বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী এ দেশের সব থেকে বেশি সক্রিয় একটি বাহিনী। দেশের সার্বক্ষণিক আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করতে তারাই মাঠে থাকে সর্বদা। তবে এবার জানা গেলো একটি কষ্টের খবর। দুই মাস ধরে বেতন হচ্ছে না সদ্য যোগ দেওয়া পুলিশ কনস্টেবলদের। বর্তমানে খুবই কষ্টে জীবনযাপন করছেন তারা। বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারছেন না। উল্টো বাড়ি থেকে ধার করে টাকা এনে চলতে হচ্ছে তাদের।
গত দুই মাস ধরে বেতন পাননি এমন পুলিশ কনস্টেবলের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। তারা বলেন, ২০২১ সালে তিন হাজার সদস্যকে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। ২০২২ সালের জুলাই এবং আগস্ট মাসে, তারা ধাপে ধাপে সারা দেশে বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটে যোগদান করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা প্রথম দুই মাসের বেতন পাননি। যদিও কয়েকজন সদস্যের বেতন এসেছে, বেশিরভাগ নিয়োগপ্রাপ্তরা ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত এক টাকাও পাননি।
২০২১ সালে, ৩,০০০ সদস্যকে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) হিসাবে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। ২০২২ সালের জুলাই এবং আগস্ট মাসে, তারা ধাপে ধাপে সারা দেশে বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটে যোগদান করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা প্রথম দুই মাসের বেতন পাননি।কিছু সংখ্যক সদস্যের বেতন ঢুকলেও অক্টোবরের ১৮ তারিখ পর্যন্ত নিয়োগপ্রাপ্ত অধিকাংশই এক টাকাও পাননি পুলিশের চট্টগ্রাম বিভাগে কর্মরত এক কনস্টেবল নাম প্রকাশ না করে জানান, ছয় মাসের ট্রেনিং শেষে তারা প্রায় ৩৭৫ জন চট্টগ্রাম রেঞ্জে যোগ দেন। এখন পর্যন্ত তাদের অনেকেই বেতন পাননি। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে বলা হয়। অ্যাকাউন্ট খুলে তাদের নম্বর দিয়েছি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও দিয়েছি। তবুও এতদিনে বেতন ঢুকেনি। বাড়ি থেকে টাকা এনে চলতে হচ্ছে। কেন বেতন হচ্ছে না—কারও কাছেই সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।
ডিএমপির কূটনৈতিক নিরাপত্তা বিভাগের একজন কনস্টেবল বলেন, আমি আগস্টের মাঝামাঝি যোগদান করি। সে সময় আমি চাহিদা অনুযায়ী সব তথ্য ও নথি জমা দেই। কিন্তু এখন পর্যন্ত বেতন পাইনি। বাড়ি থেকে টাকা আনতে হবে। আশ্বাস দিলেও বেতন পাচ্ছি না। এভাবে চলতে খুব কষ্ট হয়। আমরা ডিএমপি সদর দপ্তরে যোগাযোগ করেছি। তারা বলেন,ধাপে ধাপে সবার হয়ে যাবে। কিন্তু কারওই হয়নি।
পুলিশ সদর দফতরে দায়িত্বরত একজন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে নতুন যোগদানকারী কনস্টেবলদের বেতন দেওয়া হয়নি। নাম প্রকাশ না করে তিনি বলেন, “পেমেন্ট ফিক্সেশনের কারণে বিলম্ব হচ্ছে। একসাথে অনেক নিয়োগ, সবগুলোর ডাটা এন্ট্রিতে সময় লাগে। এ কারণে তাদের বেতনও বিলম্বিত হচ্ছে।
কনস্টেবলরা যোগদানের পর, তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা সহ বিভিন্ন নথি সংগ্রহ করতে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লেগেছিল। সেগুলো আবার বিভাগীয় হিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। যারা বেতন পাননি আশা করি শিগগিরই বেতন পাবেন।
এ নিয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) সদর দফতরের উপ-কমিশনার (ডিসি) আবদুল ওয়ারিশ বলেন, বর্তমানে ইএফটি (ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার) মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের বেতন দেওয়া হচ্ছে। এর জন্য, কিছু ব্যক্তিগত তথ্য ইন্টিগ্রেটেড বাজেটিং অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার (আইবিএএস) এ প্রবেশ করতে হবে। প্রবেশ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে কিছু সময় লাগে। এখানে আমাদের ৩৭৫ জনের মধ্যে প্রায় ২৭০ জন তাদের কাজ শেষ করেছেন। বাকিগুলো চলতি মাসের (অক্টোবর) মধ্যে সমন্বয় করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এজি (অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল) অফিস সরকারি কর্মচারীদের বেতনের বিষয়টি দেখছে উল্লেখ করে আবদুল ওয়ারিশ বলেন, “কনস্টেবলরা যোগদানের পর থেকে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলাসহ বিভিন্ন নথি সংগ্রহ করতে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লেগেছে। তাদের আবার পাঠানো হয়েছে। বিভাগীয় হিসাব নিরীক্ষকের অফিসে।যারা বেতন পাননি আশা করি শিগগিরই পেয়ে যাবেন।
তবে সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, আমরা এজি অফিসে যোগাযোগ করেছি। তারা বলেন, অনেকেই একসঙ্গে যোগ দিয়েছেন। সবার ভেতরে ঢুকতে একটু সময় লাগে। জনবলেরও ঘাটতি রয়েছে। ধীরে ধীরে সবাই পাবে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি, মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. মঞ্জুর রহমান বলেন, আইবিএএস প্লাস সফটওয়্যারের কারণে বেতন দিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আশা করি দ্রুত সমাধান হবে।
২০১৬ সালে, অর্থ মন্ত্রণালয় সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে। এটি ২০১৬ সাল থেকে সরকারি চাকরিতে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের জন্য অনলাইনে বেতন নির্ধারণ বাধ্যতামূলক করেছে। এর মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য তথ্য সম্বলিত একটি সঠিক ডাটাবেস তৈরি করা হচ্ছে। নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো কর্মচারীর বেতন-ভাতা অনলাইন ছাড়া পরিশোধ করা যাবে না।
পুলিশ জানিয়েছে যে নিয়োগপ্রাপ্ত কনস্টেবলদের জাতীয় পরিচয়পত্র, মোবাইল ফোন নম্বর, পে-অর্ডার, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর, শিক্ষাগত শংসাপত্র, যোগদানের চিঠি, স্বাস্থ্য শংসাপত্র ইত্যাদির সফট কপি (পিডিএফ/জেপিইজি ফর্ম্যাট) অনলাইনে আপলোড করতে হবে। ওয়েবসাইটে এই নথিগুলি জমা দেওয়ার পরে, চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয় এবং ইএফটি’র মাধ্যমে অর্থ প্রদান করা হয়।
২০২১ সালে, বাংলাদেশ পুলিশে ৩০০০ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগের জন্য একটি সার্কুলার ছিল। ২৫ অক্টোবর থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। ডিসেম্বরে ৩০০০ প্রার্থীর (পুরুষ ও মহিলা) নিয়োগ চূড়ান্ত হয়। ওই মাসেই তাদের প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়। প্রশিক্ষণের পর, তাদের ধাপে ধাপে জুলাই এবং আগস্ট ২০২২-এ নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, এ দিকে এই বিষয়টি নিয়ে চরম খুব ঝরছে নতুন সব পুলিশ কনস্টেবলদের মধ্যে। এভাবে তারা আর কষ্টকর জীবন যাপন করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন। তবে উপর মহল থেকে জানানো হয়েছে খুব শিগ্রই এই সমস্যার সমাধান করা হবে।