২০২৪ সালের প্রথম দিনে জাপানে যে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছিল, তাতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এ পর্যন্ত মোট ৩০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধারে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের উদ্ধারকর্মীরা।
জাপান মেটিওরোলজিক্যাল এজেন্সি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে যে ১ জানুয়ারি সোমবার জাপানে মোট ১৫৫টি ভূমিকম্প হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭.৬। এই ভয়াবহ ভূমিকম্পে দেশের বিভিন্ন ভবন ধসে পড়েছে, সড়ক ও রেলপথ বিধ্বস্ত হয়েছে এবং হাজার হাজার ঘরবাড়ি বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে।
জাপান মেটিওরোলজিক্যাল এজেন্সি এবং ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজেএস) অনুসারে, জাপানে সারাদিনে প্রতি কয়েক মিনিটে মৃদু ভূমিকম্প হয়। যাইহোক, স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যে ৩০টি ভূমিকম্প হয়েছিল, সেগুলো ছিল মাঝারি থেকে বড় মাত্রার। এই পর্বের সবচেয়ে ছোট ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল 4.3 এবং সবচেয়ে বড়টির 7.6 মাত্রা ছিল।
এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল দেশের মূল ভূখণ্ড হোনশু দ্বীপের পশ্চিম প্রশাসনিক অঞ্চল নোটো অঞ্চলের ইশিকাওয়া জেলা। ভূমিকম্পটি জাপানে সুনামিরও সূত্রপাত করেছিল এবং জলোচ্ছ্বাস থেকে বাঁচতে নিচু উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দাদের তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছিল।
জাপানি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুনামির ঢেউ দেশের পশ্চিম উপকূলে সর্বোচ্চ ছিল এবং জোয়ারে বেশ কিছু বাড়ি ও গাড়ি ভেসে গেছে। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ইশিকাওয়া জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
ভূমিকম্পের পর, দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বিভাগের কর্মীদের পাশাপাশি হাজার হাজার সেনাসদস্য ও কর্মকর্তা, আইন প্রয়োগকারী এবং বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন। তারা গণমাধ্যমকে জানান, ভূমিকম্পে রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় উদ্ধার অভিযানে কাঙ্খিত গতি আনা সম্ভব হচ্ছে না, তারপরও উদ্ধার বাহিনী সর্বোচ্চ গতিতে কাজ করছে।
জাপানি টেলিভিশন চ্যানেল এনএইচকে জানিয়েছে যে ভূমিকম্পের পর থেকে রাজধানী টোকিও এবং দেশের অন্যান্য অংশের সাথে নোটো প্রশাসনিক অঞ্চলের মধ্যে রেল, সড়ক, সমুদ্র এবং বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এনএইচকে আরও জানিয়েছে যে সোমবার 500 জনেরও বেশি লোককে ইশিকাওয়ার প্রধান বিমানবন্দরের বাইরে গাড়িতে রাত কাটাতে বাধ্য করা হয়েছিল।
এই ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণে মঙ্গলবার সকালে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। ওই বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও অনেক মানুষ আটকে আছে। ভূমিকম্পে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উদ্ধার তৎপরতা ত্বরান্বিত করতে হবে। তবে আমাদের উদ্ধারকর্মীরা সময় নিয়ে কাজ করছেন।