বাংলাদেশের রাজনীতিতে শামীম ওসমান পরিবার একটি স্মরণীয় নাম।বিশেষ করে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে তাদের প্রভাব ব্যাপক। আর এই কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই বার বার স্বীকার করেছেন। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর উপর তৃতীয় সেতু (নামকরুন করা হয়েছে ‘নসীম ওসমান সেতু’) উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওসমান পরিবারের প্রয়াত সদস্যদের অনুকরণীয় অবদানের কথা স্মরণ করেন,এ সময়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান আবেগে আপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেন।
সোমবার (১০ অক্টোবর) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জে নাসিম ওসমান সেতু উদ্বোধনকালে তাদের স্মরণ করেন। এ সময় আবেগে আপ্লুত হন শামীম ওসমান। তার চোখ থেকে অশ্রু ঝরতে থাকে অনবরত। তার পাশে থাকা নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুকে টিস্যু দেন চোখ মোছার জন্য। শামীম ওসমানকে কয়েকবার টিস্যু দিয়ে চোখের পানি মুছতে দেখা যায়।
তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর উদ্বোধন ঘোষণার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাজধানীর অদূরে নারায়ণগঞ্জ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জেলা। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারায়ণগঞ্জ বরাবরই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। নারায়ণগঞ্জ আমাদের সংগঠনে ভূমিকা রেখেছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ সার্বিক দিক বিবেচনা করে এ সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবার সম্পর্কে বলেন, নাসিম ওসমান শেখ কামালের বন্ধু ছিলেন। তার বাবা জোহা সাহেব আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন। বলা যায় তাদের দাদা ওসমান আলী ছিলেন আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। মুক্তিযুদ্ধ ও সংগঠনে ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৯১ সালে মা সহ আমাদের সবাইকে ধানমন্ডির ১৮ নম্বর রোডের বাসায় বন্দি করে রাখা হয়। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণের পরও আমরা মুক্তি পাইনি। কিন্তু জোহা সাহেব ভেবেছিলেন আমরা হয়তো মুক্তি পেয়েছি। এমন সময় জোহা সাহেব আমাদের বাড়ির রাস্তা দিয়ে ঢুকলেন। এরপর পাকিস্তানি বাহিনী আমাদের বাড়িতে কয়েকটি গুলি চালায়। তার শরীরে গুলি লেগেছে। কিন্তু তিনি বেঁচে যান। তাই আমরা তাকে স্মরণ করি।
তিনি বলেন, ৭৫ সালের পর আমরা শরণার্থী হিসেবে দিল্লিতে ছিলাম। এরপর জোহাকে গ্রেফতার করে কারারুদ্ধ করা হয়। মুক্তির পর তিনি প্রথমে আমাদের সাথে দেখা করতে দিল্লিতে ছুটে যান। আমরা সেসব কথা মনে রাখি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ছিল একটি অন্ধকার রাত। এর আগের দিন ১৪ আগস্ট রাতে নাসিম ওসমানের বিয়ে হয়। কামাল (শেখ কামাল)ও নাসিম ওসমানের বিয়েতে গিয়েছিলেন। কামাল ফিরে আসে। যখনই নাসিম ওসমান ১৫ আগস্টের ঘটনার কথা শুনেন, নবদম্পতি তার স্ত্রীকে রেখে ভারতে গিয়ে হ’ত্যা’র’ প্রতিবাদ করেন। সেখানে তিনি হ’ত্যা’র’ প্রতিবাদ করেন। কথাগুলো সব সময় মনে পড়ে। যদিও তিনি আমাদের পার্টিতে যোগ দেননি, তিনি অন্য পার্টিতে গিয়েছিলেন। তবে সবসময় আমার সাথে যোগাযোগ করতেন, বড় বোনের মতো সম্মান করতেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তিনি আমার সঙ্গে বহুবার দেখা করেছেন, সেতুর বিষয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু আমরা যখন এটি নিয়ে কাজ শুরু করি, তিনি এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, আমরা তার স্মৃতিতে সেতুর নাম উৎসর্গ করেছি।
এরপর নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্মিত বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম নাসিম ওসমান শীতলক্ষ্যা সেতু এবং নড়াইলের মধুমতি নদীর ওপর নির্মিত মধুমতি সেতু উদ্বোধনের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতু উদ্বোধন শেষে দেশ ও জাতির শান্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া কামনা করা হয়।
এ দিকে এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানায় শামীম ওসমান। তিনি বলেন প্রধানমন্ত্রী শুধু নারায়ণগঞ্জে নাসিম ওসমান সেতু দেননি, আমার দাদার নামে খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামও করেছেন, আব্বার নামে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড দিয়েছেন। আমরা এটা চাইনি, সে দিয়েছে।এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর সাথে তার মায়ের সক্ষতা নিয়ে শামীম ওসমান বলেন,আমার মা ভাষা সৈনিক ছিলেন, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আমার মাকে খুব ভালোবাসতেন। আদমজী সড়কের নামকরণ করা হয়েছে মায়ের নামে। নারায়ণগঞ্জে যে পরিমাণ কাজ হয়েছে এবং হচ্ছে, আমি মনে করি তাকে ধন্যবাদ দিয়ে শেষ করা যাবে না।