একটি গাড়ি ধাক্কা দেয়। আমরা মামলা নিয়েছে।’
ডিসি আসাদুজ্জামান বলেন, গাড়িটি কে চালাচ্ছিলেন, কীভাবে দুর্ঘটনাটি হলো, তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
জানা গেছে, মনোরঞ্জন আগে থেকেই হার্টের রোগী। এই অবস্থায় এই দুর্ঘটনার ধকল তিনি নিতে পারছেন না। তাকে আইসিইউতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এরপর মামলা করতে একাধিকবার চেষ্টা করেও সফল হননি মনোরঞ্জনের মেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট মহুয়া হাজং।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই দুর্ঘটনার পর প্রাইভেটকারের চালক যুবককে আটক করেও ছেড়ে দেয় পুলিশ।
সেই যুবক এক বিচারপতির ছেলে বলে গণমাধ্যমে এসেছে। তবে তার নাম কী, সেটি প্রকাশ পায়নি।
মহুয়া হাজং তার মামলার আবেদনে সেই যুবকের নাম উল্লেখ করার পর তাকে নামটি কেটে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় থানা থেকে। কিন্তু মহুয়া তাতে রাজি ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত কারও নাম ছাড়াই মামলাটি রুজু করা হয়।
অনেক জল ঘোলার পরে অবশেষে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। তবে আদতেও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা সে ব্যাপারে রয়েছে সন্দেহ। কারণ বিচারপতির ছেলে বলে কথা। বলা হয়েছে খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে তবে কবে থেকে নেওয়া হবে সে ব্যাপারে কিছুই বলা হয়নি। আর যদি পদক্ষেপ নেওয়া হবে তাহলে আসামি হিসেবে বিচারপতির ছেলের নাম কেনইবা নিবে না পুলিশ সেখানেও রয়ে গেছে একটা প্রশ্ন। এখন দেখার বিষয় কেমন ভাবে তদন্ত করা হয় আর দোষী সাজা পায় কিনা।