শামীম ওসমান হলেন নারায়ণগঞ্জের মানুষের অনেক ভালোবাসার একটি নাম। তিনি নারায়াণগঞ্জ-৪ আসন থেকে বার বার নির্বাচিত হওয়া একজন মাননীয় সংসদ সদস্য। এই সম্মানীয় পদে অধিষ্ঠিত হবার পর থেকে তিনি সততা ও নিষ্ঠার সহিত তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। অন্যদিকে সেলিনা হায়াৎ আইভী হলেন নারায়াণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র। সম্প্রতি জানা গেছে আবারো আওয়ামী লীগের এই দুই রাজনীতিবীদ উঠে এসেছেন আলোচনায়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য পদ নির্বাচন নিয়ে চলছে সমঝোতার খেলা। কোনো কোনো ওয়ার্ডে ভোটারদের মধ্যে মোটা অঙ্কের টাকা বিতরণ করা হচ্ছে বলেও গুঞ্জন রয়েছে। তবে ক্ষমতাসীন দলের দুই রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা শামীম ওসমান এমপি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী সবকিছু ছাপিয়ে এখন আলোচনায় উঠে এসেছেন। কারণ জেলা পরিষদের ১নং ওয়ার্ড (সিটি কর্পোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ড) এই দুই প্রতিনিধির নির্বাচনী এলাকার মধ্যে পড়ে। এছাড়া সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডের ৩৬ কাউন্সিলরও স্থানীয়ভাবে শামীম ওসমান ও মেয়র আইভী পন্থী নামে পরিচিত। এছাড়াও শামীম ওসমান ও তার বড় ভাই সেলিম ওসমান এমপির প্রভাব রয়েছে ২নং ওয়ার্ডের (ফতুল্লা, সদর ও বন্দরের ১২টি ইউনিয়ন) অন্তর্ভুক্ত এলাকায়।
এদিকে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে মোট ৬ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মতিউর রহমান।
তিনি জানান, রোববার ২নং ওয়ার্ডে সংরক্ষিত সদস্য পদে কোহিনুর বেগম, ২নং ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য পদে রফিকুল ইসলাম, আলী নূর, ২নং ওয়ার্ডে রুহুল আমিন এবং ৩নং ওয়ার্ডে ফারুক হোসেন ও এনামুল হক মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন।
ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জেলা পরিষদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে ১নং ওয়ার্ড নিয়ে।এই ওয়ার্ডের ভোটার নাসিকের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী। তাই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকার সিদ্ধিরগঞ্জ ও বন্দরের ২৭টি ওয়ার্ডের ৩৬ জন কাউন্সিলরকে দিনরাত ভোট চেয়ে ফিরছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ড. জাহাঙ্গীর আলম, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মুজিবুর রহমান, বন্দরের আওয়ামী লীগ নেতা ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মো. আলাউদ্দিন ও মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সায়েম রেজা।
এই ৪ প্রার্থীর মধ্যে নাসিক মেয়র আইভী জাহাঙ্গীর আলমকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন দিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কাউন্সিলর জানান, গত সপ্তাহে মেয়র আইভী বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরকে জাহাঙ্গীর আলমকে ভোট দিতে বলেছেন।
অপরদিকে সাংসদ শামীম ওসমানের পক্ষে রয়েছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান। একাধিক কাউন্সিলর জানান, শামীম ওসমানের কাছ থেকে মজিবুর রহমানের পক্ষে ভোট চেয়ে বার্তা পেয়েছেন তারা।
ভোটাররা বলছেন, জাহাঙ্গীর আলম ও মুজিবুর রহমানের জয়-পরাজয় এখন ওই দুই প্রভাবশালী প্রতিনিধির কাছে মর্যাদার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে তারা বলছেন, সাবেক সদস্য আলাউদ্দিন ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সায়েম রেজা কত ভোট পাবেন বা কোন গ্রুপের ভোট পাবেন তার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে।
অপরদিকে ফতুল্লার ৫টি ইউনিয়ন, সদরের ২টি ইউনিয়ন ও বন্দরের ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে ২য় ওয়ার্ড থেকে সাধারণ সদস্য পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ৭ জন। এর মধ্যে ধামগড় ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মাছুম আহমেদকে পরোক্ষ সমর্থন দিয়েছেন স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমান। সমঝোতার খেলায় ইতিমধ্যে ৩ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন।
ভোটাররা বলছেন, সেলিম ওসমান এমপির পাশাপাশি শামীম ওসমান এমপিরও প্রভাব রয়েছে এ ওয়ার্ডে। তাই জয়-পরাজয়ে দুই ভাই এমপির ভূমিকাই প্রধান বলে মনে করেন তারা।
তবে এ ওয়ার্ডে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ধামগড়ের সাবেক চেয়ারম্যান মাছুম আহমদ ও ফতুল্লার আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের মধ্যে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
এদিকে ৩নং ওয়ার্ড (সোনারগাঁও) থেকে সাধারণ সদস্য পদে ৬ জন মনোনয়ন জমা দিলেও সমঝোতার খেলায় প্রত্যাহার করেছেন ২ জন। এ ওয়ার্ডের ভোটাররা হলেন সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান, সদস্য ও মহিলা সদস্যরা। তবে এ ওয়ার্ডের ভোটারদের মধ্যে প্রভাবশালী ওসমান পরিবারেরও রয়েছে ব্যাপক প্রভাব। কারণ সোনারগাঁও আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা তাদের ঘনিষ্ঠ। এ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতও শামীম ওসমানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজনীতি করছেন।
এর আগে সাধারণ সদস্য পদে ২টি ওয়ার্ডে একক প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করায় তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়। তারা হলেন- ৪নং ওয়ার্ডে (আড়াই হাজার) সাধারণ সদস্য মোঃ আলাউদ্দিন এবং আনছার আলী ৫নং ওয়ার্ড (রূপগঞ্জ) থেকে সাধারণ সদস্য পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, সেলিনা হায়াৎ আইভী মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে তিনি সততা ও নিষ্ঠার সহিত তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াৎ আইভী আ ওয়ামী নারায়ণগঞ্জবাসীদের জন্য অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন এবং বর্তমানে সেই উন্নয়নমূলক কাজ রয়েছে অব্যাহত।