বাজেটে দেশের নিম্নবৃত্ত ও মধ্যবিত্তরা উপেক্ষিত বলে বিভিন্ন মহল মন্তব্য করা হয়েছে। বিশ্বব্যপি ছড়িয়ে পড়া রোগের কারনে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেনীর মানুষের উপার্জন কমেছে। যারা কারনে তাদের জীবনা কষ্টাসাধ্য হয়েছে পড়েছে অথচ তাদের জন্য তেমন কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বাজেটে। বাজেটে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে সরকার সুযোগ দিয়েছে। অর্থপাচারকারীদের সম্পর্কে যা বললেন বিএনপি সাংসদ রুমিন রুমিন ফারহানা।
বিদেশে পাচার করা টাকা ফেরত দেওয়ার নামে দায়মুক্তি দেওয়া অনৈতিক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা। এই ব্যবস্থা টাকা ফেরত আনার জন্য নয়, পাচারকারীদের নিরাপত্তা দিতে। এটি মানি লন্ডারিং আইনেরও পরিপন্থী। বাংলাদেশের ঋণের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। প্রস্তাবিত বাজেটে কুইক রেন্টালের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
রোববার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। রুমিন ফারহানা প্রস্তাবিত বাজেটকে শ্রীলঙ্কার পথে বাংলাদেশকে আরও একধাপ এগিয়ে নেওয়ার পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেন। বর্তমান মূল্যস্ফীতি সব ক্ষেত্রেই বেড়েছে। সরকার সংকটের তীব্রতা স্বীকার করে না। দেশটির অর্থনীতি বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে।
রুমিন ফারহানা বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ বৈধকরণ ও দেশে ফেরত আনার নামে ১৫ শতাংশ হারে কর আরোপ করে তা প্রশ্নাতীতভাবে দেখানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছে। টাকা ফেরত আনার কোনো কারণ নেই। কারণ যারা বিদেশে টাকা পাচার করে তারা টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য পাচার করে না। এমনটি করা হয়েছে যাতে কোনো দেশ কখনো এ ধরনের অর্থ পাচারকারীদের ধরতে শুরু করলে তারা নিরাপদে টাকা দেশে ফিরিয়ে আনতে পারে।
বাংলাদেশ খুব সতর্ক না হলে শ্রীলঙ্কার মতো অবস্থা হতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন,শ্রীলংকার পর্যালোচনায় যখন বাংলাদেশের কিছু অর্থনীতিবিদ তাদের স্বার্থের চিন্তায় বা ভয়ে বলেছেন বাংলাদেশের শ্রীলংকার পরিস্থিতি হবার কোনো সম্ভাবনাই নাই। তবে কিছু অর্থনীতিবিদ আমাদের কাছে স্পষ্ট করেছেন যে বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই ঝুঁকি রয়েছে। বাংলাদেশ খুব সতর্ক না হলে শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি অচিরেই ঘটতে পারে।
তিনি বলেন, ছয়টি চ্যালেঞ্জের মধ্যে প্রথমটিতে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং দেশীয় বিনিয়োগ বাড়াতে। এই খাতে যেটা চিন্তা করেছেন তাতে অর্থমন্ত্রীর অর্থনীতি বোঝাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।
রুমিন ফারহানা বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে কিছু পণ্যের দাম বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদেশে সরকার সংশ্লিষ্ট কিছু শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীর কারণে দাম আকাশচুম্বী হয়েছে। তবে বাজেটে এসব নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়নি। যখন মূল্যস্ফীতি মাত্র ৬ শতাংশের উপরে, অর্থনীতিবিদরা বলছেন যে এটি দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। যে সরকার সমস্যার তীব্রতা বোঝে না, সেই সরকার কীভাবে সমস্যার সমাধান করবে জানি না।
তিনি বলেন, গত কয়েক মাসে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে। নির্বাচন এলেই এদেশে টাকা পাচার বাড়ে, এটি গ্লোবাল ফাইনান্স ইনটিগরিটির রিপোর্ট। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে অর্থপাচার দ্বিগুণ হয় এবং একই বছরে এক লাখ কোটি টাকা পাচার হয়। ২০১৫ সাল থেকে সরকার জাতিসংঘে আমদানি রফতানির তথ্য দেওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে। পাচারের এই তথ্য গোপন করার চেষ্টা প্রমাণ করে সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা এই পাচারের সঙ্গে জড়িত। অনেকেই এই টাকায় হির্স্যা পায়।
রুমিন ফারহানা বলেন, গত বাজেটের মতো এবারও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে। পায়রা বন্দর করার দরকার ছিল না। রামু থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেনের প্রয়োজন ছিল না। আখের গোছায় বহু ভবিষ্যৎ প্রজন্মের রাজকীয় জীবন নিশ্চিত করার পর দেশ শ্রীলংকা হলে তাতে কি বা আসে যায় ক্ষমতাসীনদের। তাই এ বাজেট জনগণের স্বার্থবিরোধী।
প্রসঙ্গত, বর্তমান সরকার নিজেদের স্বার্থে নিয়ে ব্যস্ত জনগনের জন্য চিন্তা করার তাদের প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেন রুমিন ফারহানা। তিনি আরও বলেন, সরকার অর্থপাচারকারীদের উৎসাহি করার জন্য বাজেটে পাচারকৃত অর্থ আনার সুযোগ দিয়েছে।