আসন্ন সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মহলে। কারন বিগত দুটি নির্বাচন ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে রাজনৈতিক দলের মধ্যে। নির্বাচন নিয়ে বিরোধী দল বিএনপির দাবি নিরপেক্ষ সরকার কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সংবিধানের বাহিরে যেতে রাজি নয়। তবে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের কথা বলা হয়েছে। এদিকে আন্দোলনের পথেই হাটবে বলে দলের শীর্ষ নেতার জানিয়েছে। ২০১৪ ও ১৮ সালের ভোট নিয়ে অতিমাত্রায় বিতর্ক আছে বলে যে মন্তব্য করে যা বললেন (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বাড়তি সমালোচনা ও বিতর্ক হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সমালোচনাও তীক্ষ্ণ ও তিক্ত।
আমরা অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করে সমালোচনা ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকতে চাই।
রোববার (৩১ জুলাই) নির্বাচন ভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, আমরা প্রায় চার-পাঁচ পর্বে সংলাপের আয়োজন করেছি। সুধীজনরা তাদের মতামত তুলে ধরেন। অর্থশক্তি, নির্বাচনে পেশিশক্তির প্রভাব, নির্বাচনে সহিংসতা, ভোট কারচুপি, কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার চুরি ও বাক্স ভর্তি, ভোটকেন্দ্রে বাধা, আমলাতন্ত্রের পক্ষপাতিত্ব, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকা, নিরপেক্ষতা নিয়ে মতামত। ইসি ইত্যাদি উত্থাপন করা হয়েছে। আমরা সমস্ত মন্তব্য পর্যালোচনা করেছি এবং পরে জানিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করব। এই সংলাপ বিশেষ গুরুত্ব পাবে। আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে বড় দল। তাদের উচ্চ প্রত্যাশাও রয়েছে। টানা তিনবার সরকারে আছেন। তাই সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগকে সরকারি দল বা ক্ষমতাসীন দল বলে। কিন্তু সংবিধানে সরকারি দল বা ক্ষমতাসীন দলের কোনো উল্লেখ নেই। আমি যদি ভুল না বলি, আওয়ামী লীগ অন্য দশটি দলের মতো একটি রাজনৈতিক দল। সরকার একটি সাংবিধানিক রাষ্ট্রীয় সংগঠন। এটি অবস্থানের একটি দ্বি-মাত্রিকতা। কমিশনের ইচ্ছা, সদিচ্ছা এবং অনুভূতি; সরকার এবং আপনার দলের সবাইকে অবহিত করে বাধিত করবেন।
সিইসি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, নিরপেক্ষ এবং ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সংবিধান অনুযায়ী আইন ও বিধিবিধান মেনে ইসি তার দায়িত্ব পালন করবে। আমরা আশাকরি, সবাই নির্বচন কমিশনকে (ইসি) সহায়তা করবে এবং দলগুলোর দায়িত্বশীল আাচরণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সফলতা কামনা করছি।
তিনি বলেন, সংলাপে কিছু বিষয় উঠে এসেছে। একদিনে নির্বাচন করা সহজ হবে না বলে মনে করছে অনেক দল। ভারতের মতো আলাদা দিনে হওয়া উচিত। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপ্রতুলতাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে তারা। অনেকেই সেনা মোতায়েনের আহ্বান জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, সেনাবাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা অনেক বেশি। আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। আরেকটি সমস্যা যা সংকটে থাকবে তা হল ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)। ইভিএমের পক্ষে ও বিপক্ষে সমর্থন পেয়েছি। বেশিরভাগ দলই ইভিএমে বিশ্বাস করে না। এর ভিতরে কিছু একটা আছে। আমরা ইভিএম নিয়ে আমাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেছি। ফলাফল ৭১ শতাংশ পর্যন্ত ভোট কাস্ট হয়েছে। কিন্তু অনেককেই আস্থায় আনতে পারছি না। তারা মনে করছেন না কিছু একটা আছে। ইভিএম নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব স্বাধীনভাবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেয়। তাদের মধ্যে ছিলেন- উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, প্রিজাইডিং বোর্ডের সদস্য মতিয়া চৌধুরী, কর্নেল ফারুক খান, ডাঃ আব্দুর রাজ্জাক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ।
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষে সিইসি ছাড়াও চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, বিগত দুটি নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মহলে বিতর্ক রয়েছে বলে মন্তব্য করেন সিইসি। তিনি বলেন, সকল দলসহ সবার সহযোগিত ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু সম্ভব নয়।