বর্তমানে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক অবস্থা দিনে দিনে খারাপের দিকে অতিবাহিত হচ্ছে। এমত অবস্থায় বাংলাদেশ সরকার ভারতের সহায়তা চেয়েছে বলে এক সংবাদ সূত্রে জানা যায়। ওই সংবাদমাধ্যমটি প্রকাশ করে জ্বালানি তেলের সংকটের কারণে এবার ভারতে থেকে তেল আমদানি করতে চায় বাংলাদেশ। তবে শুধু যে জ্বালানি তেলের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈঠক করছে এমন নয়। তিনটি বিশেষ কারণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে বৈঠক করতে চলেছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানা গেছে চারদিনের সফরে ৫ সেপ্টেম্বর ভারত যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সফরকে সফল করতে দুই দেশের সরকারই কাজ করছে।
সফরের আগে ১২ বছর পর যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক হয়। পররাষ্ট্র, জ্বালানি, স্বরাষ্ট্র ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় তাদের বৈঠক করেছে। এই সফরে সব বৈঠকেরই প্রতিফলন আশা করা হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই এক ডজনেরও বেশি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে তাদের মধ্যে কাকে স্বাক্ষর করা হবে তা নিশ্চিত হতে আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে সামস বলেন, যতটা সম্ভব প্রস্তুতিমূলক বৈঠক হয়েছে। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছি।
সফল সফরে কাজ চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে দুই সরকারের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। আমরা একটি ভালো সফরের ব্যাপারে আশাবাদী।
রাজনৈতিক গুরুত্ব
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নতুন গতি পায়। দুই দেশ প্রায় সব ক্ষেত্রে একে অপরকে সহযোগিতা করে চলেছে। দুই দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে বোঝাপড়া খুবই ভালো। তবে সম্প্রতি চীনের প্রতি বাংলাদেশের মনোযোগ বাড়ছে, এমন আলোচনা ভারত সরকারের বাইরেও বিভিন্ন মহলে চলছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট এবং তা হলো ঢাকা অন্য কোনো দেশের প্ররোচনায় প্রতিবেশীর ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করবে না। এই সফরে বাংলাদেশ হয়তো সেই বার্তাই পুনর্ব্যক্ত করতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাশফি বিনতে সামস বলেন, “বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের গভীরতা ও পরিধি অনেক বেশি। এখন আমাদের সম্পর্ককে লালন করতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক ভূগোল, ইতিহাস ও সংস্কৃতির দিক থেকে এতটাই ঘনিষ্ঠ যে অন্য কোনো দেশের পক্ষে সে স্থান দখল করা সম্ভব নয়।
বাণিজ্য
ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি অনেক গুণ বেড়েছে এবং বর্তমানে প্রায় $200 মিলিয়ন। একই সঙ্গে ভারত থেকে আমদানি বাড়লেও বেশির ভাগ পণ্যই শিল্পের কাঁচামাল বা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। এছাড়া ভারত থেকেও বাংলাদেশে বিনিয়োগ আসছে, যা খুবই ইতিবাচকভাবে দেখা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মাশফি বিনতে সামস বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে অনেক সমস্যার সমাধান করেছি। এছাড়াও যে কোনো গতিশীল সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন সমস্যা তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হল সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে আন্তরিক হওয়া এবং তা হল উভয়ের মধ্যে। দুই দেশের সরকার।
পানি একটি সম্পদ
গত সপ্তাহে দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইতোমধ্যে সাতটি নদীর পানি প্রবাহের তথ্য শেয়ার করা হয়েছে। আরও আটটি নতুন নদীর তথ্য ভাগাভাগি নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। এই সফরে গঙ্গার পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার, কুশিয়ারা নদীর পানি উত্তোলনসহ আরও কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাশফি বিনতে সামস বলেন, “গঙ্গা চুক্তিটি 1996 সালে 30 বছরের জন্য স্বাক্ষরিত হয়েছিল এবং এটি 2026 সালে শেষ হবে। আমরা যে পানি পাই তার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য আমাদের তাগিদ রয়েছে।”
এছাড়া বাংলাদেশ অববাহিকাভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনাও চায় এবং এ বিষয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি।