বাংলাদেশে গেলো বেশ কিছু বছর ধরেই রাজনীতি নিয়ে চলছে নানা ধরনের জল্পনা কল্পনা। বিশেষ করে সরকার দলের সাথে বিরোধী দল বিএনপির সংলাপ নিয়ে হয়েছে অনেক নাটকীয়তা। তবে শেষ পর্যন্ত বসা হয়নি সংলাপে। আর এ নিয়ে এখনো চলছে নানা ধরনের আলোচনা। এবার এই আলোচনা নিয়ে একটি বিশেষ লেখনী লিখেছেন মাহবুব মোর্শেদ। পাঠকদের উদ্দেশ্যে তার সেই লেখনী তুলে ধরা হলো হুবহু:-
মনে হচ্ছে, সংলাপ হবে না।
বিএনপি হয়তো চিন্তা করছিল সংলাপ হবে। অর্থনৈতিক সংকট, বাজারের টালমাটাল পরিস্থিতি, ডলার সংকট, জ্বালানি সমস্যা ইত্যাদি বিবেচনায় সরকার কিছুটা নমনীয় হতে পারে বলে তাদের ধারণা ছিল। বিএনপি’র সমাবেশগুলোতে ব্যাপক লোকসমাগম তাদের এই ধারণায় ইতিবাচক দোলা দিয়েছিল। কিন্তু ডিসেম্বরের প্রাক্কালে জানা গেল, গণতন্ত্রমনা বিদেশি বন্ধুদের চাপ সত্ত্বেও সরকার সংলাপের ব্যাপারে তেমন আগ্রহী নয়।
পরিস্থিতি যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে, তাতে সংলাপের অর্থ হলো নির্বাচন কোন ধরনের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে হবে তা নির্ধারণ করা।
বিএনপি বারবার বলছে, তারা আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। ফলে, নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের দাবি তাদের মূল দাবিতে পরিণত হয়েছে।
অন্যদিকে, সরকার যেভাবে গত দুইটি নির্বাচন করেছে তাতে তৃতীয় একটি নির্বাচন একই পদ্ধতিতে করার শক্তি তাদের নেই বলেই মনে হয়।
এ অবস্থায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সংলাপের মূল উদ্দেশ্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছাড়া আর কী হতে পারে?
কিন্তু সংলাপ ডেকে সরকার বিএনপির সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে আলোচনা করবে এটা এখনো অতিকল্পনার পর্যায়ে রয়ে গেছে।
সেই আলোচনার ভিত্তিতে সংসদে বিল উপস্থাপন করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ব্যবস্থা করা হবে, এটা প্রায় রূপকথার গল্পের মত অবিশ্বাস্য।
সেই সরকারের অধীনে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছেড়ে দেবে, এটাও প্রায় অসম্ভব একটি চিন্তা।
ফলে সংলাপ, আলাপ-আলোচনা, সংসদ, শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্থান্তর ইত্যাদি চিন্তা কার্যত বিএনপির আন্দোলন ও সরকারের মেয়াদ উভয়কেই দীর্ঘায়িত করে যাবে।
বিএনপি গত ১৪ বছর ধরে যা ভাবছে তা কিছুতেই হওয়ার নয়। প্রতিটি নির্বাচনের আগে তারা ভাবে, একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিন মাসের মেয়াদের পর তারা ক্ষমতা পাবে। অর্থাৎ, তিন মাসের গ্যাপ দিয়ে সরাসরি আওয়ামী লীগের পরেই তারা ক্ষমতায় বসবে। বিএনপি কিছুতেই অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদ কামনা করে না। সরকার খুব ভালোভাবেই তাদের এই মানসিকতা সম্পর্কে জানে। এবং এটাকে কাজে লাগিয়ে সংলাপের ভান করে, ভয় ও প্রলোভন দেখিয়ে, খানিকটা বিশ্বাস জাগিয়ে তারা বিএনপিকে গত দুইবার নির্বাচনের প্রাকমুহূর্ত পর্যন্ত জোরদারভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দাবি তুলতে দেয়নি।
এবার বিএনপি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দাবি জোরদারভাবে তুলছে বটে, কিন্তু সে সরকারের মেয়াদ যাতে তিন মাসের বেশি না হয় সে ব্যাপারে তারা বেশ সতর্ক বলেই মনে হয়। সরকারও চায় বিএনপি’র এই চিন্তাটা বহাল থাকুক। এক বা দুই বছর মেয়াদী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভয় কাজে লাগিয়ে বিএনপিকে কাবু করে আবার দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে আনার ব্যাপারে সরকারের তৎপরতা এখন জোরদার হবে।
এতে, বিএনপি ধীরে ধীরে নরম হয়েও যেতে পারে।
সেক্ষেত্রে ২০২৩ সালের শেষে বা ২০২৪ সালের প্রথমে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। তাতে অবশ্যই আওয়ামী লীগ জয় নিশ্চিত করবে।
সরাসরি আওয়ামী লীগের হাত থেকে ক্ষমতা নেওয়ার চিন্তা বিএনপিকে আরো এক মেয়াদে ক্ষমতার বাইরে রাখলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
প্রসঙ্গত, এ দিকে একটা সময়ে নিস্তেজ থাকলেও আবারো ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বিএনপি। তারা নতুন করে দেশে শুরু করেছে রাজনৈতিক প্রচারণা। বিশেষ করে ইতিমধ্যে তারা দেশের প্রায় সবকয়টি বিভাগে সমাবেশ করেছে। এবং আগামী ডিসেম্বর এ ঢাকায় সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।