বর্তমান সময়ে বিএনপি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে গদি থেকে নামাতে শক্তি গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দলটি একটি বিষয়কে অবলম্বন হিসেবে নিয়েছে আর সেটা হল ‘আন্দোলন’। ইতিমধ্যে বিএনপি তিনটি বিভাগীয় শহরে গণসম্মেলন করেছে, যেখানে তারা মানুষের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়েছে বলে দাবি করেছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। এদিকে আগামী সম্মেলন ঢাকায় হবে এমনটিই জানিয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীরা, সেই লক্ষ্যে দলীয় নেতাকর্মীদের নানা ধরনের নির্দেশনা দিয়েছে দলটির শীর্ষ নেতারা।
ঢাকা বিভাগীয় মহাসমাবেশে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে ১১টি সাংগঠনিক জেলার বিভিন্ন ইউনিটে কর্মশালা শুরু হয়েছে। ৯টি বিভাগীয় গণসমাবেশ শেষে প্রত্যাশা অনুযায়ী বড় জমায়েত ঘটিয়ে দলটি দেশ-বিদেশে সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শন করতে চায়। সেক্ষেত্রে তিনি সব বাধা উপেক্ষা করে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ করতে চান। আগামী দিনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে চলমান আন্দোলনকে বেগবান করতে এটি একটি নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। বাকি বিভাগীয় গণসমাবেশে বাধা না দিয়ে সরকার নমনীয় হলে বিএনপি হার্ডলাইনে যাবে না বলে জানান তারা। সেক্ষেত্রে ঢাকায় সমাবেশ থেকে দাবি আদায়ে আল্টিমেটাম দেওয়া হতে পারে। তবে সরকার কঠোর হলে বড় কর্মসূচি দেওয়া হবে। ‘রোডমার্চ’ বা ‘লংমার্চ’-এর মতো কর্মসূচি দিয়ে সরকার পতনের জন্য আন্দোলনের এক পর্যায়ে যাবে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, সরকার বাধা দেবে। কিন্তু মানুষ সেই বাধা মানে না। যার প্রমাণ চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনার গণসমাবেশে ভিড়। তবে আমরা কোনো সংঘাত চাই না। রাজধানীতে স্মরণকালের অন্যতম বড় গণসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে করতে চান। সেখান থেকেই আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে।
জানা গেছে, ঢাকার সম্মেলন নিয়ে চিন্তিত বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। তাদের মতে, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও গত শনিবার খুলনায় গণসমাবেশে যে প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে, ঢাকায় সমাবেশে অন্যান্য বিভাগের তুলনায় বেশি বাধার মুখে পড়তে হবে। এ অবস্থায় ভবিষ্যৎ কর্মসূচি কতটা শান্তিপূর্ণ হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। এ অবস্থায় দলের শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে সব নেতাকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে সমাবেশকে সুশৃঙ্খল রাখতে ৫০০ জনের একটি স্বেচ্ছাসেবক দল কাজ করবে। এটি পর্যবেক্ষণের জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সিসি ক্যামেরা ও ড্রোন ব্যবহার করবে।
দলটির একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, অতীতে দেখা গেছে বিএনপি হরতাল ডাকলে ক্ষমতাসীন দল পরিবহন মালিকদের গাড়ি চালাতে বাধ্য করে, সমাবেশ ডাকলে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। সম্প্রতি ময়মনসিংহ ও খুলনার জনসভার আগেও একই চিত্র দেখা গেছে। বাকি বিভাগীয় গণসমাবেশ ও ঢাকার মহাসমাবেশের আগে গণপরিবহন বন্ধ রাখা হতে পারে, বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতা-কর্মীরা পথে বাধার সম্মুখীন হতে পারে, রাজধানীর আবাসিক হোটেলসহ সর্বত্র নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে বলে বিএনপি নেতাদের অভিমত। এসব বিষয় দলের শীর্ষ নেতৃত্বে রয়েছে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, সরকার কঠোর হলে ১০ ডিসেম্বর বড় কর্মসূচি দেবে বিএনপি। দাবিতে কঠোর না হলে আল্টিমেটাম দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে- ঢাকার সাধারণ সভা অন্যান্য বিভাগীয় জনসভার মতোই হবে। তবে সরকারের পদক্ষেপের বিষয়ে যেকোনো সময় যেকোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে। দেশের মানুষকে বাঁচাতে, সার্বভৌম রক্ষায় যে কোনো সময় সরকার উৎখাত আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, তিনটি বিভাগীয় গণসমাবেশ দেখে মনে হচ্ছে, সরকারের মন্ত্রী-এমপির বক্তব্য শুনে তারা ক্ষমতা হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন। এ কারণে ক্ষমতাসীন দল কর্মসূচি পালন বা বিএনপিকে সহিং/”স হওয়ার জন্য উস”/কানি দেওয়ার অজুহাত খুঁজে পেতে পারে। সেই ব্যাপারে বিএনপি সতর্ক ও সজাগ রয়েছে।’
বিএনপির ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বলেন, ‘মানুষ সরকারের প্রতি বিদ্বেষ দেখাতে আন্দোলন করছে। সমাবেশ সফল করতে ওইদিন ঢাকায় ভীড় করবেন বিভাগের সকল স্তরের নেতারা। সরকারকে বাধাগ্রস্ত না করার আহ্বান থাকবে। তারপরেও, যদি এটি ব্লক করা হয়, লক্ষ লক্ষ মানুষ থাকবে যারা এটিকে উপেক্ষা করবে এবং সরকারকে থাম্বস আপ দেখাতে।
জানা গেছে, সমাবেশ সফল করতে ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগরসহ বিভাগের সব সাংগঠনিক জেলায় প্রস্তুতি সভা শুরু করেছেন নেতারা। অন্যান্য গণসমাবেশ সফল করতে দলের পক্ষ থেকে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তা ঢাকায়ও অপরিবর্তিত থাকবে। এসব নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে সমাবেশের আগে সংশ্লিষ্ট শহরে অবস্থান করা। আত্মীয় বা বন্ধুর বাড়িতে বা হোটেলে থাকা। যাদের থাকার জায়গা নেই, নেতাকর্মীদের নিজ নিজ বাড়িতে থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া দূরবর্তী জেলা হলে শুকনো খাবার ও বাড়তি কাপড় নিয়ে আসার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে সমন্বয় করছেন সংশ্লিষ্ট জেলার নেতারা।
গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন বলেন, মহাসমাবেশকে ঘিরে যত বাধা-বিপত্তি থাকুক না কেন, সেদিন পুরো রাজধানী পরিণত হবে সমাবেশে। যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে জনসভা সফল করবেন নেতাকর্মীরা। এ জন্য সাংগঠনিকভাবে যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, তা নেওয়া হবে। হাম”/লা-মা’মলা, হয়রানি-নি’/র্যাত”ন কিছুই আমাদের থামাতে পারবে না।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, জনসমাবেশে জনসমাগম হবে। সব বাধা অতিক্রম করে জনসভায় আসবে। সেদিন ঢাকা শহর অচল হবে। সমাবেশ সফল করতে থানাভিত্তিক ওয়ার্ডসহ সব সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে ২৮ অক্টোবর থেকে প্রস্তুতিমূলক সভা শুরু করব।
মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কামরুজ্জামান রতন বলেন, ‘গণসভায় জনসমাগমের কারণ খালেদা জিয়ার প্রতি অবিচার করে গণবি’/স্ফো”রণ ঘটিয়েছে। আরেকটি কারণ, প্রান্তিক, বিশেষ করে তৃণমূলের সঙ্গে তারিক রহমানের দীর্ঘদিনের কাজ এক ধরনের সংহতি। তাছাড়া জনস্বার্থে বিএনপির কর্মসূচি আরেকটি কারণ। জনগণ এসে দাড়িয়ে দেখছে যে আমরা গণদাবি সম্পৃক্ত করেছি। তাই রাজনৈতিক সহনশীলতা ও কৌশল নিয়ে যত বাধাই আসুক আমরা মোকাবেলা করব।
বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা দাবি করেন আম্লিক সরকারকে ক্ষমতা থেকে হঠাৎ এখন মাত্র সময়ের অপেক্ষা। বিএনপির একাধিক নেতাদের দাবি, এদেশের মানুষ আর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তারা দেশ এবং দেশের মানুষকে বিপাকে ফেলেছে। ক্ষমতায় এসে তারা ক্ষমতা দখল করে বসে থেকে দেশকে দেউলিয়া করে দিয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।