বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে এখন বিএনপি বড় একটি ইমপ্যাক্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেক বছর পরে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা সারা দেশে করে যাচ্ছে বিভাগীয় সমাবেশ। মূলত নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক মাঠ ও নেতাকর্মীদের ‘শক্তিশালী’ রাখতেই বিএনপির এই জনসভা। কিন্তু গণপরিবহন ধর্মঘটের কারণে সমাবেশকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দলের কৌশল আশানুরূপ জড়ো হতে পারছে না বলে অভিযোগ দলটির। তাই আসন্ন জনসভায় আরও জনসমাগম করতে ‘গোপন’ কৌশল অবলম্বন করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দল, প্রশাসন ও গণপরিবহন রাজপথে নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের জন্য ‘গোপন’ কৌশল নিচ্ছে। তবে গোপনীয়তার স্বার্থে দলের কেউই এই কৌশল নিয়ে কথা বলতে রাজি নন। তবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সামনে বিএনপির আরও বেশ কয়েকটি সমাবেশ রয়েছে। এসব বিভাগীয় সমাবেশে দূর-দূরান্তের জেলা থেকে বেশি নেতাকর্মী আনার চেয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় মহানগর ও আশপাশের জেলার তৃণমূল নেতাকর্মীদের উপস্থিতির ওপর জোর দিচ্ছে দলটি।
এ ছাড়া গণপরিবহন ধর্মঘটের আগেই সমাবেশে উপস্থিত হতে বেশির ভাগ নেতাকর্মীদের কয়েক দিন আগেই আত্মীয়, বন্ধুদের বাসা এবং মেসে থাকার পরামর্শ দিচ্ছে দলটির হাইকমান্ড।
বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকারের বাধা সত্ত্বেও এরই মধ্যে চারটি বিভাগীয় সমাবেশ সফল হয়েছে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের দৃঢ় সংকল্প ও সাহসিকতায় উজ্জীবিত দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের এমন মনোবল নিয়ে আগামী দিনে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার কৌশলে হাঁটছে বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু গণমাধ্যমকে বলেন, বিএনপির গণসমাবেশে বাধা দিয়ে সরকার লাভের চেয়ে বেশি লোকসান করছে। দেশবাসী ও গণমাধ্যমের মনোযোগও বেড়েছে সমাবেশের দিকে। তাই ভবিষ্যৎ সমাবেশে আরও বেশি মানুষকে আকৃষ্ট করতে নানা কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের কোনো হস্তক্ষেপ চলবে না। এই সরকারকে যেতে হবে।
সম্প্রতি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, সরকার বিএনপির গণসমাবেশ বানচাল করতে নানা ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। মানুষ হজের জন্য হেঁটে মক্কায় যেত। প্রয়োজনে আমাদের নেতাকর্মীরা পায়ে হেঁটে সমাবেশে যোগ দেবেন।
এদিকে আগামী ৫ নভেম্বরের বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশ সফল করতে দলটি ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে।বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির বলেছেন, সমাবেশকে কোনো বাধাই ঠেকাতে পারবে না। মানুষ রাস্তায় নেমেছে। তাদের প্রস্তুতিও তাই।
তিনি বলেন, সমাবেশ সফল করতে দিনরাত একাকার করে পথসভা, লিফলেট বিতরণ, কর্মিসভা, প্রস্তুতি সভা চলছে।
বিএনপির অভিযোগ, বরিশালে গণসমাবেশের কারণে ইতোমধ্যে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা নেতাকর্মীরা যাতে কোনো আবাসিক হোটেলে উঠতে না পারে সেজন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যত বাধাই আসুক না কেন, মানুষের প্রবাহ থামাতে পারে না।
উল্লেখ্য, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার দ্বারা নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা মূলত এই কয়েকটি গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয়কে বাস্তবায়ন করতেই বিএনপি এখন দেশের বিভাগীয় জেলাগুলোতে সমাবেশ করেছে। জানা গেছে ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুর বিভাগে গণসমাবেশ করেছে তারা। এ ছাড়াও সামনে আরও পাঁচটি গণসমাবেশ ও ঢাকায় মহাসমাবেশ কর্মসূচি রয়েছে দলটির। এর মধ্যে আগামী ৫ নভেম্বর বরিশাল, ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী ও ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় এ কর্মসূচি রয়েছে।