ভুটানি তরুণী কারমা ডেমা (২৩)। ক্যান্সারের কারণে তার নাক পঁচে গিয়েছিল। ভারতের টাটা মেমোরিয়ালে দুবার অস্ত্রোপচার ব্যর্থ হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসার পর নাক ফিরে পেয়ে বাংলাদেশে আসেন তিনি। সম্প্রতি তার একটি সফল নাক পুনর্গঠন অস্ত্রোপচার হয়েছে। সব কৃতিত্ব শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারির। সে এখন ভালো করছে। শীঘ্রই দেশে ফিরবেন।
জানা যায়, কয়েক বছর আগে তার নাকের গহ্বরে ক্যান্সার ধরা পড়ে। ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসার পর ক্যান্সারমুক্ত হলেও রেডিওথেরাপি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে তিনি নাক হারান। পরে সেখানে দুটি অপারেশন করেও নাক পুনর্গঠন করতে ব্যর্থ হন চিকিৎসকরা। পরে কর্মা চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত নেন। এতে করে তিনিই প্রথম বিদেশী রোগী যিনি মেডিকেল ভিসায় চিকিৎসার জন্য দেশে আসেন।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা জানান, কর্মার নাকের গঠন এখন অনেকটাই উন্নত হয়েছে। তিন থেকে ছয় মাস পর তার আরেকটি ছোট অস্ত্রোপচার হবে।
কামরা ডেমার বড় ভাই কর্মা ফুঁথো গণমাধ্যমকে বলেন, আমার বোন এখন অনেক ভালো। দ্বিতীয়বার ফিনিশিং অপারেশন বাকি। ভুটান ও বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় এই চিকিৎসা করা হচ্ছে। আমাদের কোন খরচ দিতে হবে না। বাংলাদেশের চিকিৎসা ও সেবায় আমরা খুবই খুশি। এর আগে, 2020 থেকে দেড় বছর ভারতে তার চিকিৎসা হয়েছিল।
গত ৯ জানুয়ারি শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে সার্জনের তিনটি দল যৌথভাবে প্রায় ৯ ঘণ্টা নাক পুনর্গঠন অস্ত্রোপচার করেন। পুরো অস্ত্রোপচারের তত্ত্বাবধানে ছিলেন বার্ন ইনস্টিটিউটের তৎকালীন প্রধান সমন্বয়ক ও বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
কর্ম ডেমা বর্তমানে বার্ন ইনস্টিটিউটের 13 তলায় অবস্থিত একটি কেবিনে চিকিৎসাধীন। গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে এসে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন তিনি।
তিনটি অপারেশন দলের প্রধান, শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারির সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ হাসিব রহমান বলেন, “আমরা এখন কর্মার নাকের উপর একটি কাঠামো তৈরি করেছি।” আমরা তার নাকে নরম টিস্যু রাখি। তারপর আরেকটি অপারেশন প্রয়োজন হবে। তবে এটি আগের মতো এত বড় অস্ত্রোপচার নয়। অস্ত্রোপচারে কার্মা ডেমার পাঁজরের তরুণাস্থি এবং হাতের ত্বক/টিস্যু সহ মাইক্রোসার্জারি ফ্রি ফ্ল্যাট দ্বারা করা হয়। এটি একটি জটিল অপারেশন।
তিনি আরও বলেন, ভারতে কর্মার দুটি অপারেশন হয়েছে। কিন্তু কোনোভাবে তারা সফল হয়নি।
বাংলাদেশে কর্মফল কেমন
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ ও ভুটান সরকার যৌথভাবে গত বছরের সেপ্টেম্বরে থিম্পুতে বাংলাদেশি চিকিৎসকদের মাধ্যমে একটি প্লাস্টিক সার্জারি ক্যাম্পের আয়োজন করে। সেখানে ড. 14 সদস্যের এই মেডিকেল টিমের নেতা ছিলেন সামন্ত লাল সেন। তিনি বার্ন ইনস্টিটিউটের জাতীয় সমন্বয়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন। সাতদিনের এই ক্যাম্পে ১৬টি জটিল অস্ত্রোপচার করা হয়। কর্মা ওই ক্যাম্পে এসেছিলেন নাকের চিকিৎসার জন্য।
ডাঃ হাসিব রহমান বলেন, প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ ভুটানে নেই। তাই কর্মের কোনো অস্ত্রোপচার হয়নি। পরে আমরা তাকে চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে আসতে বলি। এরপর দুই দেশের সরকারের সহযোগিতায় কারমা ডেমা ও তার এক ভাই চিকিৎসার জন্য ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশে আসেন।