সরকারপ্রধানকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি আপনাকে সম্মান করে, দেশবাসী আপনাকে ভালোবাসে, এবং আপনাকে গর্বের প্রতীক মনে করে। তবে সেই সম্মান রক্ষা করা আপনার দায়িত্ব। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে যদি পতিত স্বৈরাচারের সহযোগীদের রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হয়, তাহলে জনগণ তা মেনে নেবে না। যদি ক্ষমতায় আসার আকাঙ্ক্ষা থাকে, তাহলে নতুন দল গঠন করে জনগণের সামনে এসে নির্বাচন করুন—বিএনপি তাতে স্বাগত জানাবে। কারণ বিএনপি বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী।
গতকাল বিকেলে যশোর টাউন হল ময়দানে জেলা বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন জনগণের জন্য গ্রহণযোগ্য হবে না এবং বিএনপি তা কোনোভাবেই বাস্তবায়িত হতে দেবে না। বিগত ১৬ বছর ধরে বিএনপি গুম, খুন, নির্যাতন উপেক্ষা করেও রাজপথে সক্রিয় ছিল এবং এখনো আন্দোলনের মধ্যেই রয়েছে। যতদিন পর্যন্ত দেশের মানুষের ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হয়, বিএনপি তার অবস্থানে অনড় থাকবে।
তিনি আরও বলেন, জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে বহু মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, ফলে জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেশি। ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নেই। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারেরই।
বিএনপির সংস্কার পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া “ভিশন-৩২” ঘোষণা করেছিলেন এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান “৩১ দফার রূপরেখা” দিয়েছেন। এসব পরিকল্পনা তখনই বাস্তবায়ন সম্ভব, যখন দেশে একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। এজন্য দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, দেশের পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। স্বৈরাচারী শাসক হয়তো ক্ষমতা থেকে সরে গেছে, কিন্তু রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে তাদের অনুসারীরা এখনও সক্রিয়। ফ্যাসিবাদ মুক্ত একটি রাষ্ট্র গঠনে গণতান্ত্রিক সরকার প্রয়োজন। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, জনগণের নিরাপত্তাহীনতা বৃদ্ধি এবং প্রশাসনের ব্যর্থতা দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। এই অবস্থায় দেশ চলতে পারে না। তাই বিএনপি জাতীয় নির্বাচন চায় এবং তা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছে। কোনো কোনো মহল জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের দাবিতে জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে দমন করতে চাইছে, কিন্তু দেশবাসী সে ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবে না।
বিশেষ অতিথি হিসেবে খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, জনগণের ভোটাধিকার রক্ষার জন্য বিএনপির নেতাকর্মীরা আন্দোলন চালিয়ে যাবে যতদিন প্রয়োজন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন যশোর জেলা বিএনপি আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম। আরও বক্তৃতা করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অমলেন্দু দাস অপু, মফিকুল হাসান তৃপ্তি, টিএস আইয়ুব, এড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, দেলোয়ার হোসেন খোকন, যশোর চেম্বারের সভাপতি মিজানুর রহমান খান, সাবেক মেয়র মারুফুল ইসলাম মারুফ, কেশবপুরের আবুল হোসেন আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা ফিরোজা বুলবুল কলি, সাবিরা নাজমুল মুন্নি, যশোর সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি, মণিরামপুরের এড. শহীদ ইকবাল, অভয়নগরের ফারাজী মতিয়ার রহমান, চৌগাছার এম এ সালাম, কেশবপুরের আব্দুস সালাম, বাঘারপাড়া বিএনপির সভাপতি তানিয়া রহমান, চৌগাছার সেলিম রেজা প্রমুখ।