বিশাল হৃদয়ের অধিকারী মানুষকে স্বামী হিসেবে পাওয়া একজন নারীর জন্য ভাগ্যের ব্যাপার। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক হলো পৃথীবির সব থেকে মধুর সম্পর্ক। এই স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসাটা একদিনের নয়। দু’জন দু’জনের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসের ফলেই ধীরে ধীরে গড়ে উঠে ভালোবাসার বন্ধন। একজন আর এক জনের বিপদে পাশে থাকাটা হলো আদর্শ স্বামী স্ত্রীর পরিচয়। স্বামী আর স্ত্রীর ভালোবাসা যে কতটা মধুর হতে পারে সেইটা প্রমাণ করে দিল এই যুগল। অন্ধ স্বামী অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে যা করলেন তা সত্যি বিরল।
মেহেরপুর জেলা শহরের স্টেডিয়াম পাড়ার দৃষ্টি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী মরিয়ম খাতুন ( Maryam Khatun ) (২০) অন্তঃসত্ত্বা। তার স্বামী সুমন ( Sumon ) হোসেনও (২৪) দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। সোমবার (২৮ মার্চ) সকালে সুমন ( Sumon ) স্ত্রী মরিয়মকে কোলে নিয়ে পৌর কেন্দ্রে টিকা দিতে আনেন। স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে পৌর মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন ( Mahfuzur Rahman returns ) তাৎক্ষণিক একটি হুইল চেয়ার কিনে দেন।
মরিয়ম জানান, তাদের বাবা-মাও অক্ষম। পারিবারিকভাবেই তাদের এক বছর আগে বিয়ে হয়। মানুষের দেওয়া সহায়তায় তারা জীবিকা নির্বাহ করেন। স্বামী সুমন ( Sumon ) তাকে খুব ভালোবাসেন।
সুমন ( Sumon ) জানান, তিনি প্রতিবন্ধী হওয়ায় কেউ তাকে বিয়ে করতে সম্মতি হননি। মরিয়মের পরিবার তাকে জামাতা হিসেবে গ্রহণে রাজি হলে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। মরিয়ম সন্তানসম্ভবা। কোনো বাহনে করে প্রসবপূর্ব টিকা নিতে আসার আর্থিক সঙ্গতি তাদের নেই। তাই কোলে করে নিয়ে এসেছেন।
তিনি জানান, কোনো অনুষ্ঠানে গেলেও স্ত্রীকে কোলে করে নিয়ে গিয়ে খেয়ে আসেন। মেয়র তাদের হুইল চেয়ার দেওয়ায় এখন আর স্ত্রীকে কোলে নিয়ে কোথাও যেতে হবে না। মেয়রের ঋণ আজীবন শোধ করতে পারবো না।
মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন ( Mahfuzur Rahman returns ) বলেন, নিজে প্রতিবন্ধী হয়েও প্রতিবন্ধী স্ত্রীকে কোলে করে পৌর কার্যালয়ে নিয়ে আসেন সুমন ( Sumon )। তাদের ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ। প্রতিটি পরিবারে এমন ভালোবাসা থাকলে পরিবারে অশান্তি হারিয়ে যাবে। একটি অসহায় পরিবারের পাশে থাকতে পারলাম বলে ভালো লাগছে।
প্রসংগত, একজন আদর্শ স্বামীর পরিচয় হলো তার ব্যবহার ও কাজে। সে তার স্ত্রীর প্রত্যেকটা বিষয়ের উপর খেয়াল রাখে ও গুরুত্ব দেয়। স্বামী নিজে প্রতিবন্ধী হয়েও প্রতিবন্ধী অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর এই ঘটনাটি ইতিমধ্যে আলোচনার সৃষ্টি করেছে। এই স্বামী বুঝতে পেরেছিলেন স্ত্রীকে এই সময় হাসপাতালে নিয়ে না গেলে তার বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তাই সে দেরি না করে স্ত্রীকে সময়মত হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।