বরিশাল জেলার বানারীপাড়া উপজেলা এলাকায় দোলা আক্তার নামের একজন এসএসসি পরীক্ষার্থী সন্তান প্রসবের ৪৫ মিনিট পরে কেন্দ্রে হাজির হয়ে পরীক্ষা দিতে বসেন। পরীক্ষা বেশ ভালো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
গতকাল (রবিবার) অর্থাৎ ২১ নভেম্বর সকাল সোয়া ৯টার দিকে বানারীপাড়া উপজেলার চাখারে ১০ শয্যা হাসপাতালে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন এই এসএসসি পরীক্ষার্থী। পরে তিনি তার সদ্য জন্ম নেওয়া সন্তানকে তার স্বজনদের কাছে রেখে যান হাসপাতালে এবং সেখান থেকে চাখার ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হন।
হাসপাতালের পরীক্ষা কেন্দ্রের চিকিৎসক, নার্স ও শিক্ষকরা দোলা আক্তারের লেখাপড়ার প্রতি গভীর আগ্রহের প্রশংসা করেছেন। দোলা আক্তার পার্শ্ববর্তী বানারীপাড়া উপজেলার দাসের হাট গ্রামের দুলাল সরদারের মেয়ে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, তিন বছর আগে বানারীপাড়ার খলিশাকোঠা গ্রামের মো. ইউসুফ আলী খানের ছেলে আকাশ খান দুলালের সঙ্গে নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় দোলার। আকাশ খান বর্তমানে ঢাকায় একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। দোলা শ্বশুরবাড়িতে থেকে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। সে চাখার ওয়াজেদ মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
দোলার শ্বশুর ইউসুফ আলী খান বলেন, দোলা সন্তানসম্ভবা ছিল। অন্যদিকে তার এসএসসি পরীক্ষাও চলছিল। রোববার তার শেষ পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার পথে তার প্রসব বেদনা শুরু হয়। এরপর দোলাকে চাখার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সকাল সোয়া ৯টার দিকে ছেলেসন্তান জন্ম দেয় দোলা।
হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স নাসিমা বেগম বলেন, হাসপাতালে নিয়ে আসার কিছুক্ষণ পর দোলা ছেলেসন্তান জন্ম হয়। সে স্বাভাবিকভাবেই সন্তান প্রসব করেছে। তার সন্তান সুস্থ আছে। তবে ডেলিভারির কারণে দোলা শারীরিকভাবে অনেক দুর্বল ছিল। এরপরও সে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য আকুতি করছিল। দোলা অসুস্থ থাকায় তার স্বজনরা পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে রাজি হচ্ছিলেন না। এক পর্যায়ে সে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য কান্না শুরু করে দেয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পরীক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষকদের জানায়। এরপর দোলা পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়।
চাখার ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব মো. জিয়াউল হাসান বলেন, অসুস্থ শরীর নিয়ে দোলা সঠিক সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হয় এবং এবং পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরীক্ষা শেষে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, পরীক্ষা কেমন হয়েছে। সে বলেছে, তার পরীক্ষা ভালো হয়েছে।
মো. আলী আজিম যিনি দোলার স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি বলেন, দোলা মেধাবী ছাত্রী। তার পড়াশোনার প্রতি যে আগ্রহ রয়েছে সেটা দেখে আমি অভিভূত হয়েছি। সন্তান জন্মদানের পর তার হাসপাতালে থাকার কথা ছিল। কিন্তু অসুস্থ অবস্থায় থাকলেও সে ঠিক সময়েই পরীক্ষা কেন্দ্রে হাজির হয়েছে। দোলার জন্য গর্ব বোধ হচ্ছে।
দুলাল সরদার যিনি দোলার বাবা তিনি বলেন, দোলার ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি অনেক আগ্রহ ছিল। প্রাইভেট বা কোচিং ছাড়াই ক্লাসে মেধা তালিকায় ভালো অবস্থানে থাকতো সে। তবে সংসারে আর্থিক সমস্যা ও ভালো পাত্র পাওয়াযর কারনে নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন তার বিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন শ্বশুর বাড়িতে সে কিন্তু পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে।