বিএনপি থেকে কুমিল্লার সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার পর তিনি তার দলের রাজনীতিতে বেশ বিপাকে পড়েছেন। এদিকে কয়েকদিন আগে বিএনপি’র ধারাবাহিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল কুমিল্লায়। এই সমাবেশের মাধ্যমে সাক্কুর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে এমনটাই আশা করেছিলেন তার সমর্থক নেতাকর্মীরা। তবে নেতাকর্মীদের সেই আশা আর পূরণ হলো না। সমাবেশ শেষ হওয়ার পরে এখন কুমিল্লার আনাচে-কানাচে আলোচনার প্রধান বিন্দুতে রয়েছেন মনিরুল হক সাক্কু।
কুমিল্লা সম্মেলন সফল করতে নিরলস পরিশ্রম করেছেন বিএনপির সাবেক এই নেতা। ব্যাপক শোডাউন, দৌড়ঝাঁপ, গণসংযোগ, বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, দলের কাছে ক্ষমা চাওয়া, কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ, দলের নেতাকর্মীদের আশ্রয় ও খাবার দেওয়া। সেই সঙ্গে সমাবেশের কিছু খরচও বহন করেছেন সাক্কু।
এসবের ফলাফল কি শূন্য? সাক্কুর কি আর দলে ফেরা হবে না? হাইকমান্ড কি তার কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট নয়? কুমিল্লায় বিএনপির নেতাকর্মীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক সচেতন মহলও করছেন এমন নানা প্রশ্ন।
এদিকে কুসিক নির্বাচনে দুই মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সারের গণসংযোগের আগে থেকেই নগরজুড়ে আলোচনা শুরু হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘সবুজ সংকেত’ পেয়ে তারা সমাবেশের মঞ্চে উঠবেন বলে আশা করেছিলেন কর্মী-সমর্থকরা। নেতাদেরও একই ধারণা ছিল। শেষ পর্যন্ত কাঙ্খিত সবুজ বাতি জ্বলেনি এই দুই নেতার পক্ষে। তাই বহিষ্কৃত দুই নেতা তাদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মাঠে রয়েছেন।
সমাবেশের দিন মঞ্চে ছিলেন না সাক্কু। অবশ্য মঞ্চে উঠতে খুব একটা আগ্রহী নন সাক্কু। এর আগে কুমিল্লায় বিএনপির সমাবেশেও তিনি মঞ্চে অবস্থান নিতে আগ্রহী ছিলেন না।
সাক্কুকে দলে ফেরার সবুজ সংকেত না দেওয়ায় কিছুটা হতাশ তার সমর্থকরা। কিন্তু সাক্কু হার মানতে রাজি নয়।
জানা যায়, কুমিল্লায় দক্ষিণ জেলা ও মহানগর বিএনপির হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন এবং সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর মধ্যে গ্রুপিং বিরোধ রয়েছে। বিএনপির মূলধারার নেতৃত্ব দিচ্ছেন হাজী ইয়াছিন। আর সাক্কু একটা গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছে। গত কুসিক নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দেওয়ায় সাক্কুকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। সাক্কুর দুর্গের ব্যাপক পতন ঘটে।
তাছাড়া সাক্কুর সেকেন্ড ইন কমান্ড ইউসুফ মোল্লা টিপু মহানগর বিএনপির সদস্য সচিবের পদ পেয়ে মূলধারার সঙ্গে যুক্ত হন। ফলে দলীয় রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়েন সাক্কু। এর আগে তিনি সদ্য বিলুপ্ত দক্ষিণ জেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
গত কুসিক নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মেয়র নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।
দলে ফেরার জন্য, সাক্কু বিভাগীয় সমাবেশের চার দিন আগে অনুষ্ঠানস্থলে অবস্থান করেন। তিনি সস্ত্রীক যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।
কুমিল্লা টাউন হল মাঠে সমাবেশস্থলে বসে নেতাকর্মীদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজও করেন সাক্কু দম্পতি।
এ সময় সাক্কু ও আফরোজা জেসমিন টিকলি শ্রমিকদের সামনে একে অপরের মুখে খাবার তুলে দেন। এমনই একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
দলে ফেরার বিষয় নিয়ে মনিরুল হক সাক্কু অনেকটা আশার সুরে বলেন, দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আমি এই দলকে কখনোই ছাড়বো না। সারা জীবন বিএনপি’র নিবেদিত কর্মী হয়ে থাকবো। আমি দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। তাই এ দল থেকে সরে যাওয়ার কোন মানসিকতা আমার মধ্যে কাজ করে না। এখন আর কোন উপায় নেই অন্য কোথাও যাওয়ার। এখন আমি আর কোথায় যাব?”