গেল বেশ কিছু দিন আগে থেকে দেশে শুরু হয়েছে নানা ধরনের অস্থিরতা। বিশেষ করে বাংলাদেশে বিরোধী দলের সমাবেশ নিয়ে হচ্ছে নানা ধরনের আলোচনা সমালোচনা আর সহিংসতা। আর এর মধ্যে ওতপ্রোতভাবে নাম জড়িয়ে আছে পুলিশের। এবার এ নিয়ে কথা বলেছে আমেরিকান স্টেট ডিপার্টমেন্ট। পাঠকদের উদ্দেশ্যে মুশফিকুল ফজল আনসারীর দেয়া ভিডিও ও স্ট্যাটাস তুলে ধরা হলো পাঠকদের উদ্দেশ্যে হুবহু:-
মুশফিক, পিনাকীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার নিন্দায় স্টেট ডিপার্টমেন্ট সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত এবং বিরোধিদলের কর্মীদের হয়রানী ও গ্রেফতার বন্ধের আহবান যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সহিংস পরিস্থিতি এবং বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের ধরপাকড়ের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
১০ ডিসেম্বর অনুষ্টিতব্য বিএনপির ঢাকা সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের ব্যাপক ধরপাকড়ের নিন্দা জানিয়ে দেশটি বলেছে, “আমরা পুলিশের হয়রানি নিয়ে উদ্বিগ্ন, তারা যেভাবে বিরোধী নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক ।”
মঙ্গলবার দীর্ঘ বিরতির পর স্টেট ডিপার্টমেন্টে অনুষ্ঠিত নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র নেড প্রাইস বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে এভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরেন।
ব্রিফ্রিংয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি নির্বাসিত লেখক, মানবাধিকার কর্মী ডা. পিনাকী ভট্টাচার্য এবং সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর বিরুদ্ধে পুলিশ দিয়ে সাজানো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ডিজিটাল সিকিউরিট মামলার প্রসঙ্গও আলোচনায় আসে।
নেড প্রাইস এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে উদ্দেশ্য করা বলেন, ”মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে অপরাধে রুপান্তরিত করা যাবেনা। এটা কখনো ভীতি ও হুমকি প্রদর্শনের উপলক্ষ হতে পারেনা। আমরা আপনার এবং আপনার এক সহকর্মী ডা. পিনাকী ভট্টচার্য ও মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে তথাকথিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিষয়টি জানতে পেরেছি।”
ব্রিফ্রিংয়ে মুশফিক জানতে চান, ” যুক্তরাষ্ট্র গণমাধ্যম, মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে বারবার তাগাদা দিয়ে যাচ্ছে। আমার প্রশ্ন বাংলাদেশ ইস্যুতে। আমি এখানকার ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন করি। আর এতেই বিপত্তি।
সম্প্রতি সরকার আমার বিরুদ্ধেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেছে। মামলা করলেও মুক্ত সাংবাদিকতার পথে থেকে আমি সরে যাবোনা। বর্তমান সরকার সভা-সমাবেশ এবং রাজনৈতিক অধিকারের ওপর খড়গ হস্ত হয়ে উঠেছে। দেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি আহুত ঢাকায় আগামী ১০ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশকে সামনে রেখে সরকার পুলিশকে দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মী, এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যসহ এ কয়দিনে প্রায় ৩ হাজার ৮৫০ জনকে আটক করেছে। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন। আর অতি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের দক্ষিন ও মধ্যএশিয়া বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের এক কর্মকর্তা বাংলাদেশ সফর করেছেন। ”
জবাবে স্টেট ডিপার্টমেন্ট মুখপাত্র বলেন, “আপনি যেবিষয়টি শুরুতে উল্লেখ করেছেন সে প্রসঙ্গেই বলি। আপনি, আপনার এক সহকর্মীতিনি বলেন, ”মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কখনোই অপরাধ হিসাবে গন্য হতে পারেনা। এর জন্য ভীতি প্রদর্শন বা হুমকি দেয়া যাবেনা। বিষয়টি নিয়ে আমরা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেছি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত পরিস্কার। যেটা নিয়ে আমাদের মানবাধিকার রিপোর্টেও উল্লেখ করেছি।”
পিনাকী ভট্টাচার্য এবং মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে তথাকথিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে।”বিরোধীদলের ওপর ধরপাকড় প্রসঙ্গে নেড প্রাইস বলেন, ”আমরা বাংলাদেশ সরকারকে আহবান জানাবো মুক্তমত, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মৌলিক অধিকারকে সুরক্ষা এবং সম্মান জানাতে।”
পুলিশের গ্রেফতার প্রসঙ্গ টেনে স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই প্রধান মুখপাত্র বলেন, “আমরা পুলিশের হয়রানি নিয়ে উদ্বিগ্ন, তারা যেভাবে বিরোধী নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করছে তা অত্যন্ত উদ্বেগের।”
গ্রেফতার এবং হয়রানির নিরপেক্ষ তদন্ত করার আহবান জানিয়ে নেড প্রাইস বলেন, “আমরা বাংলাদেশের সবপক্ষকে আহবান জানাবো তারা যেনো আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকেন। একিসঙ্গে সহিংসতা, হয়রানি এবং ভীতি প্রদর্শন যেনো না করা হয়। বাংলাদেশ সরকারকে বলবো সবপক্ষই যাতে কোনো ধরনের হয়রানি এবং ভীতি ছাড়াই তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। এছাড়া বিরোধিকর্মীদের প্রতি নির্যাতন, সহিংসতা এবং ভীতি প্রদর্শনের ঘটনাগুলোর বিশ্বাসযোগ্য নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিত করতে সরকারকে আহবান জানাই। “
প্রসঙ্গত, আগামী ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এ দিনে বাংলাদেশে হতে চলছে বড় ধরনের কিছু একটা। কারন রাজধানী ঢাকাতে বেশ বড় একটি জমায়েত করতে যাচ্ছে বিএনপি। আর এই সমাবেশই এখন হয়ে উঠেছে দেশের টক অব দ্যা টাউন।