বাংলাদেশে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি প্রথমবারের মতো চালু হওয়ার পর, এবার অংশগ্রহণকারীরা তাদের বিনিয়োগের লভ্যাংশ পেতে যাচ্ছেন। এ কর্মসূচি দেশের সব স্তরের নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত যেসব বিনিয়োগকারী তাদের অর্থ জমা করেছেন, তারা এবার সেই জমাকৃত অর্থের বিপরীতে মুনাফা বা লভ্যাংশ পাবেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই মুনাফার হার ন্যূনতম ৮ শতাংশ হতে পারে। গ্রাহকরা তাদের অ্যাকাউন্ট চেক করে এই লভ্যাংশ দেখতে পারবেন বলে জানানো হয়েছে।
সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত তিন লাখ ৭২ হাজার ৩৮১ জন বিভিন্ন স্কিমে যোগদান করেছেন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩১ কোটি ১৯ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। পেনশন কর্তৃপক্ষের মতে, এই জমাকৃত টাকার মধ্যে প্রায় ১২৫ কোটি টাকা ইতোমধ্যে ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে। বিনিয়োগ থেকে যে মুনাফা এসেছে, তা চলতি মাসেই গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে জমা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা জানিয়েছেন, প্রথমবারের মতো এ কর্মসূচির বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় চারটি স্কিমে জনগণের অংশগ্রহণ কিছুটা ধীর গতির হলেও কর্মসূচির কার্যক্রম বন্ধ নেই। বোর্ড সভায় কর্মসূচির আওতাধীন বিভিন্ন কার্যক্রম, বিধিমালা এবং অংশগ্রহণ বাড়ানোর কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চারটি প্রধান স্কিমের মধ্যে রয়েছে প্রবাস স্কিম, প্রগতি স্কিম, সুরক্ষা স্কিম এবং সমতা স্কিম। এই স্কিমগুলির মাধ্যমে প্রবাসী, বেসরকারি চাকরিজীবী, স্বকর্মে নিয়োজিত, এবং নিম্ন আয়ের মানুষেরা পেনশনের আওতায় আসছেন।
এ কর্মসূচির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য সরকার থেকে ভর্তুকি প্রদান করা হচ্ছে। যারা মাসিক ৫০০ টাকা জমা করবেন, তাদের জন্য সরকারও আরও ৫০০ টাকা ভর্তুকি দেবে। এছাড়াও, পেনশনের জন্য প্রদত্ত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে এবং এই বিনিয়োগ কর রেয়াতের আওতায় আসবে। এনবিআর থেকে জানানো হয়েছে, মাসিক পেনশন আয়কর মুক্ত থাকবে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বড় সুবিধা।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে একটি পরিবর্তন এসেছে। আগে স্বশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য এই স্কিমে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হলেও, পরবর্তীতে এটি বাতিল করা হয়।
২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনে সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতির সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালে জাতীয় সংসদে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন’ পাস করা হয়। ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে সবার জন্য এই কর্মসূচি উন্মুক্ত করা হয়েছে।
পেনশন কর্মসূচির সুবিধা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট (www.upension.gov.bd) থেকে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড বা ব্যাংকের মাধ্যমে চাঁদা দেওয়ার সুবিধা রয়েছে। এ কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের মানুষের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে এটিকে দেখা হচ্ছে।