বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া রোগের কারণে গেল দুই বছর বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয় এবং সেইসাথে পরিবর্তন হয়েছে কাজকর্মের নিয়ম। সেই সময় ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ এই বিষয়টি খুব বেশি দেখা যায়। বর্তমান সময়ে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিকের দিকে। আর এ কারণেই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে অফিস-আদালত নিয়মমাফিক কাজকর্মে ফিরে গেলেও কর্মসময় কমিয়ে দেয়ার জোর তাগিদ দেয়া হচ্ছে।
এবার বেশ কয়েকটি কোম্পানি ভিন্নভাবে সেই পথ অনুসরণ করেছে। কর্মঘণ্টা না কমিয়ে, বরং অফিসে হাজিরার দিনই কমিয়ে দিল যুক্তরাজ্যের ৭০ কোম্পানি। তবে এটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়।
জানা গেছে, যুক্তরাজ্যের হাজার হাজার শ্রমিক ৬ জুন থেকে এই চারদিনের কর্ম সপ্তাহ শুরু করেছে। তাদের বেতনে কোনো কাটছাঁট হবে না। এটি এখন পর্যন্ত চার দিনের কাজের সপ্তাহের সবচেয়ে বড় ট্রায়াল।
নতুন নিয়মে, শ্রমিকরা ছয় মাস সপ্তাহে চার দিন কাজে যাবেন। অন্য কথায়, তারা স্বাভাবিকের চেয়ে এই ছয় মাসে অফিসে ৬০ শতাংশ কম সময় ব্যয় করবে।
এই সময়ে শ্রমিকদের তাদের বেতনের ১০০% প্রদান করা হবে; বিনিময়ে তাদের যথারীতি উৎপাদনশীলতা বজায় রাখতে হবে।
নতুন ট্রায়ালের অধীনে, ৬০টি কোম্পানিতে ৩৩০০ জন কর্মী কাজ করছেন। আর্থিক পরিসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে একটি ফিশ-অ্যান্ড-চিপ রেস্তোরাঁও রয়েছে এই তালিকায়।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং বোস্টন কলেজের গবেষকদের সাথে অংশীদারিত্বে অলাভজনক ফোর ডে উইক গ্লোবাল (থিঙ্ক ট্যাঙ্ক) এবং ফোর ডে উইক ইউকে ক্যাম্পেইন দ্বারা প্রোগ্রামটি পরিচালিত হচ্ছে।
লন্ডনে প্রেসার ড্রপ ব্রুইংয়ের ব্র্যান্ড ম্যানেজার সিয়েনা ও’রউরকে সিএনএন বিজনেসকে বলেছেন যে তার কোম্পানির সবচেয়ে বড় লক্ষ্য ছিল তার কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং শারীরিক সুস্থতা উন্নত করা।
তিনি বলেন, “শ্রমিকদের জীবনকে উন্নত করতে এবং বিশ্বের একটি প্রগতিশীল পরিবর্তনের অংশ হওয়ার জন্য আমরা এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলাম।”
যেহেতু কোম্পানিটি প্রধানত পণ্য উত্পাদন এবং শিপিং নিয়ে কাজ করে, তাই কখন এবং কোথায় কর্মচারীরা কাজ করবে সে সম্পর্কে কম নমনীয়তা রয়েছে। যাইহোক, সিয়েনা ও’রউর্ক বলেছেন যে তারা একটি দল হিসাবে ছুটি এবং অসুস্থ ছুটি পরিচালনা করবেন।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে বড় দুটি ট্রায়াল পরিচালনা করেছে আইসল্যান্ড। ২০১৫ এবং ২০১৯ সালে চলা ওই ট্রায়াল দুটিতে ২ হাজার ৫০০ জন সরকারি খাতের কর্মী অংশ নেন।
এই ট্রায়ালগুলিতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে উত্পাদনশীলতার কোনও উল্লেখযোগ্য হ্রাস ছিল না। একই সঙ্গে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকটি দেশে কর্মদিবস কমানোর কথা বলা হচ্ছে। বিশেষ করে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া রোগের সময়ে, লক্ষ লক্ষ কর্মচারী বাড়ি থেকে কাজ করার কারণে কর্মদিবস কমানোর বিষয়টি আরও তীব্র হয়ে উঠেছে।
ফোর ডে উইক ক্যাম্পেইনের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই বছরের শেষের দিকে যুক্তরাজ্য এবং স্পেন এবং স্কটল্যান্ডে একই ধরনের ট্রায়াল শুরু হতে চলেছে।
ফোর ডে উইক গ্লোবালের সিইও জো ও’কনর বলেন, “আরো বেশি কোম্পানি স্বীকার করছে যে, তাদের নতুন লক্ষ্য বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া রোগের প্রাদূর্ভাব শুরু হওয়ার পর তাদের কর্মীদের জীবনমানের উন্নতি করা। কর্মদিবস কমানো এবং আউটপুট-কেন্দ্রিক কাজ তাদের আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তোলে।”
এই ট্রায়ালে, গবেষকরা উৎপাদনশীলতা স্তর, লি/’ঙ্গ সমতা, সেইসাথে কর্মচারীদের সুস্থতার উপর এই নতুন প্যাটার্নের প্রভাবগুলি দেখবেন। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, সিএনএন, ওয়াশিংটন পোস্ট, সায়েন্স অ্যালার্ট
সপ্তাহে চারদিন কর্মঘন্টার বিষয়টি শুরু হলেও ঠিক ইতিবাচক কিছু পাওয়া যাবে বলে মনে করছে না অনেক বিশেষজ্ঞরা। কারণ উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়ার তীব্র সম্ভাবনা রয়েছে এই ক্ষেত্রে। তবে যেহেতু বিষয়টি ট্রায়ালে রয়েছে, তাই সেখান থেকে ফলাফল এর মাধ্যমে এটি রাখা যাবে কিনা সে বিষয়টিও পর্যবেক্ষণে রয়েছে।