এবার যে কোনো মূল্যে সরকার পতনের আন্দোলনের সফল পরিণতি চায় বিএনপি। নির্বাচনে কার্যত সরকারকে এক ঘরে করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে দলটি। এ কারণে ঘোষিত তফসিল নির্বাচনে সমমনা সব রাজনৈতিক দল ও জোটকে অংশগ্রহণে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি যুগপৎ এর বাইরের দলগুলোকেও আনার চেষ্টা চলছে। বিশেষ করে যারা এখনো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে- তাদের বাদ দেওয়ার চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সব শঙ্কা কাটিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের মাঠে শক্ত রাখার চ্যালেঞ্জ এখন দলের সামনে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এসব উপেক্ষা ও মোকাবিলা করে বিএনপি চূড়ান্ত আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলতে চায়। এ জন্য সমমনা দলসহ সব পর্যায়ের বিরোধী দলগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখছে দলের হাইকমান্ড।
এ ব্যাপারে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ ব্যাপক আশাবাদী। তিনি বলেন, যে আন্দোলনে জনগণ সম্পৃক্ত এবং তাদের সমর্থন রয়েছে তাই বিজয় অনিবার্য। রাজপথে প্রতিটি কর্মসূচি জনগণই সফল করে। জনগণের বিজয় আসন্ন। সরকার পরিবর্তনের মাধ্যমেই জনগণের এই বিজয় আসবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। মানুষ মুক্তি পাবে। রোববার ও সোমবার দেশব্যাপী হরতালসহ প্রতিটি কর্মসূচি সফল করতে দলের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
জানা গেছে, আপাতত আত্মগোপনে থাকলেও আগামীর কর্মসূচি সফল করতে দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের মাঠে দেখতে চায় বিএনপির হাইকমান্ড। বিশেষ করে ঢাকা শহরকে টার্গেট করে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে সব সাংগঠনিক জেলার শীর্ষ নেতাদের যে কোনো পরিস্থিতিতে মাঠে থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে। আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীদের রাজপথে নেমে আন্দোলনে নামতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সমমনা দল ও জোটের নেতা-কর্মীদের একই কর্মসূচি ও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, অবরোধের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকাকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পেরেছেন তারা। কিন্তু রাজধানীর ভেতরে এত কঠোর কর্মসূচি পালন করা সম্ভব হয়নি। তাই এবার হরতালের মতো কঠিন কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। তবে এ আন্দোলনের সফলতা নিয়ে তারা আশাবাদী। কারণ প্রতিটি কর্মসূচি ও পদক্ষেপ অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে নেওয়া হচ্ছে। একতরফা নির্বাচনের সিদ্ধান্তের কারণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর হাম”লা-মাম”লা, গ্রেপ্তার-নির্যা”তনের পথ বেছে নিয়েছে। এ কথা মাথায় রেখে বিএনপির নেতা-কর্মীরাও ভ”য়ভীতি উপেক্ষা করে প্রতিটি কর্মসূচি সফল করার চেষ্টা করছেন।
জানা গেছে, এরই মধ্যে রাখঢাক না করে রাজপথে নামার জন্য তৃণমূলসহ সর্বস্তরের কেন্দ্রীয় নেতাদের স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌপথে টানা পাঁচটি অবরোধের পর হরতাল ডাকা হয়েছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা দলগুলোও এই হরতাল কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। আগামীতে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবছেন শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। এসব নিয়ে বিএনপি চায় সব বিরোধী দল ঐক্যবদ্ধ হোক। তাদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করছেন দায়িত্বশীল নেতারা। তাদের আশা শেষ পর্যন্ত তাদের আন্দোলনের পক্ষে দেশি-বিদেশি চমক যোগ হতে পারে।
বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ গণতান্ত্রিক বিশ্বের দাবির মুখে গত বুধবার জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সব দলকে নিঃশর্ত সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে চিঠি দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়াই তফসিল ঘোষণা বিএনপিকে কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য করছে।
টানা এক সপ্তাহ ধরে দলের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন বিএনপির হাইকমান্ড তারেক রহমান। এসব সভায় প্রতিটি কর্মসূচি সফল করতে বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকসহ জেলা ও মহানগর ও সর্বস্তরের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মতে, বুধবার জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বড়-বড় বিরোধী দলগুলোর অধিকাংশই তা প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে। তাদের মনোভাবকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়ে একযোগে আন্দোলনের বাইরে তফসিল প্রত্যাখ্যানকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করছে বিএনপি। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে সিনিয়র নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মতে, বুধবার জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ছোট-বড় অধিকাংশ বিরোধী দলই তা প্রত্যাখ্যান করেছে। ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বলেও তারা ঘোষণা দিয়েছে। তাদের এই মনোভাবকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের বাইরে যেসব রাজনৈতিক দল তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করছে বিএনপি। ইতোমধ্যে সিনিয়র নেতাদের এ ব্যাপারে দায়িত্বও ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, আমাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা এবং জনগণের মালিকানা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া। এ জন্য আজ শান্তিপূর্ণ হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালনে জনগণ রাজপথে নেমেছে। এই ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে বিজয় হবেই। জনগণ এখন সেই বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে। আর সরকারের পতন অনিবার্য।
বিএনপি, বাম গণতান্ত্রিক জোট, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, বিজেপি, এনডিএম, এবি পার্টিসহ সমমনা দল ও জোট ছাড়াও অধিকাংশ বিরোধী দল তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তারা নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য তারা এই ঘোষনা দিয়েছে। এসব দল বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করছে। আগামীকাল রোববার ও সোমবার সারাদেশে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি পালন করবে তারা।