রাজধানী ঢাকার পল্লবী এলাকা হতে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে, কলেজে পড়ুয়া তিনজন ছাত্রী বাসা হতে চলে যাওয়ার পর তারা কক্সবাজার হয়ে সমূদ্রপথে জাপান যাওয়ার জন্য পরিকল্পনা নিয়েছিল! বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় তারা মাত্রাতিরিক্ত আ’/স’/ক্ত ছিলেন এবং এই তিন বান্ধবী তাদের শিক্ষা এবং পারিবারিক শৃঙ্খলাবোধের প্রতি বির’ক্ত ছিল। তারা তাদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নানা ধরনের ভিডিও দেখার পর জাপানে যাওয়ার কথা চিন্তা করেন। মাস দুয়েক আগে, তার বন্ধু তরিকুলের সাথে দিয়াবাড়ি বেড়াতে যান তিন বান্ধবী সেই সময়, তাদের সাথে দেখা হয় হাফসা চৌধুরী নামে এক মহিলার। তার সাথে কথা বলেন তারা এবং সিদ্ধান্ত অনেকটা পাকা করে নেয়। হাফসাই তাদেরকে জাপান নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কক্সবাজার যেতে বলে। তিনি তাদের একটি মাইক্রোবাসে করে সেখানে নিয়ে যান। তবে, কক্সবাজারের হোটেলে থাকার সময় হাফসার সহযোগীদের ছ’দ্মবেশে দুই যুবক তাদের কাছ থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে নেয়।
প্র’তা’/রণা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে তাঁরা আবার ঢাকায় ফিরে আসেন। গতকাল বুধবার উদ্ধারের পর এমনই দাবি করেছেন তিন কলেজছাত্রী। সকালে ঢাকার আব্দুল্লাহপুরে বাস থেকে নামার পরই তিন কলেজছাত্রীকে উদ্ধার করে হে’ফাজতে নেন র্যাব-৪-এর সদস্যরা। এরপর দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে জানিয়ে র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, প্ররো’চনাকারী হাফসা চৌধুরী ও তাঁর সহযোগী চার যুবককে শনাক্ত করা যায়নি। শিক্ষার্থীদের কিছু কথায়ও গরমিল আছে। তবে তাঁরা স্বেচ্ছায়ই কক্সবাজার গিয়ে অবস্থান করেছেন বলে নিশ্চিত হয়েছেন র্যাব কর্মকর্তারা।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকালে পল্লবীর তিন শিক্ষার্থী কলেজ ড্রেস পরে এবং ব্যাগ নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন। স্বজনরা জানায়, ওই তিন ছাত্রী বের হওয়ার সময় টাকা, সোনার গয়না এবং নিজেদের সার্টিফিকেট নিয়ে গেছেন। প্রথমে পল্লবী থা’/নায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। এরপর মা’মলা করে স্বজনরা। তিন তরুণীর বন্ধু-বান্ধবীসহ তরিকুল্লাহ (১৯), রকিবুল্লাহ (২০), জিনিয়া ওরফে টিকটক জিনিয়া রোজ (১৮) ও শরফুদ্দিন আহম্মেদ অয়নকে (১৮) গ্রে’/প্তা’/র করে পু’/লি’/শ। তাঁরা বর্তমানে জে’/লহা’জতে আছেন।
গতকাল র্যাব-৪-এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘তারা (ছাত্রী) নিজেরাই বাসা থেকে পরিকল্পনা করে বের হয়। হাফসা নামের এক নারীর কথা বলছে। সে জাপান যাওয়ার অবাস্তব পথ দেখায়। জাপানে উচ্চশিক্ষার প্র’/লো/ভন দেখায়। মেয়েরা প্র’/তা’রণার শি’/কা’র হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আমরা ছায়া তদন্ত করে কক্সবাজার চলে যাই। শেষে তারা আবার ফিরে আসে। এর সঙ্গে আর কোনো বিষয় আছে কি না তা খ’তিয়ে দেখা হচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘তারা তিনজনই সুস্থ আছে। আইনগত প্রক্রিয়ায় তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, তিন ছাত্রী বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিভিন্ন অপসংস্কৃতিতে আ’/স’/ক্ত হয়ে পড়েন। দিন দিন লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। পরিবার তাঁদের পড়াশোনার জন্য ও ধর্মীয় বিধি-বিধান মেনে চলার জন্য চা’প দিত। এতে তাঁরা উল্টো পরিবারের প্রতি বির’ক্ত হয়ে পড়েন। তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেন, তাঁরা উচ্চাভিলাষী জীবনযাপন পছন্দ করতেন। দীর্ঘদিন বাসায় আবদ্ধ থাকার সময় তাঁরা ভিডিও দেখে জাপানি সংস্কৃতির প্রতি আ’/স’/ক্ত হয়ে পড়েন। বেশি বেশি জাপানি সিনেমা-ধারাবাহিক, টিকটক ভিডিও, সাংস্কৃতিক প্রগ্রাম দেখে দেখে জাপানি ভাষা কিছুটা আয়ত্ত করেন। তাঁরা দেশ ছেড়ে স্বাধীন জীবনযাপন ও উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে জাপান যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। দুই মাস আগে তিন বান্ধবী তাঁদের বন্ধু তরিকুলের সঙ্গে দিয়াবাড়ী এলাকায় ঘুরতে গেলে হাফসা চৌধুরী নামের এক তরুণীর সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর ফে’সবুকে যোগাযোগে হাফসা তাঁদের জাপানে যেতে সহায়তা করবেন বলে জানান।
তিনিই তিনজনকে কক্সবাজার হয়ে নৌপথে জাপান যাওয়ার নির্দেশনা দেন। কথামতো তিনজন বাড়ি থেকে বেরিয়ে রিকশায় গাবতলী যান। সেখানে তাঁরা নিজেদের ই-মেইল, ফে’সবুক আইডি এবং ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ধ্বং’/স করেন। পরে তাঁরা নৌকাযোগে নদী পার হয়ে আমিনবাজার এলাকায় পৌঁছলে হাফসার দুই সহযোগী একটি কালো রঙের নোয়াহ মাইক্রোবাসে করে তাঁদের অজ্ঞাত জায়গায় নামিয়ে দেয়। সেখান থেকে তিনজন সিএনজিচালিত আটোরিকশায় কমলাপুর রেলস্টেশনে গেলেও চট্টগ্রামগামী কোনো ট্রেন পাননি। সেখান থেকে তিনজন বাসে কুমিল্লার ময়নামতী পৌঁছেন। তাঁরা নিজেদের চুল কে’টে ফেলে পশ্চিমা বেশভূষা ধারণ করেন। ময়নামতী ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে তাঁরা কেডস, পোশাক ও একটি মোবাইল ফোন কেনেন। সেখান থেকে আবার বাসে চেপে চট্টগ্রাম সিনেমা প্লেস বাসস্ট্যান্ডে যান। সেখানে আরো দুটি মোবাইল ফোন কিনে আরেকটি বাসে করে কক্সবাজার যান। তাঁরা ১ থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত কক্সবাজার কলাতলীতে একটি হোটেলে অবস্থান করে সিমের পরিবর্তে ওয়াইফাই সংযোগ ব্যবহার করেন।
গত ২রা অক্টোবর, যখন তারা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকা ঘুরতে বের হয় সেই সময়, আসিফ ও শফিক নাম বলা দুই জন যুবক হাফসার নাম বলেন তাদের নিকট এবং বলেন যে সে আমাদের পাঠিয়েছে। সেই সময় ঔ দুই যুবক তাদের নিকটে থাকা সকল ধরনের স্বর্ণালংকার এবং বেশ কিছু পরিমান টাকা নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। তারা এরপর ভ’/য় পেয়ে যান এবং ফিরে যান হোটেলে। এ সময় তারা হোটেলের আশেপাশে র্যাবের উপস্থিতি বুঝতে পারে।
র্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হাফসা নামের ঐ নারীর ফে’সবুক ও ই-মেইল আইডি ঐ ৩ শিক্ষার্থী আর বের করতে পারেনি। তাছাড়া নোয়াহ গাড়িতে যে দুটি ছেলে তাদের সাথে ছিল তাদের এবং কক্সবাজারে স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে নেওয়া ঐ দুইজন যুবকের পরিচয় পাওয়া যায়নি। বিষয়টি তদন্তাধীন আছে।