এই পর্যন্ত সীতাকুণ্ড ইস্যুতে ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে শতাধিকে চেয়ে বেশি। অনেককেই পাওয়া যাচ্ছে না খুঁজে। প্রয় ৩০ ঘনটা পার হয়ে গেলেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি সীতাকুন্ড এলাকার পরিবেশ। শ্রমিক সাধারণ মানুষ সহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উদ্ধার কর্মরাও। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী এক ভ্যানচালক সাইফুল ইসলাম ও মা ফুলমত এখনো ছেলের অপেক্ষায়।
জীবনের নানা কাঠখড় পুড়িয়ে একটা নতুন দিন, নতুন স্বপ্ন মাত্র শুরু হয়েছিল। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগেই ভ্যানচালক সাইফুল ইসলাম ও মা ফুলমতি বেগমের সব ইচ্ছা নিভে গেছে। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ভয়াবহ অ’গ্নিকাণ্ডে নিখোঁজ ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ফরিদুজ্জামান ফরিদের জন্য বাড়িতে অপেক্ষা করছেন বাবা-মাসহ স্বজনরা। বাবা-মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছে তাদের একমাত্র ছেলের ফিরে আসার অপেক্ষায়।
ফরিদুজ্জামান ফরিদ রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ইমাদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামের ভ্যানচালক সাইফুল ইসলাম ও ফুলমতি বেগমের বড় ছেলে ও মেয়ে। মেয়ে সাবিহা আক্তার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী।
নিখোঁজ ফরিদের চাচা তোতা মিয়া জানান, ফরিদ শৈশব থেকেই অত্যন্ত মেধাবী এবং শান্ত ও বিনয়ী ছিলেন।
তার বাবা দিনমজুর করে ভ্যান চালিয়ে ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছেন। বছর দুয়েক আগে সীতাকুণ্ডে প্রথম চাকরিতে যোগ দেন ফরিদ। ছেলে চাকরি করলেও বাবা ভ্যান চালানো বন্ধ করেননি।
আমি চেয়েছিলাম ছেলেটি একটু স্বাবলম্বী হলে তার পেশা পরিবর্তন করে নতুনভাবে সবকিছু দেখাশোনা করুক। কিন্তু তার আশা ও স্বপ্ন এখন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। ২৪ ঘণ্টা পার হলেও ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা।
ফরিদের বাবা-মা কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। ছেলেটির কথা বলতে গিয়ে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছে দুজনেই। চিকিৎসকের পরামর্শে স্যালাইন প্রয়োগ করা হয়েছে।
রংপুর ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক ফরিদ আহমেদ চৌধুরী জানান, ফরিদুজ্জামান ফরিদ কয়েক বছর আগে সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে ফায়ার ফাইটার (সিপাই) হিসেবে যোগ দেন। শনিবার (৪ জুন) রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। বিষয়টি ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হচ্ছে।
এদিকে, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একটি কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে এ পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৯ জন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী। তবে আরও অন্তত চারজন দমকলকর্মী নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের একজন রংপুরের ফরিদুজ্জামান ফরিদ।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড জেলায় একটি কনটেইনার ডিপোতে অ’গ্নিকাণ্ডে এ পর্যন্ত নয়জন দমকলকর্মী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় এখনও তিন দমকলকর্মী নিখোঁজ রয়েছেন। এছাড়া আহত শতাধিক শ্রমিককে সিএমএইচসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোববার (৫ জুন) সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (মিডিয়া সেল) মো. শাহজাহান সিকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।