বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অনেক বিশেষজ্ঞ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন, কিন্তু বাস্তবে তার কোনো অস্তিত্ব নেই। সরকারের বিভিন্ন নীতির প্রশংসা করে অনেক ‘বিশেষজ্ঞের’ শত শত নিবন্ধ নানা সময় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। তবে এসব লেখকের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এএফপির তদন্তে অনেক তথ্য উঠে এসেছে। দেখা যাচ্ছে, এই বিশেষজ্ঞ লেখকদের অনেকেরই আসলে অস্তিত্ব নেই। এমনকি তারা নিবন্ধে জাল ছবি ব্যবহার করার কথা জানিয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ‘অস্তিত্বহীন বিশেষজ্ঞদের’ এসব নিবন্ধ ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার অবিরাম প্রচারণার অংশ। সাত শতাধিক নিবন্ধ বিশ্লেষণ করে দেখেছে এএফপি। এসব নিবন্ধের ৬০টির বেশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। নিজ নামে লিখেছেন ৩৫ জন ‘বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষক’। গত বছরই প্রথম এদের বেশির ভাগেরই জীবনে প্রথম লেখা অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে। তাদের নিবন্ধের অনেক বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন ওয়েবসাইটেও আপলোড করা হয়েছে।
একটি এএফপি তদন্তে দেখা গেছে যে এই ৩৫ জন ‘বিশেষজ্ঞ’ লেখকের কেউই সোশ্যাল মিডিয়ায় নেই। তাদের গবেষণা প্রবন্ধ বিশ্বের কোনো স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশিত হয়নি।
ভারতের জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সাথে সন্দেহভাজন লেখকদের একজনের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে এএফপির মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়েছে। জবাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, আমরা আমাদের নথিপত্র পরীক্ষা করে দেখেছি, আমাদের রেকর্ডে এমন কোনো ব্যক্তি নেই। এছাড়াও, তথাকথিত আট লেখক নিবন্ধে তাদের নিজেদের যে ছবি ব্যবহার করেছেন, তা ভুয়া বলে জানিয়েছে এএফপি। এমনকি এএফপির অনুসন্ধানে দেখা গেছে, একই নিবন্ধ ইংরেজি ও বাংলায় ভিন্ন লেখকের নাম ব্যবহার করে প্রকাশ করা হয়েছে।
এই লেখকদের একজনের নাম ডরিন চৌধুরী। লেখকের নামের পাশে প্রকাশিত ডরিন চৌধুরীর ছবি ভুয়া। ছবিটি একজন ভারতীয় অভিনেত্রীর। ডরীন চৌধুরী নিজের পরিচয় দিয়ে বলেছেন যে, তিনি নেদারল্যান্ডসের গ্রোনিংজেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই নামে তাদের কোনো নিবন্ধিত শিক্ষার্থী নেই।
নিবন্ধটি ফুমিকা ইয়ামাদা ব্যাংকক পোস্ট এবং লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্সের একটি ব্লগ পোস্টে লিখেছেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটিতে বাংলাদেশ স্টাডিজের একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়েছেন। এএফপির অনুসন্ধানে জানা গেছে যে, এই নামে কেউ মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নথিভুক্ত ছিল না।