বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। এমনকিও ঢাকাকে দেশের প্রান কেন্দ্রও বলা হয়ে থাকে। ব্যবসা-বানিজ্য থেকে শুরু করে নানা বিষয়ের উপর ভিত্তি করে পচ্ছন্দের শীর্ষ স্থানে রয়েছে ঢাকা। এরই সয়বাদে আমানতের অর্থের পরিমানও ঢাকায় বেশি। সমগ্র দেশের অর্ধেকের বেশি আমানতের অর্থ রয়েছে ঢাকায়। এই বিষয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ঢাকায় যে পরিমাণ টাকা আছে, সারা দেশ মিলিয়েও তা নেই। ক্ষুদ্র সঞ্চয় এবং মেয়াদি আমানত মিলিয়ে সারা দেশের মধ্যে ঢাকার ধারেকাছেও নেই দেশের কোনো অংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ ১৪ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু ঢাকা বিভাগেই রয়েছে প্রায় ৯ লাখ কোটি টাকার আমানত। শুধু আমানত নয়, ঋণেও এগিয়ে রয়েছে ঢাকা। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে ঋণের পরিমাণ ১১ লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু ঢাকাতেই গেছে ৭ লাখ ৮৬ কোটি টাকার ঋণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ এক প্রতিবেদনে এ চিত্র পাওয়া গেছে। এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এখন ঢাকার বাইরেও অনেক উৎপাদন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হচ্ছে। কিন্তু সবাই বিনিয়োগ ও সঞ্চয় দুটিই ঢাকায় করতে চায়। বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করলেও অনেকে ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনে স্থায়ী হচ্ছেন। ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করছেন। ‘ঢাকাকেন্দ্রীক উন্নয়ন অর্থনীতির জন্য মোটেও ভালো নয়। আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন উন্নত হচ্ছে। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন শহরকেন্দ্রিক উন্নয়ন করতে পারলে সঞ্চয়ের প্রতিফলন সেখানেও পাওয়া যাবে। এখন গ্রামে উপার্জন করে শহরে সঞ্চয় করে। বিকেন্দ্রীভূত উন্নয়ন দরকার।’ সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘আঞ্চলিক বৈষম্য প্রকট থেকে আরও প্রকটতর হচ্ছে। সঞ্চয়, আয় বৈষম্য, দারিদ্র্য সীমার নিচের জনগোষ্ঠী– সব কিছুতে উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লোক অনেক বঞ্চিত। ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন জেলায় কলকারখানা ও ব্যবসা করলেও ঋণ নিচ্ছেন রাজধানীর ব্যাংকের শাখাগুলো থেকেই। কারণ, ঢাকায় সহজে ঋণ পাওয়া যায় এবং সমস্যা হলে সমাধানও সহজে হয়। বেশির ভাগ চাকরিজীবী ঢাকায় অবস্থান করায় আমানতও এখানেই বেশি জমা পড়ছে। আর এলাকার চেয়ে ঢাকায় যে কোনো বিষয়ে মিলছে অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা।’
সবচেয়ে কম আমানত ময়মনসিংহ বিভাগে
বিভাগ হিসেবে ঢাকা বিভাগের ব্যাংকের শাখাগুলোতে মোট আমানত এসেছে ৮ লাখ ৯৪ হাজার কোটি টাকা, যা দেশের মোট আমানতের প্রায় ৬৩ শতাংশ। এই আমানত শুধু ঢাকা জেলায় ৭ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জে ২৮ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকার এবং গাজীপুরে ২৭ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকার আমানত রয়েছে। এর পরে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। সেখানে আমানতের পরিমাণ ৩ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এ টাকার মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ১ লাখ ৯৮ হাজার কোটি টাকার আমানত। এরপরে নোয়াখালীতে ১৬ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৫ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা, ফেনীতে ১৩ হাজার ২৩১ কোটি টাকা ও চাঁদপুরে ১২ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকার আমানত রয়েছে। আমানতের দিক দিয়ে এর পরের অবস্থানে খুলনা। ওই বিভাগে আমানতের পরিমাণ ৬১ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া রাজশাহীতে ৫৮ হাজার কোটি টাকা, সিলেটে ৫৭ হাজার কোটি টাকা, রংপুরে ২৮ হাজার ৮০১ কোটি টাকা, বরিশালে ২৮ হাজার১৪০ কোটি টাকা ও ময়মনসিংহে ২১ হাজার কোটি টাকার আমানত রয়েছে।
এদিকে দেশে আমানতকৃত অর্থের উপর আবগারি শুল্ক কর্তন প্রসঙ্গে দেশ জুড়ে ব্যপক আলোচনা-সমালোচনা বিরাজ করছে। এমনকি এই কর্তন প্রসঙ্গে গ্রাহকদের মোবাইল ফোনে যাওয় (এসএমএস) বার্তা বিভ্রান্তিতে পড়েছে গ্রাহকরা। তবে প্রতিবছরেই এক নির্দির্ষ্ট পরিমানের অর্থের উপর বাংলাদেশ সরকার ইএ অর্থ কর্তন করে থাকে। এক্ষেত্রে ব্যাংক কর্মকর্তারা গ্রাহকদের বিভ্রান্তি দূর করতে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে।