সরকারি জায়গা হলো সরকারের সম্পত্তি। সরকারের জায়াগা জোর করে দখল করার ইখতিয়ার কারোরি নাই। বেআইনবিভাবে সরকারের জায়গা দখল করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। সম্প্রতি তেমনি একটি ঘটনা ঘটেছে গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর খোরদকোমরপুর ইউনিয়নের ফরাজী পাড়া গ্রামে। সরকারি জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে বাড়ি-ঘর এবং লাগানো হয়েছে গাছপালা।
গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর খোরদকোমরপুর ইউনিয়নের ফরাজী পাড়া গ্রামে রেকর্ড সরকারি রাস্তা দখল করে ঘরবাড়ি ও গাছ লাগানোর অভিযোগ উঠেছে। রাস্তা দখল, ঘরবাড়ি নির্মাণ ও গাছ লাগানোর কারণে রাস্তা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ফলে চলাচলে দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ।
এ সড়ক দিয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার যাতায়াত করে। বর্ষাকাল তো দূরের কথা, শুষ্ক মৌসুমে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত করতে অনেক অসুবিধা হয়। যাতায়াতের দুর্ভোগে অভিভাবকরা তাদের ছোট ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানো নিয়ে চিন্তিত।
ওই গ্রামের আজাদুল ইসলাম, ইসরাফিল, শহিদুল ফরাজী, মাতলুবর ফরাজী, এনামুল হক সরকার, নেহারুল সরকার ও আব্দুল লতিফ সরকারের বিরুদ্ধে সরকারি রাস্তা দখল করে গাছ লাগানো ও ঘরবাড়ি নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে। ১নং ওয়ার্ডের খোরদকোমরপুরের মোসলেম উদ্দিন ফরাজীর বাড়ি থেকে মৃত হেলাল উদ্দিন সরকারের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা দখল করে রেখেছে তারা।
এলাকার বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে রাস্তার গাছপালা ও বাড়িঘর অপসারণের জন্য ওই বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেন অ্যাডভোকেট মো. মাহাবুব আলম সরকার।
অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার ১১নং খোরদাকোমরপুর ইউনিয়নের ১ম ওয়ার্ডের খোরদাকোমরপুর ফরাজী পাড়া গ্রামে ২০০৪ সালে রাস্তার দুই পাশের রাস্তা সংস্কার করে ইউনিয়ন পরিষদ। এ সময় সীমানা নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে উভয় পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে স্থানীয় সার্ভেয়ারের সহায়তায় নকশা অনুযায়ী মাপ যোগ করে সীমানা নির্ধারণ করা হয়। খুঁটি স্থাপনের জন্য রাস্তার পশ্চিম পাশের জমির মালিকরা রাস্তার পাশে লাগানো সব ধরনের গাছ কেটে ফেলেন। কিন্তু পূর্ব পাশের জমির মালিকরা তাদের প্রভাব দেখিয়ে পরিমাপ অমান্য করে সীমানা খুঁটি থেকে কয়েক ফুট দূরে বসতবাড়ি ও ফলজ গাছ লাগায়। ফলে রাস্তা আগের চেয়ে সরু হয়ে গেছে। যা নিয়ে প্রায়ই দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। বর্তমানে এমন জরাজীর্ণ সড়কে চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়ছে। শুষ্ক মৌসুমে বর্ষাকাল তো দূরের কথা, রিকশা-ভ্যানে, সাইকেল বা পায়ে হেঁটে যাতায়াত করাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) জনাব তাইফুর রহমান জানান, এ ব্যাপারে মাহবুর রহমান নামে এক ব্যক্তি জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেছেন। ওই অভিযোগের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বছরের ৩০ মার্চ উভয় পক্ষকে ঘটনাস্থলে তলব করি। পরে একজন সার্ভেয়ার মোসলেম উদ্দিন ফরাজীর বাড়ির সামনে থেকে মৃত হেলাল উদ্দিন সরকারের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা মেপে দেন। সরকারি রাস্তার সীমানার মধ্যে গাছ ও ঘরবাড়ি মেপে দেখুন।
তিনি আরও বলেন, উভয় পক্ষকে ১৮ মে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে হাজির হয়ে শুনানিতে উপস্থিত থাকার জন্য সম্পূর্ণ আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সরকারি সড়কে গাছ লাগানো আছে বলে জানা গেছে। সব গাছ পালা নিলামের মাধ্যমে বিক্রির জন্য প্রক্রিয়া করা হচ্ছে। যাদের বাড়ি রাস্তায় পড়ে আছে তারা নিজেরাই অপসারণ না করলে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী উচ্ছেদ মামলায় তাদের অপসারণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, সাধারণ জনগনকে এই বিষয়ে খুবই সতর্ক থাকা উচিত। সরকারে কোনো জিনিস অবৈধভাবে ভোগ দখল করা যায় না। একমাত্র সরকারেরই অধিকার রয়েছে। এই ধরণের ঘটনায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে নিতে পারে যেকোনো ধরণের ব্যবস্থা।