প্রচারণার প্রথম দিনে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছোট ভাই মাহবুবুজ্জামান আহমেদ খোলাখুলিভাবে ভোটারদের কাছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য ভোট চাইছেন। এমনকি স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী সমাবেশে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর সমালোচনাও করেন তিনি। সমাজকল্যাণমন্ত্রীর ছোট ভাই লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।
মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) রাতে কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা উত্তর বাংলা কলেজ মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন তিনি। সেখানে লালমনিরহাট-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সিরাজুল হক (ঈগল মার্কা) ভোট চাইলেন।
মন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে মাহবুবুজ্জামান আহমেদ বলেন, গত মাসে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে দুটি রিকশা দেওয়া হয়েছে। যার একটা দিয়েছেন আপনার (মন্ত্রী) বাড়ির পাহারাদার জমিরকে আর একটি দিলেন আপনার ছেলের পাকোয়ানী (বাবুর্চি) ইদ্রীসকে। আর গরিব লোক ছিল না? ৫০ কোটি, একশত কোটি টাকার চেক দিয়েছেন গরিব অসহায় ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসায়। সেই চেক কে পেলেন? আমিনগঞ্জের বজলুর প্রফেসর আর আদিতমারীর রাজ্জাক মাস্টার পান গরিব ক্যান্সার রোগীর চেক।
মাহাবুবুজ্জামান বলেন, গরিব মানুষের ঘরবাড়ি পুড়ে গেলে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে টিন দেওয়া হয়। সেই টিন পায় আমার আপনার (মন্ত্রী) জ্যেঠাতো ভাই নজরুল মাস্টার আর কেচু মাস্টার। এরা গরিব অসহায়?
কালীগঞ্জের রুদেশ্বরে একটি দক্ষতা উন্নয়ন অফিস থাকবে। এজন্য তিনি (মন্ত্রী) গরিব কৃষকদের কাছ থেকে ৪/৫ লাখে জমি কিনেছেন। ওই জমির রেজিস্ট্রি তার (মন্ত্রী) ভাগ্নে, চাচাতো ভাই হেলাল, মোস্তফা ফারুকের নামে। কিনলো ৫ লাখে লিখে নিলো ৩০ লাখ টাকায়। সবাই মিলে ৩০ লাখ করে ভাগ করে নিলেন। সরকারের টাকা গরিব কৃষকরা পেলে দুঃখ ছিল না। মানুষের সঙ্গে প্রতারণা না করতেও মন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান মাহাবুবুজ্জামান।
মাহবুবুজ্জামান আহমেদ আরও বলেন, আসুন রহস্য ফাঁস করে দেই। আপনি (মন্ত্রী) নৌকা নিয়েছেন না! নৌকায় ভিড়তে পারবেন না। কারণ ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আপনি (মন্ত্রী) নৌকা পুড়িয়েছেন। নৌকা আপনাকে মান করবে না। আমার ব্যারিস্টার ছেলের বিয়েতে দাওয়াত করেছি। তিনি (মন্ত্রী) সোজা বলেছেন, আমি যাব না কাউকে যেতেও দেব না। ছেলের বিয়েতে কাউকে আসতে দেননি। উল্টো বিয়ের দিন বিদ্যুৎও বন্ধ করে দিয়েছেন। আপনি (মন্ত্রী) কেন এমন হলেন? ছেলে আর বউ মিলে আপনার মাথা নষ্ট করে দিয়েছে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মাহবুবুজ্জামান আহমেদ বলেন, মন্ত্রী ভোটমারী থেকে মহিষখোচা পর্যন্ত তিস্তা নদীতে বাঁধ দিতে চাননি। তার একটাই জবাব, আপনি (মন্ত্রী) বাঁধ দেননি, আমরা আপনাকে বাদ (বয়কট) দিলাম।
পরে মাহবুবুজ্জামান আহমেদ আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল হককে মঞ্চে দেখিয়ে তার ঈগল প্রতীকে ভোট দিয়ে কর্মী হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানান।
এ সময় লালমনিরহাট ২ আসনের আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সিরাজুল হক, আদিতমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস, ভাদাই ইউপি চেয়ারম্যান কৃষ্ণকান্ত রায় বিদুর, কমলবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ ওমর চিশতী ও সরপুকুর ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবিরসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। . .
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুল রাজ্জাক বলেন, কমিটি করে তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আমরা কমিটির তালিকাভুক্ত সেগুলো বিতরণ করেছি। এর বেশি আমি জানি না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জহির ইমাম বলেন, কমিটি করে রিকশা দরিদ্র ব্যক্তিদের দেওয়া হয়। দুই রিকশার বিষয়য়ে যেটি বলা হচ্ছে সেটি আমার সময় নয়। তবে বিষয়টি খোঁজ-খবর নিয়ে আমি জানাতে পারবো।
প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী কালীগঞ্জ) আসনে নৌকা প্রতীকে ভোট দিচ্ছেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি। তার কট্টর প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সিরাজুল হক আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীকে ভোট দিচ্ছেন। মন্ত্রীর ছোট ভাই মাহাবুবুজ্জামান আহমেদ তার বড় ভাইয়ের নৌকায় দোলা দিতে মরিয়া হয়ে প্রকাশ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন।