Thursday , January 9 2025
Breaking News
Home / Countrywide / সমন্বয়কদের তদবির বাণিজ্য: এক রাফির হিসাবেই ৩২ কোটি টাকা

সমন্বয়কদের তদবির বাণিজ্য: এক রাফির হিসাবেই ৩২ কোটি টাকা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র খান তালাত মাহমুদ রাফি একসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাহসী নেতা হিসেবে পরিচিত হন। মুক্তিযোদ্ধার নাতি হিসেবে কোটার সুবিধা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া রাফি আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখে প্রশংসিত হন। পরবর্তীতে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক নির্বাচিত হন। তবে তার বিরুদ্ধে ওঠা তদবির বাণিজ্য, অর্থ লেনদেন, এবং দুর্নীতির অভিযোগ তার এই পরিচিতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

রাফির বিকাশ অ্যাকাউন্টে ১ আগস্ট থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত ৬১ লাখ টাকার লেনদেন হয়, যা একটি সাধারণ ছাত্রের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক। এই অ্যাকাউন্টটি তার নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে খোলা। এছাড়াও, মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে খোলা আরেকটি বিকাশ অ্যাকাউন্টে একই সময়ের মধ্যে ৩১ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। দুই অ্যাকাউন্ট মিলিয়ে প্রায় এক কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রাম বন্দরে আটকে থাকা ১৬৪ কোটি টাকার পণ্য খালাসে তদবির করেন রাফি। ২ সেপ্টেম্বর বন্দরের চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকের আগে হোটেল সেন্টমার্টিনে গোপন মিটিং করেন তিনি। এই মিটিংয়ে বন্দরভিত্তিক ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। ব্যবসায়িক স্বার্থে রাফি বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখেন।

রাফির নাম এসেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের বদলি এবং বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহারে তদবিরের অভিযোগেও। বিশেষ করে বিদ্যুৎ উপবিভাগের প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশকে বরখাস্ত থাকা অবস্থায় রংপুরে বদলি করার ঘটনায় রাফির ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। এই প্রক্রিয়া স্বাভাবিক নিয়মবহির্ভূত এবং প্রশ্নবিদ্ধ।

রাফির বাইনেন্স অ্যাকাউন্টে ২৬ লাখ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩২ কোটি টাকা) জমা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। তার এনআইডি দিয়ে খোলা এই অ্যাকাউন্টে আন্তর্জাতিক লেনদেনের প্রমাণ রয়েছে। পাকিস্তানি এবং আমেরিকান নাগরিকদের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ এবং অর্থনৈতিক লেনদেন নিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়করা বিব্রত।

গত দুই মাসে রাফি কক্সবাজারে একাধিকবার গিয়ে গোপন বৈঠক করেছেন। সেখানে তিনি স্থানীয় এবং জাতীয় রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন। ৭ থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেলে তার উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে।

রাফি তার পরিচিতি এবং অবস্থান ব্যবহার করে তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করেছেন। তবে তার ব্যক্তিগত কার্যকলাপ এবং আর্থিক লেনদেন আন্দোলনের স্বচ্ছতা এবং নৈতিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

অনেক শিক্ষার্থী এবং সমন্বয়ক রাফির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হৃদয় তনুয়া হত্যা মামলার তদন্তেও রাফির নাম আসায় তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

একসময় যে রাফি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখপাত্র হিসেবে উদাহরণ হয়ে উঠেছিলেন, তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তার পুরো কার্যক্রমকে বিতর্কিত করে তুলেছে। তদবির বাণিজ্য এবং অনৈতিক লেনদেনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে, এটি কেবল তার ব্যক্তিগত ভাবমূর্তির ক্ষতিই করবে না, বরং একটি ন্যায্য আন্দোলনকেও প্রশ্নবিদ্ধ করবে। দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি শিক্ষণীয় উদাহরণ হয়ে থাকবে যে নেতৃত্ব কেবল জনপ্রিয়তা নয়, বরং নৈতিকতার উপর ভিত্তি করে স্থায়ী হয়।

About Nasimul Islam

Check Also

কৃষকদল নেতার জুয়ার আসরে অভিযান, আইনজীবী-কাউন্সিলরসহ গ্রেপ্তার ৯

ময়মনসিংহে এক জুয়ার আসরে অভিযান চালিয়ে আইনজীবী ও কাউন্সিলরসহ ৯ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *