সম্পর্কের নতুন অধ্যায়: পাকিস্তানের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন ড. ইউনূস

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি ও ভারতে নির্বাসনের পর পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান শেখ হাসিনা। এরপর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উষ্ণতা বাড়তে শুরু করে।

সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইসলামাবাদ সফরের জন্য পাকিস্তানের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। যদিও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বা বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি।

পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার জানিয়েছেন, ড. ইউনূস পারস্পরিক সম্মত তারিখে ইসলামাবাদ ভ্রমণের পরিকল্পনা করেছেন। একইসঙ্গে আগামী মাসে ইসহাক দার নিজে বাংলাদেশ সফর করবেন বলে জানান। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা ভারতপন্থি সরকারের পতনের পর দুই দেশের মধ্যে উষ্ণ সম্পর্ককে আরো জোরালোভাবে উপস্থাপন করছে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১২ সালের পর এই প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করবেন। সর্বশেষ ২০১২ সালে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার উন্নয়নশীল আট মুসলিম দেশের জোট ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনের আমন্ত্রণ জানাতে ঢাকা সফর করেছিলেন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে দুই দেশের সম্পর্কে টানাপড়েন চলছিল। বিশেষত শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখায় পাকিস্তানের একাধিক সহযোগিতার প্রস্তাব উপেক্ষিত হয়। তবে ক্ষমতার পরিবর্তনের পর বর্তমান পরিস্থিতি দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতির সম্ভাবনাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।


বাংলাদেশ আমাদের হারিয়ে যাওয়া ভাই: পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইশাক দার বাংলাদেশকে “হারিয়ে যাওয়া ভাই” হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং সব ধরনের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।

ইশাক দার বলেন, পাকিস্তানের কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটেছে এবং দেশটি এখন অর্থনৈতিক কূটনীতি অনুসরণ করছে। তিনি ঢাকা সফরের পরিকল্পনার কথা জানান এবং বাংলাদেশকে সহযোগিতার মূল অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে গাজায় চলমান সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন ইশাক দার। একইসঙ্গে কাশ্মির ইস্যুতে আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে পাকিস্তানের অবস্থান আরও জোরালোভাবে তুলে ধরার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক দীর্ঘদিন শীতল ছিল। বিশেষত, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে এ সম্পর্ক আরও অবনতির দিকে যায়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়ে।

তবে, ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে পাকিস্তান বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে একটি পণ্যবাহী জাহাজ সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করা। এটি ১৯৭১ সালের পর প্রথমবারের মতো দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সমুদ্র সংযোগ স্থাপন। এই ঘটনাকে উভয় দেশের জন্য “ঐতিহাসিক” বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সম্পর্কের এ নতুন অধ্যায় দুই দেশের পারস্পরিক উন্নয়ন ও সহযোগিতার পথে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।