সন্তান সম্ভাবা এক নারীর প্রসব বেদনা উঠার কারনে স্থানীয় এক হাসপাতালে নিয়ে যান পরিবারের স্বজনেরা। কিন্তু সরকারী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরেই ঘটে বিপত্ত্বি। সেখানে কর্তব্যরত হাসপাতালের কর্মচারীরা সেই অন্তঃসত্বা নারীকে কোন চিকিৎসা না দিয়ে তাকে অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হন। অন্তঃস্ত্বা নারীর এমন কঠিন অবস্থায় তাৎক্ষনিক কোন চিকিৎসা না পেয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীর স্বজনেরা।
সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়ে ব্যার্থ হয়ে অবশেষে রাস্তায় সন্তান প্রসব করেছেন বরগুনার এক নারী। মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বরগুনা শহরের পশু হাসপাতাল সংলগ্ন সড়কে। গর্ভবতী মহিলার নাম রিমা বেগম (১৯)। তিনি বরগুনার রিকশাচালক আব্রাহামের স্ত্রী। এ ঘটনায় নবজাতক শঙ্কামুক্ত হলেও গর্ভবতীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে প্রসূতি রীমাকে বরগুনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সন্ধ্যায় তার প্রসব শুরু হয়। প্রসব যন্ত্রণায় রাত পর্যন্ত হাসপাতালে কান্নাকাটি করছিলেন। কিছুক্ষণ পর বরগুনা সদর হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক-নার্সরা তাকে বরগুনা পৌরসভার বটতলা এলাকার আলরাজি প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যেতে বলেন। স্বজনরা সঙ্গে সঙ্গে রীমাকে আল রাজি ক্লিনিকে নিয়ে যান।
আলরাজি ক্লিনিকে কোনো চিকিৎসক না থাকায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাকে পশু হাসপাতাল রোডের শেফা ক্লিনিকে নিয়ে যেতে বলে। কিন্তু শেফা ক্লিনিকের ডাক্তারও ছিলেন না। পরে স্থানীয় এক যুবলীগ নেতার সহায়তায় রীমাকে অন্য ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাস্তায় নামানো হয়। এই রাস্তায় তিনি একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। পরে মা ও নবজাতককে উদ্ধার করে শেফা ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে দ্রুত বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শী যুবলীগ নেতা আবু হানিফ দোলন জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আলরাজি ক্লিনিকের সামনে দিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলাম। এ সময় ক্লিনিকের ভেতরে দুই নারীর চিৎকার দেখে তাদের কাছে গিয়ে পুরো বিষয়টি জানতে পারি। আমি প্রসূতি বিশেষজ্ঞকে শেফা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাই। দুর্ভাগ্যবশত সেখানে কোনো ডাক্তারও ছিল না। পরে ডক্টরস কেয়ার নামে আরেকটি ক্লিনিকে ফোন করে জানতে পারি সেখানে একজন চিকিৎসক আছেন। এরপর ওই নারীকে ডক্টর কেয়ার ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার পথেই সন্তান প্রসব করান।
রীমা বেগমের শাশুড়ি জানান, রীমা প্রসব বেদনায় ভুগছিলেন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে জানায় তার অবস্থা গুরুতর। হাসপাতালে তার চিকিৎসা হবে না। তারা অন্য ক্লিনিকে নিয়ে যেতে বলছে। তাই রীমাকে নিয়ে আলরাজি ক্লিনিকে গেলাম। কিন্তু ডাক্তার ছিল না। আমরা অসহায়ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। একদিকে আমরা গরিব, অন্যদিকে রীমার অবস্থা খুবই খারাপ। শেফা হাসপাতালে গেলেও ডাক্তার পাননি। পরে অন্য হাসপাতালে নেওয়ার পথে রীমা সন্তান প্রসব করেন। শেফা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জান্নাতুল আলম লিমা বলেন, ডিউটি শেষ করে বাসায় গেলাম। কিছুক্ষণ পর খবর পেলাম পশু হাসপাতাল রোডে এক নারী সন্তান প্রসব করেছেন। তাকে উদ্ধার করে এখানে আনা হয়। তখনই আমি সেই মহিলাকে দেখতে দৌড়ে গেলাম। প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় তার অবস্থা আশঙ্কাজনক, তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেছি। তবে নবজাতক সুস্থ আছে। বরগুনা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক রীমা বেগমকে কেন বিনা চিকিৎসায় ক্লিনিকে পাঠানো হয়েছে জানতে চাইলে ডা. সোহরাব হোসেনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। তার ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তাই তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, এক অন্তঃসত্বা নারীকে সন্তান প্রসবের মুহুর্তে কোন চিকিৎসা না দিয়ে স্থানীয় সদর হাসপাতাল অন্য হাসপাতালে রেফার করে। তারপর উক্ত নারীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে নিয়ে স্থানীয় কিছু বেসরকারী হাসপাতালে ছুটা ছুটি করেও কোন উপায় হয়নি। পরে স্থানীয় পশু হাসপাতাল সংলঘ্ন সড়কে সেই নারী সন্তান প্রসব করেন। ঘটনাসস্থ থেকে এক স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা বিষয়টি লক্ষ্য করে তাদের সেখান থেকে উদ্ধার করে সুচিকিৎসার ব্যাবস্থা করেন।