ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয় হওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে এলাকায় গড়ে তুলেছিলেন ত্রাসের রাজত্ব। মাত্র ১০ বছরের মধ্যে তার সম্পদ বেড়েছে ৫৪ গুণ। বর্তমানে তিনি পলাতক। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে।
সম্পদ ও দুর্নীতির বিশাল নেটওয়ার্ক
নিক্সনের সম্পত্তির তালিকা অত্যন্ত বিস্তৃত। তার নিজ নামে এবং পরিবারের সদস্যদের নামে ঢাকার পূর্বাচল, বনানী, গুলশানসহ বিভিন্ন এলাকায় প্লট ও ফ্ল্যাট রয়েছে। শুধু তাই নয়, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডায় তার বাড়ি রয়েছে। ফরিদপুরের ভাঙ্গায় তার বিশাল বাগানবাড়ি এবং চিড়িয়াখানা রয়েছে। এছাড়া, তিনি হাজার বিঘার জমির মালিক, যার একটি অংশ ‘আয়মান আইল্যান্ড’ নামে পরিচিত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে তার এই সম্পদ সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। দুদক ইতোমধ্যে তার সম্পদের খোঁজে বাংলাদেশ ব্যাংক, ৯১টি ব্যাংক, রাজউক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নথি সংগ্রহ করেছে।
ক্ষমতার অপব্যবহার
২০১৪ সালে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর নিক্সন এলাকার প্রভাবশালী নেতাদের ভয়ভীতি ও টাকার মাধ্যমে দলে ভিড়িয়ে নিজের আধিপত্য বিস্তার করেন। স্থানীয় বিভিন্ন নির্বাচনে নিজের সমর্থিত প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে হেলমেট বাহিনীর মাধ্যমে ভোট কারচুপির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
স্থানীয়দের ওপর অত্যাচার
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, নিক্সন ও তার অনুসারীরা ভিন্নমতের লোকজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করেছেন। যারা তার বিরোধিতা করেছেন, তাদের অনেককে বাংলোয় আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন করা হতো।
মামলা ও নিষেধাজ্ঞা
দুর্নীতির অভিযোগে গত ২৩ অক্টোবর আদালত নিক্সন এবং তার স্ত্রী তারিন হোসেনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। ফরিদপুর জেলা বিএনপি নেতা কিবরিয়া স্বপন বলেন, “নিক্সন ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের প্রতীক। তার অত্যাচারে ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসনের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল।”
১০ বছরে সম্পত্তি ৫৪ গুণ বৃদ্ধি
২০১৪ সালের নির্বাচনে তার হলফনামা অনুযায়ী কৃষিজমি ছিল মাত্র ৩৮ শতাংশ। ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, তার জমির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪২ শতাংশ। ঢাকায় বনানী ও গুলশানের ফ্ল্যাট, বিশাল জমি ও বিদেশে সম্পদ অর্জনের তথ্য তার সম্পদের বিস্ময়কর বৃদ্ধির প্রমাণ।
নিক্সনের এমন দুর্নীতির অবসান ঘটাতে দুদকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে সাধারণ মানুষ।