তিনি অন্য কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দিচ্ছেন না জানিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম) বলেন, আমি বিএনপির কারণেই রাজনীতি ছাড়তে চাই।
দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে নিজের অবস্থান তুলে ধরতে বনানীতে নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের বক্তব্যের বরাত দিয়ে বলেন, আমি নিজেকে বিএনপির গুরুত্বহীন ব্যক্তি দাবি করি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজনীতিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। রাজনীতি থেকে দূরে থাকা। তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্য সঠিক নয়। বর্তমানে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত নন। শারীরিক কারণে শিগগিরই রাজনীতি থেকে অবসর নেব। ৩১ বছর রাজনীতি করার পর এই দল ছাড়তে চাই।
তিনি বলেন, ২৩ বছর আমি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান। ড. মোশাররফ ও রফিকুল ইসলাম মিয়া ছাড়া সবাই আমার জুনিয়র । কিন্তু আমি ছাড়া সবাই উপরে উঠে গেছে। আমি পদবীর জন্য রাজনীতি করি না। জিয়াউর রহমানের সঙ্গে রাজনীতি করেছি। তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দলে যোগদান করেছি। বেগম জিয়ার অনুপুস্থিতিতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। জুনিয়র নেতারা সিনিয়র পদপদবী পেলেও কোন অভিযোগ নেই। শারীরিক অসুস্থ্যতার কারণে নিস্ক্রিয় আছি। রাজনীতিতে এখন কোন আগ্রহ নেই।
মেজর হাফিজ বলেন, গত ১৪, ২০ ডিসেম্বর ১১টি অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। সরকারবিরোধী কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়ার অভিযোগ। তিন বছর পেরিয়ে গেলেও নোটিশের জবাবের কোনো জবাব পাইনি। রাজনীতির ৩১ বছর বেদনাদায়ক।
দলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমরা অনেক ভুল করেছি। দল বলার সুযোগ নেই। আট বছর কোনো কাউন্সিল নেই। জাতির স্বার্থে কিছু বলতে হবে। সব দলের নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে কথা বলছেন ড. বিএনপিতে সাইফুর রহমান ছাড়া সত্য কথা বলার একজনও নেই। সবাই বলল জ্বী স্যার, ঠিক স্যার, বালা লোক।
তিনি বলেন, শারীরিক কারণে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। জনগণের সঙ্গে কথা বলে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করব।
মেজর হাফিজ বলেন, বিএনপিকে নির্বাচনে যেতে হবে। তত্ত্বাবধায়কের কথা না ভেবে বিকল্প চিন্তা করা উচিত। বিএনপিকে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় নির্বাচনে যেতে হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষমতা বিএনপির নেই। বিএনপির আন্তর্জাতিক যোগাযোগ দুর্বল।
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সুযোগ পেলেই মানুষ সঠিক বিচার করে। ক্ষমতাসীনরা মনে করছেন উন্নয়ন কাজের জন্য ভোট পাবেন। আসলে মানুষ নিত্যপণ্যের দাম বিচার করে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা মানেই শুধু উন্নয়নমূলক কাজে ভোট দেওয়া নয়।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, সামাজিক সম্প্রীতির দিকে নজর রেখে সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করুন। কারণ, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না।
প্রতিবেশী দেশ ভারত অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত উন্নতি করেছে। তাদের গণতন্ত্র শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। আমরা তাদের অনুসরণ করতে চাই।
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিএনপিসহ অন্যান্য দলের সঙ্গে বসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের অবস্থার অবনতি হলে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল দায়ী থাকবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারিক রহমানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে হাফিজ বলেন, দলকে সংস্কার করতে হবে। অবসরপ্রাপ্ত নেতাদের মূল্যায়ন করতে হবে।
দলে বীরত্ব কেন, পদের বাণিজ্য কেন হয় এমন প্রশ্নও তোলেন এই নেতা। বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারকারী আমলাদের পাচারকৃত টাকা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।